জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার আদেশ দেয়া হবে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত রোববার এ দিন ধার্য করেন।
এদিকে আদালতের নির্দেশানুযায়ী বুধবার খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসংক্রান্ত মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিয়েছে বিএসএমএমইউ। তবে আর্থ্রাইটিসের উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি সম্মতি দেননি বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। এমন প্রেক্ষাপটে আইনি লড়াই ও রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে বুধবার দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আইনজীবী নেতারা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জামিন আবেদনের ওপর আদেশকে কেন্দ্র করে সবার চোখ আজ উচ্চ আদালতের দিকে। খালেদা জিয়া কি জামিন পাবেন? নাকি আবেদন খারিজ হয়ে যাবে? এ নিয়ে জনমনে রয়েছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। বিএনপি নেতা ও আইনজীবীরা বলছেন, ন্যায়বিচার পেলে খালেদা জিয়া জামিন পাবেন বলে আশাবাদী। তবে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বুধবারই বলেছেন– খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বুধবার সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ এই প্রতিবেদন জমা দেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান।
তিনি বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএসএমএমইউর আইনজীবী তানিয়া আকতার বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য প্রতিবেদন সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে হস্তান্তর করেন।
এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কেএম জহিরুল হকের যুগ্ম-বেঞ্চ বুধবার বিকাল ৫টার মধ্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্যকে কোনোরকম ব্যর্থতা ছাড়াই এ প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বুধবার বিকাল ৫টার মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর ওই প্রতিবেদন দাখিল এবং পাশাপাশি মামলার শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়েছিল। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুসারে খালেদা জিয়া অ্যাডভান্স থেরাপির জন্য সম্মতি দিয়েছেন কিনা, সম্মতি দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কিনা এবং বর্তমান তার কী অবস্থা তা জানিয়ে প্রতিবেদন বুধবারের মধ্যে দিতে বলা হয়।
সেদিন খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, সগির হোসেন লিওন ও ফারুক হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
ওই দিন শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা একমাত্র স্বাস্থ্যগত কারণে আবার আদালতে এসেছি। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা আগের থেকে অনেক খারাপ। তিনি ৫ মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। নিজের হাতে খেতেও পারেন না। খাবার খেলেও তিনি প্রায় বমি করেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে বলেন, তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এভাবে থাকলে তার কখন কী হয়ে যায় তা বলা যায় না। তাই আমরা তার জামিন প্রার্থনা করছি।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসির প্রতি নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদন তুলে ধরেন জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে তার স্বাস্থ্যগত সর্বশেষ অবস্থা কী, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন চাইতে পারেন।’
শুনানিতে জামিনের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এর আগে এ আদালতে একই আবেদন করা হয়েছে এবং আপিল বিভাগে খারিজ হয়েছে। আপিল বিভাগে খারিজ হওয়া আবেদন এবং এ আবেদন পুনরাবৃত্তি মাত্র।
আপিল বিভাগ তো বলেছেন উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তার সম্মতিতে সেটি করা হবে। এ ছাড়া তার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধ বাংলাদেশে রয়েছে। এর পর হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়া এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দল ও পরিবারের সদস্যরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে তাতে অনুমতি মেলেনি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন চেয়ে এর আগেও হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু অপরাধের গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট আইনের সর্বোচ্চ সাজা এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত- এমন তিন বিবেচনায় হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩১ জুলাই সেই আবেদন খারিজ করে দেন। এর পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল বিভাগে যান। কিন্তু খালেদা জিয়া জামিন পাননি।
১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেন। আপিল বিভাগের ওই রায়ে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসনের সম্মতি থাকলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে দ্রুত ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ দেয়ার পদক্ষেপ নিতে।
সেই রায় ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত হওয়ার পর হাইকোর্টে নতুন করে জামিন আবেদন করার উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ৩৬টি মামলার মধ্যে ৩৪টি মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে আছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।