‘বাবা বলেছিলেন— তোর ছেলে হবে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক, নাম রাখবি জয়’
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:৪৭ এএম
বাঙালির মুক্তির ডাক দেয়ার পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। আর সে কারণেই তিনি জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে তার প্রথম সন্তানের নাম ‘জয়’ রাখতে বলেছিলেন।
এমনটিই জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৪৯তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আব্বা সেদিন বলেছিলেন– তোর একটা ছেলে হবে, আর সেই ছেলে স্বাধীন দেশে হবে। তোর ছেলে স্বাধীন দেশের নাগরিক হবে, তার নাম রাখবি ‘জয়’।
শেখ হাসিনার বড় ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়। ছেলের নাম রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু নিজেই। সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলতেন– এই দেশ একদিন স্বাধীন হবে। একাত্তরের ২৩ মার্চ, আমি তখন সন্তানসম্ভবা। ওই সময় আব্বার হাত-পায়ের নখ আমি নিজের হাতে কেটে দিতাম। ওই দিন বাংলাদেশের পতাকা তোলা হলো। আমাদের বাসা ৩২ নম্বরেও পতাকা তোলা হলো। তিনি পতাকা তুলে এলেন, আমার কাছে বসলেন। আমি তার হাতের নখ কেটে দিচ্ছিলাম। আমাকে বললেন– তোর একটা ছেলে হবে, আর সেই ছেলে স্বাধীন দেশে হবে। ছেলের নাম রাখবি ‘জয়’। আমি দেখে যেতে পারব কিনা, জানি না। তবে তোর ছেলের নাম ‘জয়’ রাখবি। আমি আব্বার সঙ্গে সবসময় একটু বেশি কথা বলতাম। আমি বললাম, মেয়ে হলে নাম কী হবে? মেয়ের নাম দেন। তিনি মেয়ের নাম খুঁজতে গেলেন। খুঁজেটুজে পছন্দ হলো না। বললেন– না, তোর ছেলেই হবে। তুই ছেলের নাম ‘জয়’ রাখবি। সে স্বাধীন দেশের নাগরিক হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মুক্তি পায় ১৬ ডিসেম্বর। আর আমরা মুক্তি পেয়েছিলাম ১৭ ডিসেম্বর। কারণ আমার আব্বাকে স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এর পর আমার মা, রাসেল, জামাল, রেহানা আমি গ্রেফতার হই। জামাল গেরিলা কায়দায় পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
উত্তাল সেসব দিনের কথা স্মরণ করতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বলেন, ওই সময় আমরা যে বাড়িতে অবরুদ্ধ ছিলাম, সেখানে ছিল পাকিস্তানি পতাকা। আমরা মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা সেই পতাকা নামিয়ে এনে পায়ে দলে আগুন লাগিয়ে দেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কার্যনির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবিরও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সভা যৌথভাবে পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।