স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন শনিবার: শীর্ষ দুই পদে আলোচনায় এক ডজন নেতা
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৪:৩৬ পিএম
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন শনিবার। দীর্ঘদিন পর সংগঠনটিতে আসছে নতুন নেতৃত্ব। শীর্ষ পদ পেতে বেশ কয়েকজন নেতা জোরালো লবিং তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদের দৌঁড়ে এক ডজন নেতা এগিয়ে আছেন। তাদের মধ্য থেকেই দুজনকে বসানো হবে শীর্ষ দুই পদে।
সম্মেলনের তারিখ ঘোষণায় দীর্ঘদিন পর প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগে। নতুন কমিটিতে স্থান পেতে বিভিন্ন পর্যায়ে পদপ্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। পছন্দের পদ পেতে তদবির করছেন দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে। প্রতিদিনই দলটির বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমণ্ডির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকে।
সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর ২৩ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এর একদিন পর সংগঠন ও সম্মেলনের সব কার্যক্রম থেকে সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথকেও বিরত থাকার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
ক্যাসিনো অভিযান শুরু হলে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে মোল্লা মো. আবু কাওছারের বিরুদ্ধে। আর নিজ নির্বাচনী এলাকায় (বরিশাল-৪) অন্তর্কোন্দলসহ স্বেচ্ছাসবক লীগে নানা অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে পংকজ দেবনাথকে।
সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের কারণে তাদের নতুন কমিটিতে স্থান হচ্ছে না- এমনটি নিশ্চিত করেছেন ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নীতিনির্ধারক। এমন খবরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশীরা।
কারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে আসবেন জানতে চাইলে সংগঠনটির প্রথম সভাপতি বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যারা সৎ, যাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে, সাহসী ও দুঃসময়ে সংগঠনের জন্য কাজ করেছে, তাদের খুঁজে বের করে নেতা নির্বাচিত করা হবে। যারা দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংগঠনের জন্য কাজ করছে, তাদের মাঝ থেকেই অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের সামনে আনা হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সংগঠনকে আরও গতিশীল করতে ত্যাগী ও দক্ষ নেতাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে চাইছেন।
এ অবস্থায় সংগঠনের বর্তমান নেতৃত্ব ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে যাদের গায়ে এখনও কলঙ্কের দাগ লাগেনি, এমন নেতাদেরই ওই দুটি পদে আনার সম্ভাবনা দেখছেন পদপ্রত্যাশীরাও। নানা কারণে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে ভালো ভূমিকা রয়েছে- এমন নেতারাই গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি পাবেন বলেও তাদের প্রত্যাশা।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে নেতৃত্বের দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন এক ডজন নেতা। সভাপতি পদে এগিয়ে আছেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ এবং আরেক সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি। এছাড়া সহসভাপতি মঈন উদ্দীন মঈন, আফজালুর রহমান বাবুর নামও সভাপতি পদে আলোচনায় আছে।
সাধারণ সম্পাদক পদে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মেজবাহ উদ্দিন সাচ্চুর নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া এ পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির চার সাংগঠনিক সম্পাদক- খায়রুল হাসান জুয়েল, শেখ সোহেল রানা টিপু, সাজ্জাদ শাকিব বাদশা ও আবদুল আলীম বেপারি।
টিপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সাজ্জাদ শাকিব বাদশা সাধারণ সম্পাদক।
এছাড়া সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ মো. নুরুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন, দফতর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ টুটুলের নামও আলোচনায় আছে।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও সভাপতি প্রার্থী নির্মল রঞ্জন গুহ যুগান্তরকে বলেন, সংগঠনের শুরু থেকেই আছি। দলের দুর্দিনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে রাজপথে ছিলাম। এখনও আছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আমাকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করেছেন। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালনের চেষ্টা করছি। তিনি আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন তাই পালন করব।
১৯৯৭ সালের তৎকালীন সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটি হয়। পরে ২০০২ সালে প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন বাহাউদ্দিন নাছিম, সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ।
সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হয়েছিল। ৩ বছরের কমিটি ৭ বছর পার করে দিয়েছে।