সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। আগামী মাসেই ঘোষণা হতে পারে সরকার পতনের একদফা। সেই আন্দোলনে ‘অলআউট’ রাজপথে নামতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। একদফা আন্দোলনের সেই বার্তা তৃণমূলে পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। এজন্য পবিত্র ঈদুল আজহায় সব নেতাকে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই এলাকায় অবস্থান করছেন। ঈদের আগে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেউ কেউ।
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে নেতাদের দ্রুত ঢাকায় ফেরার নির্দেশও দিয়েছে হাইকমান্ড।
বিএনপির দুজন নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে এটাই সবশেষ ঈদ। পবিত্র ঈদুল আজহায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নাড়ির টানে নিজ নিজ এলাকায় যান। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত করতে এ ঈদকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যেসব নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, যারা এখনো কারাগারে আছেন, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ রয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, শিগগিরই সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করা হবে। সেই আন্দোলনে দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে রাজপথে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেই বার্তা নিয়ে এবারের ঈদে সব নেতাকে নিজ নিজ এলাকায় যাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি নিজ এলাকা বরিশালে অবস্থান করছেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি। সরকারের পদত্যাগই এখন একমাত্র লক্ষ্য। তাই ১০ দফাকে একদফায় রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সমমনা দলগুলোর পরামর্শ নিয়ে স্থায়ী কমিটির কয়েকটি বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কিছু দাবিসংবলিত একদফা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ইসি পুনর্গঠন, সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
সূত্র জানায়, শুরুতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়েই শুরু হবে একদফার আন্দোলন। এর মধ্যে থাকতে পারে গণসমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রা ও গণ-অবস্থান। এরপর সময় ও সুযোগ বিবেচনায় ঘোষণা করা হবে কঠোর কর্মসূচি। সেক্ষেত্রে ঢাকা ঘেরাও, ঢাকায় অবস্থানের মতো কর্মসূচি রয়েছে তাদের পরিকল্পনায়। সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে দলের সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত পালন করা হয় এসব কর্মসূচি। আগামী দিনের আন্দোলনে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ে সারা দেশে তারুণ্যের সমাবেশ করছে দলটি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, বগুড়া ও বরিশালে শেষ হয়েছে এ কর্মসূচি। ঈদের পর আরও কয়েকটি বিভাগীয় শহরে একই কর্মসূচি পালন করা হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের মোমেন্টাম তৈরিতে ঈদের পর আরও কিছু কর্মসূচি পালন করবে দল। শ্রমিক দল, কৃষক দল ও মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে পদযাত্রা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু যুগান্তরকে জানান, নানা প্রতিকূলতার পরও নিজ এলাকা নাটোরে ঈদ উদ্যাপন করবেন। আগামী দিনের আন্দোলনে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে উদ্বুব্ধ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর জেলার আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি যুগান্তরকে বলেন, সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের দ্বারপ্রান্তে বিএনপি। এবারের আন্দোলনে জয়ের বিকল্প ভাবছি না আমরা। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। সেই আন্দোলনে যাতে সবাই অংশ নেয়, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। হাইকমান্ডের নির্দেশে আমি ইতোমধ্যে নিজ এলাকায় অবস্থান করছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছি। ঈদের দিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করব।