ফাইল ছবি
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী ভিন্ন ‘কৌশলে’ এগোচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ দশ দফা দাবি ও জনসম্পৃক্ত নানা ইস্যুতে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে শক্তি দেখাতে চাইছে। একই সঙ্গে নির্বাচনেরও প্রস্তুতি রয়েছে। যেসব আসনে সাংগঠনিক শক্তি বেশি, সেসব আসনে তারা প্রার্থীও ঠিক করেছে। তবে আপাতত দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনেই থাকতে চায়। এজন্য তারা নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে।
জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করেই সংগ্রামে যাব। নিঃসন্দেহে সময়ের ব্যবধানে এই আন্দোলন আরও গতি পাবে। আমি মনে করি জামায়াতে ইসলামীর ১২ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট রয়েছে। এখন বিষয়টি জোটবদ্ধ হলে এক ধরনের হিসাব, যুগপৎ হলে এক ধরনের হিসাব হবে। আমাদের এখন লক্ষ্য হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সফল করা। নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারকে বাধ্য করা। আমরা সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছি। সামনে আন্দোলন আরও জোরদার হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর একজন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য যুগান্তরকে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে জামায়াত সমাজকল্যাণ ও সংগঠন গোছানোর কাজ করছে। এ সময়ে কয়েক লাখ কর্মী, ১০ হাজার রুকন বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম দুই কর্মসূচির পর হঠাৎ জামায়াতের এ অনুপস্থিতি বিএনপির নেতৃত্বের ওপর ‘ক্ষোভ’ বা ‘অভিমান’ থেকে। কারণ সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের যাত্রা বা কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি অন্য সব দলের সঙ্গে আলোচনা-পরামর্শ করলেও জামায়াতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। এরপরও অনেকটা গায়ে পড়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে অংশ নেয় জামায়াত। এর মধ্যে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করতে গিয়ে মালিবাগে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও লাঠিপেটার শিকার হন নেতাকর্মীরা। এতে অনেকে আহত হন, অনেককে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু এ ঘটনায় বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কার্যত এরপর জামায়াত পরবর্তী কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে। তবে নিজস্ব কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির আগে বা পরে মাঠে তৎপর রয়েছে জামায়াত।
জামায়াতের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, বিএনপি যেভাবে একলা চলছে, সেখানেও নেতিবাচক দিক আছে। একটি হলো জামায়াতের মতো ভোটের ও মাঠের শক্তিশালী দলকে আন্দোলনে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ করতে পারছে না। দুই, মানুষ হতাশ হচ্ছে। যখন মানুষ হতাশ হয়, তখন তাদের রাস্তায় আনা কঠিন হবে। এজন্য মাঠের আন্দোলনে ক্ষেত্রে এটা কিছুটা দুর্বলতা।
দলটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এখন টানাপোড়েন সম্পর্ক। এ কারণে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর যে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি চলছে, সেখানে জামায়াত নেই। যদিও শুরুর দিকে দুটি কর্মসূচিতে দলটির অংশগ্রহণ ছিল। এখন ভিন্ন দিনে তারা কর্মসূচি পালন করছে। রোববারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দলের আমিরসহ সব নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় শহরে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, জামায়াতের সব সময়ই নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকে। পরবর্তী ১০ বছরে প্রার্থী কারা হবেন তা ঠিক করে ফেলা হয়েছে। দলের এ, বি ও সি ক্যাটাগরির এলাকা আছে। এ ও বি ক্যাটাগরি এলাকার প্রার্থী আগেই ঠিক করা হয়েছে। সি ক্যাটাগরির প্রার্থী এখন ঠিক করা হচ্ছে। সেটা নির্বাচনকে সামনে রেখে করা হচ্ছে বিষয়টি তা নয়। এটা দলের একটি প্রক্রিয়ার অংশ। জামায়াতের দুটি বিভাগ রয়েছে-অভ্যন্তরীণ নির্বাচন বিভাগ ও স্থানীয় জাতীয় নির্বাচন বিভাগ। এর দায়িত্বও আলাদা। তারা এসব কাজ করে থাকে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। এরই মধ্যে ৮৬ সাংগঠনিক জেলা শাখা ও এর অধীনে থাকা উপজেলা, থানা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের সব কমিটি গঠন করেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে দলটির প্রকাশ্যে তৎপরতা না দেখা গেলেও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে নীরবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।