Logo
Logo
×

রাজনীতি

অবশেষে জামি’আ রাহমানিয়া ছাড়তে হলো মাহফুজুল-মামুনুল পরিবারকে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২১, ১২:২৭ এএম

অবশেষে জামি’আ রাহমানিয়া ছাড়তে হলো মাহফুজুল-মামুনুল পরিবারকে

মোহাম্মদপুরের জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া। ফাইল ছবি

অবশেষে দেশের প্রথিতযশা কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদপুরের জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া ছাড়তে হলো মাহফুজুল-মামুনুল হক পরিবারকে।  টানা দুই দশক মাদ্রাসাটি দেশবরেণ্য আলেম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

সোমবার সকালে বর্তমান মুহতামিম প্রয়াত আজিজুল হকের ছেলে মাওলানা মাহফুজুল হক মাদ্রাসার মূলফটকে তালা দিয়ে বেরিয়ে যান। এ সময় মাদ্রাসার চাবি কওমি শিক্ষা বোর্ড আল হাইআতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পরে উপস্থিত শিক্ষক-ছাত্রদের নিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন মাওলানা মাহফুজুল হক।  তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে কথা আসছে- আমাদের এ প্রতিষ্ঠান ছাড়তে হবে, এ ভবন আমাদের ছাড়তে হবে। আমাদের কাছে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কোনো নোটিশ আসেনি। আমাদের দেশের শীর্ষ আলেমরা এ বিষয়টি নিয়ে কোনো পরামর্শও করছেন না।

চলমান অবস্থার অবসান হওয়া দরকার উল্লেখ করে মাহফুজুল হক বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের উপস্থিত শিক্ষক ও ছাত্ররা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আশপাশে চলে যাচ্ছেন।  আমরা অল্প সময়ের মধ্যে মাদ্রাসার সব গেটে তালা দিয়ে শীর্ষ আলেমদের কাছে চাবি হস্তান্তর করবো।

এ সময় মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের অধৈর্য না হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে মাদ্রাসা ভবনটি সোমবারের মধ্যে না ছাড়লে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান হওয়ার কথা ছিলো বলে জানা গেছে। 

ওয়াকফ অ্যাস্টেট অনুমোদিত জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মাদ্রাসা কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, আজ ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান হওয়ার কথা ছিলো। তারা (মাওলানা মাহফুজুল হক) আগেই মাদ্রাসা ছেড়ে চলে গেছেন।  তারা চাবি মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কাছে হস্তান্তর করবেন। এখন আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করছি, আশা করছি মাদ্রাসার ভবনটি কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে জামিআ রাহমানিয়া ইস্যুতে রোববার হেফাজত মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদীসহ কয়েকজন আলেম বেফাক সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ সময় তারা মাদ্রাসার দায়িত্ব মাহফুজুল হকের কাছে রাখার অনুরোধ করেন বলে জানা গেছে। 

বৈঠকে গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি রুহুল আমিন, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মুফতি এনামুল হকসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। 

বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, শীর্ষ আলেমদের পরামর্শের পর আমরাও মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে পরামর্শ করেছি।  রোববার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে বার্তা আসে, আমরা যেন মাদ্রাসার চাবি আল হাইআতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানে কাছে বুঝিয়ে দেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা জেনেছি তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মন্ত্রী তাদের আশ্বাসও দিয়েছেন।  এতে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি, দীর্ঘদিন ধরের চলে আসা এই অবস্থার একটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাবে।

প্রসঙ্গত, মোহাম্মদপুরের জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া শীর্ষস্থানীয় একটি কওমি মাদ্রাসা। ১৯৮৮ সালে ওয়াকফ সম্পত্তিতে গড়ে ওঠা এই মাদ্রাসাটি ২০০১ সালে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় আল্লামা আজিজুল হকের পরিবার।  তার ছেলে মাহফুজুল হক ও মামুনুল হকরা পরে হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। 

ওয়াকফ প্রশাসনে নিবন্ধিত মাদ্রাসাটি থেকে ওই সময়ের ৩৬ জন শিক্ষককে বের করে দেওয়া হয়। সেই সময় থেকে মাদ্রাসাটির পরিচালনার দায়িত্ব ফিরে পেতে আইনি লড়াই চালিয়ে যায় ওয়াকফ অ্যাস্টেট পরিচালনা কমিটি। আদালতের রায়, ওয়াকফ প্রশাসনের পক্ষে আদেশ থাকার পরও এতদিন মাহফুজুল হক ও মামুনুল হকরা প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণে রাখে।

সম্প্রতি হেফাজেতের তাণ্ডব ও মামুনুল হকের রিসোর্ট কাণ্ডের পর বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। 

সর্বশেষ ১৮ মে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মাদ্রাসা ওয়াকফ অ্যাস্টেট পরিচালনার জন্য ২১ সদস্যের একটি পরিচালনা কমিটি অনুমোদন দেয়। তিন বছরের জন্য এই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।  সেই কমিটির সভাপতি আব্দুর রহীম।  কমিটির সহ-সভাপতি হারুনুর রশীদ, আলীমুজ্জামান, সম্পাদক কাজী সাহিদুর রহমান, অর্থ সম্পাদক হাফিজ আব্দুল গাফফার, রঈস মাওলানা হিফজুর রহমান, শাইখ মুফতি মনসুরুল হক। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন ক্বারী মুজাফ্ফর হুসাইন, ডা. আব্দুল কাইউম, মুজাম্মেল হুসাইন, আকরাম হুসাইন, উমর ফারুক মিল্কী, মুনীর সাঈদ, আলী হুসাইন, ডা. আহসানুল্লাহ, ডা. ইখলাসুর রহমান, আব্দুল হালীম, আব্দুর রব, হিফজুল বারী।

২৯ জুন বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মাদ্রাসা ওয়াকফ অ্যাস্টেট’র সম্পত্তি অনুমোদিত কমিটির কাছে বুঝিয়ে দিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়।  
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম