যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি গণঅবস্থানে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। বুধবার ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে গঠন করা হয়েছে বিভাগভিত্তিক সমন্বয় টিম। এসব টিম সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও জেলা, মহানগর ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। বেলা ১১টা থেকে ৪ ঘণ্টার এ কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। বিএনপি ছাড়াও এদিন মাঠে থাকবে আরও ৩৩ রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এবং আরও ১৫টি সংগঠনও থাকবে।
এদিকে নতুন কর্মসূচি নির্ধারণে সমমনা বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পরবর্তী কর্মসূচি হিসাবে আলোচনায় আছে জেলা টু জেলা লংমার্চ বা রোডমার্চ বা পদযাত্রা ও পথসভা এবং ঘেরাও কর্মসূচি। এছাড়া ২৫ জানুয়ারি ‘বাকশাল দিবস’ পালন করবে। ওইদিন সভা বা মানববন্ধন কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা করছে। তবে এখনো পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। এদিকে বিএনপির সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছে না জামায়াতে ইসলামী। তবে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, যেখানে মিছিল করলেই বাধা দেওয়া হয়, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়; সেখানে চার ঘণ্টার গণঅবস্থান কর্মসূচি করা দলের নেতাকর্মীদের জন্য বেশি ঝুঁকি হয়ে যায়। তাই তারা ‘কৌশলগত’ কারণে গণঅবস্থান কর্মসূচি করবে না। ওয়ান-ইলেভেনের এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসাবে পালন করবে। দেশের সব মহানগরী শাখায় আলোচনা সভা করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবিসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনগণের পক্ষে ১০ দফা ঘোষণা করেছি। এসব দাবি আদায়ে যুগপৎভাবে আমরা রাজপথে নেমেছি। ক্ষমতাসীন সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা, লুটপাট, নির্যাতনসহ বহুবিধ অন্যায় দেশের মানুষ কখনো ভালোভাবে নেয়নি। এখন তারা জেগে উঠেছে। তিনি বলেন, গণঅবস্থান কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।’
অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে বিরোধী দলগুলো। যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসাবে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা ও রংপুর বিভাগে এবং ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে শান্তিপূর্ণ প্রথম গণমিছিল করেছে বিএনপি। একইদিন একই কর্মসূচি পালন করেছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোও।
বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, থানা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের ইউনিটের নেতারা এরই মধ্যে গণসংযোগ, কর্মিসভা, লিফলেট বিতরণসহ প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড প্রায় শেষ করেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জামিন পাওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। নয়াপল্টনের গণঅবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে মির্জা ফখরুলের। তাই নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচি সফলে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রতিদিনই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন দফায় দফায় বৈঠক করছে। নেতাকর্মীকে দেওয়া হচ্ছে নানা দিকনির্দেশনা। ১০ দফা দাবিকে তুলে ধরতে তৈরি করা হচ্ছে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন। এ ছাড়া প্রত্যেক বিভাগে এ কর্মসূচি পালনে কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিনিয়র নেতাদের।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগের দলনেতা মোহাম্মদ শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, ‘গণঅবস্থান সফলে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। এজন্য বিভাগের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছি। আশা করি, এ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষও সম্পৃক্ত হবেন।’ তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে বিভাগীয় এ কর্মসূচি পালনে লালদীঘির ময়দান বা কাজীর দেউড়ির সামনে স্থান চাওয়া হয়েছে। আশা করি, সরকার এতে অনুমতি দেবে।’
সিলেট বিভাগের দলনেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘বিগত দিনগুলোয় বিএনপি যেসব দাবি জানিয়ে আসছে, কথা বলেছে, তা এখন জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দেশের পরিবর্তনটা শুধু বিএনপির জন্য নয়, এটা এখন সবার দাবি।’
বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করব। আমরা সব সময় পুলিশকে যেমন অবহিত করি, ঠিক একইভাবে অবহিত করেছি। ময়মনসিংহ শহরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে নতুন বাজারসংলগ্ন হরিকিশোর রায়ের রোডে গণঅবস্থান কর্মসূচি করব।’
বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হবে গণঅবস্থান কর্মসূচি। সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। শান্তিপূর্ণভাবে চার ঘণ্টার কর্মসূচি শুরু এবং শেষ করব। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেবে না।’
মাঠে থাকবে ৩৪ রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী পরিষদসহ আরও ১৫ সংগঠন : বুধবার গণঅবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি ছাড়াও সাতদলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১২ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট মাঠে থাকবে। এছাড়া কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি থাকবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এবং ইয়ুথ ফোরাম, জিয়া নাগরিক সংসদ, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি, জাতীয়তাবাদী চালক দলসহ ১৫টি সংগঠন।
গণঅবস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ কয়েক দফা প্রস্তুতি বৈঠক করেছে। ওইদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তারা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জোটের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। গণঅবস্থান সফল ও পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে সোমবার ১২ দলীয় জোট ও ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। এতে আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচিসহ করণীয় নিয়ে এ দুই জোটের শীর্ষ নেতাদের মতামত নেওয়া হয়।
পূর্ব পান্থপথের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বড় আকারে শোডাউন করে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতাকর্মীরা। এছাড়া সব বিভাগীয় শহরে দলটি এ কর্মসূচি পালন করবে। বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে ১২ দলীয় জোট। পুরানা পল্টন মোড়ে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছেন ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। আরামবাগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালন করবে মোস্তফা মোহসীন মন্টু নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। এদিকে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম এক বিবৃতিতে জানান, কাল ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করবে তারা। এজন্য দেশের সব মহানগরী শাখায় আলোচনা সভা করা হবে।