পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে ভিপি নুরের যত অভিযোগ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২২, ০৭:৪৭ এএম
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর অভিযোগ করে বলেছেন, মানুষের ত্রাণের জন্য হাহাকার, খাবারের জন্য হাহাকার। সেদিকে সরকার কর্ণপাত না করে গণমাধ্যমসহ সমস্ত কিছুকে ব্যস্ত রেখেছে পদ্মা সেতুকে নিয়ে। আমরা বারবার বলেছি, অবশ্যই পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের প্রতীক। আমরা অবশ্যই পদ্মা সেতুর পক্ষে। কিন্তু এটা নিয়ে সরকার এত অতিকথন করেছে; যা নিয়ে দেশের মানুষ বিরক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত বন্যা, খরা ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সরকারের ব্যর্থতা ও উদাসীনতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নুর বলেন, আপনারা দেখেছেন গত ২ মাস ধরে টাকা পয়সা খরচ করে প্রস্তুতি নিয়ে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি অফিসকে নির্দেশনা দিয়ে তারা ১০ লাখ মানুষকে নিয়ে একটা মহোৎসব করতে চেয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেখানে ১ লাখ লোকও হয় নাই। এই সরকারকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের উপস্থিতি এই জানান দেয়।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে সমজে মারাত্মক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদেরকে জুতার মালা পড়ানো হচ্ছে। শিক্ষকদেরকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে মারা হচ্ছে। এই হচ্ছে শেখ হাসিনার উন্নয়ন।
ভিপি নুর আরও বলেন, এই ফ্যাসিবাদী সরকারের জন্য মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা ভোট দিতে পারছে না। দেশে গণতন্ত্র নাই। আইনের শাসন নাই। মানুষ যখন নির্বাচনের জন্য সংগঠিত হচ্ছে, তখন তারা ইভিএমের নামে ভেলকিবাজি শুরু করেছে। আগামী নির্বাচন নাকি ইভিএম- এ হবে। যে দেশের মানুষ এখনো দলিল লেখে টিপ সই দিয়ে, সেই দেশে ইভিএম নির্বাচন কতোটুকু বাস্তবসম্মত, তা আপনারা বিবেচনা করে দেখেন। যেসব রাজনৈতিক দলগুলো ইসির সংলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ৪টা দল ব্যতীত সবাই বলেছে, ইভিএম এ ভোট সম্ভব না। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো মেরুদণ্ডওয়ালা রাজনৈতিক দল অংশ নেবে না। তাই আমরা সরকারকে বলব আপনারা সময় থাকতে লাইনে আসেন। গায়ের জোরে নির্বাচন করার দুঃস্বপ্ন আর দেখাবেন না। এখনো সময় আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য ঐক্যমতে পৌঁছান।
নুর বলেন, আপনারা মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ- আমাদের সামনে নজির রয়েছে। যখন বন্যার্ত মানুষের খাদ্য প্রয়োজন, তখন ওই এলাকায় কেউ যায় না।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সিলেটের কয়জন মন্ত্রী বন্যার্ত এলাকায় গিয়েছেন? বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগে এ পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ত্রাণ ওই এলাকায় দেওয়া হয়েছে। সরকারের বরাদ্দ কতো আপনারা সবাই ভালো জানেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, বন্যা বাদল হবে, কিন্তু অন্যায় হলো আমাদের না জানিয়ে সব স্লুইচগেটগুলো খুলে দেওয়া৷ রাজনৈতিক অপরাধ করেছে তারা। এটা আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে। শ্বশুরবাড়িরলোক তাকে তো কিছু বলা যায় না।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, শেখ হাসিনা সবাইকে বোকা বানাচ্ছেন।
এ সময় তিনি বলেন, সামনে কঠিন পথ। তরুণ প্রজন্মকে সবসময় রাস্তা দখল করে নিজের অধিকার আদায়ে সরকারকে বাধ্য করার পরামর্শ দেন তিনি।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ২৫ জুন হাসি হাসি মুখে প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনলেও ঈদে লাখো পরিবার ভালো খাবার পাবে না, পোশাক পাবে না। সবগুলো স্লুইচগেট খুলে দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে ভারত। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে কথা বলবেন না শেখ হাসিনা।
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, সরকারদলীয়রা আজকে নদী, চর বিল দখল করেছে। ঢাকার একজন সংসদ সদস্য মারা গেছেন। তার নাম আসলামুল হক। নদী ও জলাশয়ের ৫৪ একর জায়গা দখল করে তিনি উন্নয়ন প্রজেক্ট শুরু করেছিলেন। এখন কী এই জমি তিনি কবরে নিয়ে গেছেন?
যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, এই সরকার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
জাতীয় সংসদে এখন আর জনগণের কল্যাণে কোনো আইন তৈরি হয় না, জাতীয় সংসদে এখন গান বাজনা হয়। আমাদের সিলেটের সন্তান দাবি করা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট সুনামগঞ্জের ৪০ লাখ মানুষকে পানিবন্দি অবস্থায় রেখে ভারতে উড়াল দিলেন, ভারতে গিয়েও নূন্যতম সম্মান পেলেন না।
যুগ্ম-আহ্বায়ক আবু হানিফ বলেন, বন্যাকবলিত মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা যেন মানুষ জানতে না পারে, গণমাধ্যমে যেন এসব খবর না আসে, সেজন্য পদ্মা সেতু নিয়ে যেন ধারাবাহিকভাবে নিউজ করে গণমাধ্যম হাউজগুলোতে ফরমায়েশ পাঠিয়েছে এই সরকার। একজন তো কেবল পদ্মা সেতুর নাটবল্টু খুলে দিয়েছে জনগণ এই সরকারের নাটবল্টু খুলে দিবে খুব শিগগিরই।
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম-সদস্য সচিব সাইফুল্লাহ হায়দারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।