Logo
Logo
×

রাজনীতি

ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে লেগুনা আটকে চাঁদা দাবির অভিযোগ

Icon

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৩, ০৫:১৮ এএম

ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে লেগুনা আটকে চাঁদা দাবির অভিযোগ

চাঁদার টাকা না দেওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ২৩টি লেগুনা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। 

তবে ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন,  বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা লেগুনাগুলো আটকিয়েছে।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান, শাহ পরান ও হাসান মাহমুদ ফরিদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও লেলিন মাহবুব এবং উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আল-রাজি সরকার প্রমুখ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিকালে ছাত্রলীগের নেতাদের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল গেইটের সামনে অবস্থান নিয়ে লেগুনাগুলো আটকানো শুরু করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 

পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন লেগুনাগুলোর চাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে চলে যান। এরপর রাতে লেগুনা মালিক সমিতির নেতারা আসলে কয়েকটি লেগুনা ছেড়ে দেওয়া হয়। আর বাকি ১১টি লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নিয়ে আটকে রাখা হয়। সেগুলো মঙ্গলবার দিবাগত রাত ও বুধবার সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই ছিলো। 

এরপর বুধবার বিকালে আরও ১২টি লেগুনা আটকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নিয়ে আসা হয়। সে হিসেবে মোট ২৩টি লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে রাখা হয়েছে। তবে মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা না করে লেগুনাগুলো ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা।

অন্যদিকে লেগুনার চালক ও মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাভার থেকে আশুলিয়া রুটে প্রায় দুই শতাধিক লেগুনা নিয়মিত চলাচল করে। সেগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। সে হিসেবে মাসিক দেড় লাখ টাকা চাঁদা দিতো তারা। 

তবে বিগত দুই মাস ধরে চাঁদা দেওয়া বন্ধ ছিলো। তার প্রেক্ষিতে আবারও লেগুনা থেকে চাঁদা আদায়ের চুক্তি করতে চায় ছাত্রলীগ নেতারা। এবার লেগুনা প্রতি ১০০ টাকা করে প্রতি মাসে ৬ লাখ টাকা দাবি করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা। তবে তা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে এখনো লেগুনাগুলো ছাড়ছে না ছাত্রলীগ নেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেগুনা মালিক সমিতির একাংশের এক নেতা বলেন, প্রতি লেগুনা থেকে দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাঁদা দেওয়া হতো। তবে এখন তারা লেগুনা প্রতি ১০০ টাকা দাবি করছে, যা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না।

অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, সাভার থেকে আশুলিয়াগামী একটি লেগুনা সিএন্ডবি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র তানভীর ও তারেকের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। তাই তিনটি লেগুনা আটকে রাখা হয়। তবে চালকেরা নকল চাবি দিয়ে সেগুলো নিয়ে চলে যান। এরপর ক্ষোভে শিক্ষার্থীরা লেগুনাগুলো আটকিয়েছে। মালিক পক্ষের সাথে কথা বলার জন্য ডেকেছি। তবে তারা আসছেন না, তাহলে কাদের ভরসায় লেগুনাগুলো ছেড়ে দিবো?

এ বিষয়ে তানভীর বলেন, ‘আমাদের মোটরসাইকেলের পেছনে একটি লেগুনা ধাক্কা দেয়। পরে তিনটি লেগুনা আটকে রাখি, তবে তারা কিছু না বলেই নকল চাবি দিয়ে লেগুনাগুলো নিয়ে চলে যায়।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, হলের ছোট ভাইয়েরা লেগুনাগুলো আটকায়। তাই মালিক পক্ষের সাথে কথা বলার জন্য ডেকেছি, তবে তারা আসেনি। এভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি তো সড়কে চলতে পারে না। মালিকপক্ষ না আসলে, কাদের কাছে গাড়ীগুলো দিব?

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফরিদ হোসেন বলেন, হলের দুই ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেলে একটি লেগুনা ধাক্কা দেয়। তাই তাদের দাবি অনুযায়ী লেগুনাগুলো আটকানো হয়েছে। তবে টাকা লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানি না।

শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে গাড়ী আটকে রাখতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা শাখার প্রধান কর্মকর্তা সুদিপ্ত শাহিন বলেন, কেউ ভিতরে গাড়ি নিয়ে আসতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। তবে নিরাপত্তা কর্মীরা শিক্ষার্থীদের সাথে পেরে উঠেনি। তাই আমি বিষয়টি প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার অফিসে জানিয়েছি।

এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ঘটনা শুনেছি। এটা ছাত্রলীগের কোনো ব্যানারে আটকানো হয়নি। একটা হল এগুলো আটকিয়েছে। আমি সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশকে জানিয়েছি বিষয়টি সমাধানের জন্য।

লেগুনা আটকানোর বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সাব্বির আলম বলেন, কোনো ছাত্র বা লেগুনা মালিক আমার কাছে কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখায় আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম