বাজেটে সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখা হয়নি: জিএম কাদের
সংসদ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৩, ০৯:০৭ পিএম
ফাইল ছবি
বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, এবারের বাজেটে সাধারণ মানুষের স্বার্থের চেয়ে আইএমএফ-এর শর্তকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আইএমএফ-এর কাছ থেকে বাংলাদেশ যে ঋণ নিচ্ছে, তা খুব বেশি নয়। কিন্তু তাদের শর্ত অনেক, ৩০টি। বিভিন্ন খাতে তারা ভর্তুকি কমাতে বলেছে। এগুলো বেশির ভাগ গরিব মানুষের স্বার্থের পরিপন্থি।
জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জিএম কাদের রোববার এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে এত নিচে গেল যে এই ঋণ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ মরিয়া হয়ে গেছে। করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে কিছু মন্দা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কারও কি এমন দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে? তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন আমরা কঠিন সময় পার করছি। অর্থনীতিতে নানা ধরনের চাপ। এই চাপ উত্তরণে বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এমনকি এই বাজেটে স্বচ্ছতারও ঘাটতি আছে অনেক।
জিএম কাদের বলেন, মুডিস (আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান) বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দেওয়ায় দেশের জন্য বৈদেশিক ঋণ আহরণ কঠিন হয়ে গেছে। টাকা ছাপিয়ে অর্থায়ন করতে হচ্ছে। এখনই জনগণ দিশেহারা। সামনে চাপ আরও বাড়বে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার যে কথা বলেছেন, তা হাস্যকর, কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, এবার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি ধরা হয়েছে। এটাও বাস্তবসম্মত নয়। ব্যাংক ও শেয়ারবাজার ধ্বংস হয়ে গেছে, এ নিয়েও বাজেটে কোনো কথা বলেননি অর্থমন্ত্রী। শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, এমনকি কৃষি খাতেও বরাদ্দ কমানো হয়েছে বাজেটে।
জিএম কাদের বলেন, খেলাপি ঋণ সঠিক হিসাব করলে তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। খেলাপি ঋণ কমাতে বাজেটে কোনো সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট বন্ধেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বাজেটে। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ডলারের দাম বেড়েছে। সব জিনিসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, সরকার টাকা ছাপিয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছে। যদিও এতে সমস্যা আরও বাড়বে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে।
কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব তুলে ধরে বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, যমুনা টেলিভিশনে একটি খবরে দেখলাম, মিরপুরে তিন কমিশনার কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক। পুলিশ এই গ্যাংয়ের সদস্যদের মাঝেমধ্যে আটক করে। জেলে পাঠায়। কিন্তু তারা কিছুদিন পর জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। একটি সভ্য সমাজে এসব চলতে পারে না। এসব ঘটনা দেখে মনে হয় না দেশে সরকার আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে।
সিএনজিচালিত গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সিএনজিচালিত গাড়ি এক একটি বোমা বহন করছে। এসব দেখার কেউ নেই। এদেশে অনেক আইন আছে। এই আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা দেখার কেউ নেই।