যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনা নিয়ে যা বললেন শামীম ওসমান
রাজু আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৩, ০৯:১৫ এএম
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান এমপির সঙ্গে প্রবাসী বিএনপি সমর্থকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এখন পুরো দেশে আলোচিত। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ওই ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপের ভিউ (দর্শক সংখ্যা) ছাড়িয়ে গেছে কোটির ওপর।
বিষয়টি নিয়ে শামীম ওসমানের নিজের এলাকা নারায়ণগঞ্জই নয়, পুরো দেশেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলেও দাবি করেছেন দেশে-বিদেশে থাকা সরকারদলীয় সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ।
তবে বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেননি শামীম ওসমান। তবে যুগান্তরের কাছে শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে টেলিফোনে নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন তিনি।
যুগান্তর: কেমন আছেন?
শামীম ওসমান: জি, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
যুগান্তর: আপনার ভিসা বাতিল করেছে আমেরিকা, এমন গুজব তা হলে মিথ্যা ছিল?
শামীম ওসমান: গুজব তো গুজবই। গুজবে কান না দেওয়াই ভালো। তবে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সম্পর্কে, বিশেষ করে ভিসা ইস্যু নিয়ে এমন অপপ্রচার চালায় তারা মূলত দেশের শত্রু।
যুগান্তর: আপনার এবারের যুক্তরাষ্ট্রে গমনের কারণ কি শুধুই ভ্রমণ না অন্য কোনো কারণ রয়েছে?
শামীম ওসমান: আপনারা জানেন ২০০১-এর ১৬ জুনের সেই বোমা বিস্ফোরণে আমি নিজেও আহত হয়েছিলাম। আমার সারা শরীরে এখনো বহু স্প্লিন্টার রয়ে গেছে, যেগুলো রিমুভ করা সম্ভব হয়নি। পেইন কিলার (ব্যথানাশক) ওষুধ খেতে খেতে আমার কিডনির অবস্থা ভালো নেই। আমি এখানে এসেছি মূলত আমার চিকিৎসার জন্য।
যুগান্তর: বৃহস্পতিবারের জ্যাকসন হাইটসের ঘটনাটি আসলে কি ঘটেছিল?
শামীম ওসমান: আসলে সেদিন আমি জ্যাকসন হাইটসে গিয়েছিলাম চা খেতে, আমার সঙ্গে শুধু একজন প্রবাসী ছোটভাই ছিল, যে গাড়ি চালাচ্ছিল। সেখানে বোধহয় বিএনপির কোনো প্রোগ্রাম ছিল। আমি গাড়ি থেকে নামতেই ৫০-৬০ জন ছেলে আমাকে দেখামাত্রই আমাকে নিয়ে অশালীন ভাষায় গালাগাল করা শুরু করে। আমি এটা নিয়ে কর্ণপাতই করতাম না বা যেতামই না ওদের সামনে। কিন্তু তারা যে মুহুর্তে জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মা শেখ হাসিনাকে নিয়ে অত্যন্ত বাজে মন্তব্য করছিল, তখন আমাকে নামতেই হয়েছে। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে নামতেন বা তাদের ফেস করতে যেতেন কিনা আমি সেই প্রশ্নে যাব না। কিন্তু আমার গায়ে আওয়ামী লীগ পরিবারের রক্ত বইছে। আমরা তো তারাই যারা বোমা হামলায় মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম— ‘শেখ হাসিনাকে বাঁচান’। আমি ওদের সামনে গিয়ে খুব ভদ্রভাবে বুঝিয়েছি, তোমরা যে এখানে বিদেশের মাটিতে অশালীন ভাষায় স্লোগান দিচ্ছো , কথা বলছো মানুষ তো তোমাদের বাবা-মাকে খারাপ বলবে। সবাই বলবে তোমাদের ভালো শিক্ষা দেয়নি। আমি দেখেছি সেখানে থাকা অনেকেই বিষয়টি বুঝেছিল, যাদের বাবা-মা ভালো শিক্ষা দিয়েছেন। আমি বলেছি, তোমাদের অনেকের বয়স তো আমার ছেলের মতো। আমি বললাম জাতির পিতার কন্যা তো আমাদের মাতৃতুল্য। সেখানে তাকে নিয়ে নোংরা গালি দিচ্ছো কেন? আমার কথায় সেখানে থাকা বেশিরভাগ যুবকই দেখলাম লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেছে। কিন্তু কয়েকজনকে দেখলাম আমার এই ভদ্র আচরণকে দুর্বলতা ভেবে নিয়েছিল। তবে আমার কাছে যেটি ভালো লেগেছে যে, জাতির পিতার কন্যাকে দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশে থাকা সবাই যে ভালোবাসেন তার প্রমাণ পেলাম। কারণ আমি সেখানে একা ছিলাম; কিন্তু তারা অনেক লোক ছিল। জ্যাকসন হাইটসের ব্যবসায়ীরা বিষয়টি দেখছিলেন, উভয়পক্ষের কথাই শুনছিলেন। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পেরে তারাও এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করেছেন। শুধু প্রতিবাদই করেননি, তাদের প্রতিহতও করেছেন। স্থানীয়দের প্রতিরোধে তারা একপর্যায়ে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
যুগান্তর: ঘটনাটি নিয়ে ইতোমধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আপনার এ নিয়ে কিছু বলার আছে?
শামীম ওসমান: এ বিষয় নিয়ে আমাদের নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আমি সবার কাছে অনুরোধ করব— এতে আমাদের উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। তা ছাড়া তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য তো থাকবেই। তারা তো সেই দলেরই লোক, যাদের নেতা তারেক রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের নেত্রীকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। ক্ষমতায় থাকতে তারা আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে। তাদের কাছে এর চেয়ে বেশি ভালো আশা করাটাও ভুল।
যুগান্তর: বিএনপির উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
শামীম ওসমান: আমি অবাক হই তাদের রুচি এতটা খারাপ, এতটা নোংরা গালি কী করে দেয়! তারা বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার মতো সভ্য একটি দেশে এসেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সভ্যতা শিখতে পারেনি মোটেও। যদি বাংলাদেশ থেকে তারা পাকিস্তানে যেত, যে দেশকে তারা ভালোবাসে, তা হলে আমি ভাবতাম যে ঠিক আছে। কিন্তু তারা আমেরিকার মতো একটি সভ্য দেশে এসে যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে, সেটি অবশ্যই দুঃখজনক ঘটনা। তারা শুধু নিজেদেরই ছোট করেনি, দেশকেও ছোট করেছে। তবে তাদের নেতা থেকে তারা যে শিক্ষা পেয়েছেন, তাদের কাছে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না।