যে প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচন হবে আ’লীগের কাউন্সিলে

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৪০ পিএম

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল আজ। বেলা ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দু’দিনব্যাপী কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরদিন (শনিবার) সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এর মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে বলে আভাস দিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
কাউন্সিল স্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পুরোপুরি প্রস্তুত। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সৃষ্টি করা হয়েছে নয়নাভিরাম দৃশ্যের। আশপাশের এলাকাসহ মূল মঞ্চটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যেন পদ্মা নদীর বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে বিশাল এক নৌকা।
৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির চারটি পদ খালি থাকায় মূল মঞ্চে চেয়ার থাকবে ৭৭টি। মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের জন্য চেয়ার থাকবে ৩০ হাজার। এছাড়া সম্প্রসারিত মঞ্চে চেয়ার দেয়া হবে ১৫ হাজার।
এবার দলের প্রায় ১৫ হাজার কাউন্সিলর এবং প্রতিনিধি অংশ নেবেন। তাদের বাইরেও দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবেন। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষের জমায়েত এবং খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।
২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান। উদ্বোধনের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব আলোর ঝলকানি উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করবে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, শনিবার দ্বিতীয় অধিবেশনেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হতে পারে। এ বিষয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইতিমধ্যে নেতা নির্বাচনে বর্তমান কমিটির সব স্তরের নেতার আমলনামা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সংশ্লিষ্ট নেতাদের সফলতা ও ব্যর্থতার পাশাপাশি নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা, দলীয় কোন্দলে সম্পৃক্ততাসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডের বিশ্লেষণের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নতুন নেতৃত্বও প্রস্তুত করেছেন তিনি। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ধারণা- ‘নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্ব’র যে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড করছে, এর প্রতিফলন ঘটবে এবারের কাউন্সিলে।
আওয়ামী লীগের শনিবারের দ্বিতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে। নির্বাচন পরিচালনায় বুধবার দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন দলের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। অপর দুই সদস্য হলেন- উপদেষ্টা সদস্য ড. সাইদুর রহমার ও ড. মশিউর রহমান। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৫২(ক) ধারা মোতাবেক কমিটি গঠন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করে থাকেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। আর এতে কণ্ঠভোটে সমর্থন দেন উপস্থিত কাউন্সিলররা। পরে গঠনতন্ত্র মোতাবেক পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, দলের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদে ব্যাপক রদবদলের আভাস পাওয়া গেলেও এখনও অদ্বিতীয় বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা। তার কোনো বিকল্প নেই আওয়ামী লীগে। নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা আর ভালোবাসার মূর্তপ্রতীক তিনি।
বারবার অবসরের ঘোষণা দিলেও নেতাকর্মীদের দাবির মুখে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা। এবারও তিনিই দলের সভাপতি থাকছেন তা নিশ্চিত।
কাউন্সিল ঘিরে এ মুহূর্তে প্রধান আলোচনার বিষয়- কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক। তিন বছর ধরে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নতুন কমিটিতেও এই পদে তারই থাকার সম্ভাবনা বেশি।
আওয়ামী লীগের ১৭ সদস্যবিশিষ্ট সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে বাদের তালিকায় আছেন অন্তত ১০ জন। বাদ পড়াদের মধ্যে সাবেক ২ মন্ত্রীসহ ৬ জন উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেতে পারেন। প্রেসিডিয়াম থেকে কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পদ পেতে পারেন ২ জন। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ২ জন প্রেসিডিয়ামে আসতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।
ক্যাসিনোকাণ্ড, দুর্নীতি ও নৌকা বিরোধিতার কারণে কপাল পুড়তে যাচ্ছে সম্পাদকমণ্ডলীর ৩৪ সদস্যের অনেকেরই। ইতিমধ্যে শীর্ষ কয়েক নেতা বাদ পড়ার বিষয়টি অবহিত হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বিভিন্ন আলোচনায় বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।
এছাড়া দলে নিষ্ক্রিয়তা, কমিটি বাণিজ্য, নিজ এলাকায় দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণে ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকের ৪ জনই বাদ পড়তে পারেন। ২ জনের স্থান হতে পারে প্রেসিডিয়ামে। পরিবর্তন আসতে পারে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, বাণিজ্য ও শিল্প সম্পাদক, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে। এসব পদে থাকা বেশ কয়েকজন নেতার পদোন্নতি কিংবা পদাবনত হতে পারে।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা ২৮। কাউন্সিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে যাদের স্থান দেয়া সম্ভব হয় না, সাধারণত তারাই সদস্য পদ পেয়ে থাকেন। বর্তমান সদস্যদের অনেকেই নিজ পদ ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করা, মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দলীয় প্রভাব খাটানোসহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।