ব্যক্তিগত তথ্যফাঁসের ঘটনায় বিএনপির ১০ প্রস্তাবনা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৩, ১২:৩৯ পিএম
ব্যক্তিগত তথ্যফাঁসের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে বিএনপি। পাশাপাশি পুরো ঘটনা তদন্ত করে অবিলম্বে জনগণের সামনে সত্য উন্মোচন, উপাত্ত সুরক্ষায় ব্যর্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ১০ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে দলটি।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে একেএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, 'জনসাধারণের গোপনীয়তার অধিকার সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বিশ্বাস করে যে, ব্যক্তিগত সংবেদনশীল তথ্যফাঁস হলে নাগরিকগণ নানান ধরনের অনলাইন ও অফলাইন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন। এই ঝুঁকিসমূহের মধ্যে রয়েছে— অনলাইন ব্ল্যাকমেইল, ভুয়া সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি, ভুয়া এনআইডি কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা জন্মসনদ তৈরি, ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিটকার্ড থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়া, ব্যক্তিগত ডিভাইসে সাইবার হামলা ইত্যাদি।
এ কারণে জনগণের গোপনীয়তার অধিকার সুরক্ষায় এবং রাষ্ট্রীয় সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিএনপি ১০টি প্রস্তাবনাসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছে। প্রস্তাবনাগুলো হলো—
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে 'সাইবার অপরাধ আইন', 'উপাত্ত সুরক্ষা আইন' এবং 'সাইবার নিরাপত্তা আইন' নামক তিনটি ভিন্ন রকম আইন প্রণয়ন করা। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা, নীতিমালা প্রণয়নের সময় তা মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক দলসমূহ, শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়িক গোষ্ঠীসহ আপামর জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা।
কনভেনশন অন সাইবারক্রাইম স্বাক্ষর ও অনুমোদন করাসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উপাত্ত সুরক্ষার মূলনীতিসমূহ, যেমন জাতিসংঘের ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা ও গোপনীয়তার মূলনীতিসমূহ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জেনারেল ডাটা প্রটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর), এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশনের (এপেক) ক্রস বর্ডার প্রাইভেসি রেগুলেশন (সিবিপিআর) ইত্যাদি স্বীকৃতি দেওয়া ও দেশের আইনি কাঠামোতে বাস্তবায়ন করা।
সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত তথ্যাবলি আদান-প্রদানে অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় পারস্পারিক আইনি সহায়তা চুক্তি করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করার ঘটনাসহ অন্যান্য সাইবার অপরাধসমূহের সব তদন্ত রিপোর্ট তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুসারে জনগণের কাছে অবিলম্বে উন্মুক্ত করা, দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা এবং তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সরকারি আমলাদের অবলিম্বে পদ থেকে অপসারণ করা।
জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি স্বাধীন, স্বায়ত্বশাসিত, ২৪ ঘণ্টা চলমান জাতীয় সাইবার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিম (সারট) গঠন করা এবং দেশীয় সরকারি, বেসরকারি ও সামরিক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত দলকে এর পরিচালনার ভার দেওয়া।
ব্যক্তিগত উপাত্ত সংরক্ষণকারী সব সরকারি প্রতিষ্ঠান যেন কোনো সাইবার হামলার তথ্য জনগণের কাছে সঠিক সময়ে প্রকাশ করে এবং নিয়মিত যেন তারা স্বচ্ছতা রিপোর্ট জনগণের কাছে প্রকাশ করে তা নিশ্চিত করা।
সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে জাতীয়ভাবে প্রণীত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) মেনে চলতে বাধ্য করা।
ব্যক্তিগত উপাত্তে নজরদারির একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা বেঁধে দেওয়া এবং ব্যক্তিগত উপাত্তে নজরদারির কার্যক্রমগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
জনগণের মাঝে ডিজিটাল সাক্ষরতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশব্যাপী কার্যকরী শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষায় এবং সাইবার নিরাপত্তায় কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে, সাইবার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সব সরকারি প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যাবলি জুডিশিয়াল মনিটরিংয়ের আওতায় আনা।