শাপলা চত্বরের পুনরাবৃত্তি চায় না আওয়ামী লীগ
আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩, ০৯:৪২ এএম
রাজপথের দখল ছাড়বে না আওয়ামী লীগ। তারা মনে করছে, সরকারের পতন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুলের লক্ষ্যে ২৭ জুলাই বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে।
২০১৩ সালের মে মাসে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে সরকারের পতন ঘটানোর যে চেষ্টা চালিয়েছিল, তাও মাথায় আছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের। এসব বিষয় সামনে রেখেই ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ব্যানারে পালটা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এদিন শাসক দল ঢাকায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক জমায়েতের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ নিয়ে চলছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি।
এছাড়াও বিএনপিকে প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপির পরবর্তী পদক্ষেপ দেখে তারা সেই কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
জানা যায়, বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা আসবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা পথে বা ঢাকার কোনো স্থানে যাতে বসে পড়তে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।
যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা সোমবার সংবাদ সম্মেলনে তাদের সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করেন। বিএনপির পালটা সমাবেশ করছেন কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে সহাবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করব।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে দেশবিরোধী চক্র, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী আবারও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অগ্নিহত্যার ড্রেস রিহার্সেল হিসাবে তারা রাজধানীর অন্যতম বিদ্যাপীঠ বাঙলা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।
একই দিন পৃথক এক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সংঘাত চায় না। তার দলের পক্ষ থেকে সংঘাতের আশঙ্কাও নেই।
তিনি বলেন, সংঘাতের উসকানি আমরা কখনো দেব না। কারণ, আমরা পাওয়ারে আছি। তবে কেউ যদি সংঘাত ও অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টায় উসকানি দেয়, জনগণের জানমাল রক্ষায় শান্তির জন্য প্রটেকশন দেব।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলটির নবগঠিত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির পরিচিতি সভায় এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠনের বৃহস্পতিবারের সমাবেশ যাতে সর্বাত্মকভাবে সফল করা যায়, সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতারা সোমবার রাতে ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি বৃহস্পতিবার ঢাকায় কোনো ধরনের সহিংসতার চেষ্টা করলে তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। আমরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আছি। তাছাড়া ওইদিন ঢাকায় আমাদের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সমাবেশ রয়েছে। বিএনপি গায়ের জোরে কিছু করতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন সংগঠন। আমাদের চোখের সামনে বিএনপি যদি নাশকতার চেষ্টা করে, অবশ্যই তা প্রতিহত করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তাছাড়া সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো আছেই। এ সময় তারা নিশ্চয় বসে থাকবে না।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি যুগান্তরকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিএনপি ঢাকায় কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে আমরা তা প্রতিহত করব। আমাদের নেতাকর্মীদের সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
২৭ জুলাই দুপুরে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে যে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করছে, সেখানে সর্বোচ্চ নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করবে দলটি। দেশের বিভিন্ন স্থানে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে এই সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে বলে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে জানান যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
এর আগে এই কর্মসূচির নাম ছিল তারুণ্যের জয়যাত্রা। যুবলীগ এককভাবে এ দিন ঢাকায় সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু রোববার রাতে এই কর্মসূচির নাম পরিবর্তন করা হয়। সেই সঙ্গে যুবলীগের সঙ্গে যুক্ত করা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকে। যৌথভাবে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের।
সংবাদ সম্মেলনে মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ২৫ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও যুবলীগ নেতা রাকিব ইমামের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২১ জুন কুমিল্লা জেলার লাকসাম পৌরসভা শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইফতেখার অনিক বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় নিহত হন।
এর আগে বগুড়া শহর শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ হাসান ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রমজান আলীকে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করে বলেও জানান নিখিল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, তিন সংগঠনই ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীদের সমাবেশে আনবে। ছাত্রলীগ সচিবালয় থেকে শহিদ নূর হোসেন স্কয়ার হয়ে সমাবেশস্থলে আসবে। যুবলীগ আসবে গোলাপ শাহ মাজারের দিক থেকে এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিক থেকে এসে সমাবেশস্থলে অবস্থান নেবে।
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী ১১ জেলার নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেবেন। প্রতিটি জেলা থেকে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শতাধিক বাস ছেড়ে আসবে ঢাকার মহাসমাবেশের উদ্দেশে। বাসগুলো যাতে নেতাকর্মী ভর্তি থাকে সে ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রস্তুত থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের সেই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।