ঢাকার ২ সিটি নির্বাচনে জিততে বিএনপির নতুন কৌশল
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৪৭ এএম
যেকোনো মূল্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয় পেতে চায় বিএনপি। এজন্য দলটি নতুন কৌশল নিয়েছে।
দুই সিটিতে জয় নিশ্চিতে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
জানা গেছে, নির্বাচনের দিন ভোর থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্র পাহারা দেবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
শুধু তাই নয়, ভোটের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকা, ভোটারদের ভোট দেয়া নিশ্চিত করা, কেন্দ্র দখল ও কারচুপি ঠেকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপি ঠেকানো গেলে তাদের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত।
জানা গেছে, কেন্দ্র দখল ও কারচুপি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে দুই স্তরের কমিটি। পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের দিন ভোর থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্র পাহারা দেবেন এসব কমিটির সদস্যরা।
এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিশ্চিতে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। ইতিমধ্যে মেয়র পদের জন্য দুই সিটিতে প্রায় ৫০ হাজার পোলিং এজেন্টের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
মেয়রদের পাশাপাশি দল সমর্থিত সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও আলাদা পোলিং এজেন্টের তালিকা তৈরি করছে। কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
বিএনপির তিনজন নীতিনির্ধারক প্রায় অভিন্ন সুরে যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপি ঠেকানো গেলে তাদের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত। নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা থাকলেও মোটামুটি সুষ্ঠু হলে বিএনপি প্রার্থীরা ভালো করবেন। তাই ভোটাররা যাতে বাধাহীনভাবে কেন্দ্রে আসতে পারে, সেটাই আমাদের মূল ভাবনা।
তাছাড়া চট্টগ্রাম উপনির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ায় ঢাকাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। এবারের সিটি নির্বাচন নানা কারণে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। অতীতের মতো ভোটে অনিয়ম হলে এর প্রতিবাদে একটা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
এ ইস্যুতে রাজপথে নামার একটা সুযোগও তৈরি হতে পারে। তাই এবার ভোটের দিন কোনোভাবেই মাঠ ছেড়ে দেয়া হবে না। ক্ষমতাসীনরা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। তাদের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হবে বলে কেউ বিশ্বাস করে না। তারপরও গণতান্ত্রিক দল হিসেবে মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।
তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত। তাই ভোট কেন্দ্র যাতে দখল বা নির্বাচনে কারচুপি করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে ভোট কারচুপি ঠেকাতে যা যা করণীয় আমরা করব।
সূত্র জানায়, ভোটের দিন করণীয় নিয়ে দুই সিটির বিএনপির কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডকে ছয়টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। একজন সিনিয়র নেতাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের এসব জোনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এছাড়া একজন কেন্দ্রীয় নেতার সমন্বয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে গঠন করা হয়েছে একটি করে কমিটি। কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে আলাদা কমিটি। দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদের এ কমিটিতে রাখা হচ্ছে।
বিএনপির পাশাপাশি যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা থাকছেন এসব কমিটিতে। ভোটের দিন এসব কমিটির সদস্যরা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পাহারায় থাকবেন।
একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটিকেও কয়েকটি জোনে ভাগ করে একইভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, দুই স্তরের কমিটি সার্বিকভাবে মনিটরিং করবেন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি।
ভোটের দিন কোনো কেন্দ্র দখল বা ভোট কারচুপির ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তারা কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিমকে অবহিত করবেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কে তাদের পরামর্শ দেবেন তারা।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তরের বিএনপির কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, সিটি নির্বাচনকে আমরা এসিড টেস্ট হিসেবে নিয়েছি।
পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে না। জনগণ বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নীরব বিপ্লব ঘটাবেন বলে আশা করি।
তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সেটাই আমাদের মূল টার্গেট। এজন্য ভোটের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে নেতাকর্মীরা পাহারায় থাকবেন। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে। ভোটের দিন ক্ষমতাসীনরা যাতে সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে না পারে সেজন্য আমরা প্রস্তুত আছি। কেন্দ্র দখল ও কারচুপি হলে এবার আমরা একটা ঝাঁকুনি দিতে চাই।
জানতে চাইলে উত্তর ও দক্ষিণের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী যুগান্তরকে বলেন, ধানের শীষের প্রার্র্থর পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভোটাররা ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন। কিন্তু ভোটের দিন তারা কেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে নানা শঙ্কা রয়েছে।
ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যেতে পারেন সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ক্ষমতাসীনরা যাতে কেন্দ্র দখল করতে না পারে সেজন্য এবার শক্তিশালী পোলিং এজেন্ট দিচ্ছি। যারা নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে আলাদা কমিটি হচ্ছে। ভোটের দিন তারা কেন্দ্রে পাহারারত অবস্থায় থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রের চারপাশে আমাদের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণের ৯নং ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আনু যুগান্তরকে বলেন, সরকার একতরফা নির্বাচন করে যেন কেন্দ্র দখলে নিতে না পারে, সে বিষয়ে হাইকমান্ড থেকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।
ভোট কারচুপি ঠেকাতে নেতাকর্মীদের নিয়ে কেন্দ্র পাহারা দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, যত বাধাই আসুক আমরা এবার কেন্দ্র ছেড়ে যাব না। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছি।