সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে ভোটের আগে এটাই হতে যাচ্ছে শেষ ঈদ। ঈদ রাজনীতিতে গণসংযোগ, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলার প্রস্তুতি এগিয়ে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। সরকারি দলের বেশির ভাগ এমপিই নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন। ঈদ ঘিরে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও। স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করবেন তারাও। একই সঙ্গে চলবে নির্বাচনি প্রচারণা। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরবেন জনগণের সামনে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এবারের ঈদে নির্বাচনি আমেজ থাকবে। দলের নেতাকর্মী, সংসদ-সদস্য ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে গণসংযোগ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংকটের কথা মাথায় রেখে নেতাকর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময় তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের মানুষের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। বিশ্বে অর্থনৈতিক একটা সংকট চলছে এবং এর প্রভাব কিছুটা বাংলাদেশেও পড়েছে। এছাড়া সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে এবার আমরা আরও বেশি করে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। যাতে সবার ঈদ আরও সুন্দর ও স্বস্তিতে হয়। বিএনপির আন্দোলনের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। আমরা জনগণকে সতর্ক করছি। নিজেদের সাংগঠনিক তৎপরতাকে আরও জোরদার করার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে আমাদের দলীয় সভাপতি আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হবে। সব দলই নির্বাচনে অংশ নেবে-এমনটি ধরে নিয়েই আমরা প্রচারে নেমে পড়েছি। করোনার সময় থেকে আমরা সাধারণ মানুষের পাশে আছি। রমজানেও ইফতার পার্টি না করে নানাভাবে সাধারণ মানুষের পাশে ছিল আওয়ামী লীগ। ঈদের সময় রাজনীতি আরও বেশি সরগরম হয়। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্বাচনি আমেজ। ফলে এবার ভিন্নমাত্রা যোগ হচ্ছে। তবে আবার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়টিও রয়েছে। সব বিষয় মাথায় রেখেই আমাদের দলের নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছেড়েছেন। সংসদ অধিবেশন চলার কারণে মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে যারা ঢাকায় ছিলেন, তারাও সোমবার অধিবেশন মুলতুবি হওয়ার পর বিকালের পর থেকেই ছুটেছেন নির্বাচনি এলাকায়। কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীদের অনেকেই ইতোমধ্যে নিজ নির্বাচনি এলাকায় কয়েক দফা ঘুরে এসেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের পাঞ্জাবি-পাজামা, শাড়িসহ উপহারসামগ্রী দিচ্ছেন। পাশাপাশি গরিব-দুঃখীদের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণসহ কুরবানির ব্যবস্থা করে এসেছেন। অনেকেই নিজ এলাকায় ঈদের নামাজ পড়বেন এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে এবার ঈদ উদ্যাপন করবেন। ঈদের পর আবারও এলাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে অনেকের।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ঈদ ছাড়াও অন্যান্য উৎসবেও জনগণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একাত্মতা ও সহযোগিতা থাকে। কুরবানি ঈদেও অসহায় মানুষের পাশে নানাভাবে যুক্ত থাকার জন্য দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা আছে। একটি মানুষও যেন ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য সভাপতি হিসাবে দলের নেতাদের এবং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে স্থানীয় প্রশাসনকেও নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে এসব মেলবন্ধনে সরকারের উন্নয়ন এবং বিএনপি-জামায়াত সময়ের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রচারেরও নির্দেশনা রয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে-এই ঈদে যারা অসহায়, দুস্থ মানুষ, তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেওয়া, তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার জন্য বলা হয়েছে। সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন যুগান্তরকে বলেন, এবারের ঈদে নির্বাচনি আমেজ থাকবে। সব মনোনয়নপ্রত্যাশী ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। আমাদের নেতাকর্মী ভাইবোনদের জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে গণসংযোগ বিনিময় করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।