অসুস্থ খোকাকে দেশে ফেরাতে সরকারের সহযোগিতা চাইলেন ফখরুল
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৪:৪৩ এএম
গুরুতর অসুস্থ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা যেন দেশে ফিরে আসতে পারেন, এ বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, সাদেক হোসেন খোকা আমাদের ও তার বন্ধুদের বলেছেন যে, ‘দেশের মাটিতেই যেন আমার কবর হয়’।
রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। সাদেক হোসেন খোকার রোগমুক্তি কামনায় এ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, রোববার সকালে সাদেক হোসেন খোকার ছেলে আমাকে ফোন করে বলেছেন, তার বাবার ইচ্ছাটা সে পূরণ করতে চায়। তিনি যেন দেশে ফিরতে পারেন তার উদ্যোগ নিতে আমরা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, তিনি যেন সুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরতে পারেন, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি।’
খোকার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়া করি, সাদেক হোসেন খোকাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে দিয়ে আমাদের কাছে পাঠান। দোয়া করি আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য, যাকে কেন্দ্র করে আমাদের রাজনীতি গড়ে তুলেছি। তিনি আমাদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, স্বৈরাচার থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন। তিনি যেন সুস্থ ও মুক্ত হয়ে আমাদের নেতৃত্ব দিতে পারেন।’
খোকা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষ ঢাকা মহানগর শুধু নয়, সারাদেশে যারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, তাদের প্রিয় মানুষ। যিনি আমাদের ঢাকা মহানগরের সব নেতাকর্মীর কাছে সত্যিকার অর্থে একজন দরদী মানুষ। এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যে তাদের প্রয়োজনে তিনি এগিয়ে আসেননি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যখন আমরা স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করছি, তখন সাদেক হোসেন খোকাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে দেশের বাইরে রাখা হয়েছে। তিনি ক্যানসার রোগে ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। আমি কয়েকবার তার সঙ্গে নিউইয়র্কে দেখা করেছি। প্রতিবারই তিনি আমাকে বলেছেন, যদি অসুস্থ না হতাম, তাহলে আমি দেশে গিয়ে জেলে যেতাম, মানুষের সঙ্গে থাকতাম।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের যাতাকলে পড়ে শুধু সাদেক হোসেন খোকা নন, আমাদের অনেক মানুষ এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং অনেকেই এখন শেষ পর্যায় চলে এসেছেন। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও শাজাহান সিরাজ সাহেব অত্যন্ত অসুস্থ। আমাদের যারা বয়স্ক মানুষ আছেন, তারা এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন দেশের এই অবস্থার কারণে।’
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন— ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু, সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ভিপি জয়নাল আবেদীন, মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ।
সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
খোকাকে দেখতে ছুটে গেছেন তার ছেলে বিএনপির বৈদেশিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। বাবার জন্য দোয়া কামনা করে তিনি বলেছেন, ‘বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থা পরিবর্তনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকরা। তারা খোকার সব চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছেন।
খোকার জীবনের শেষ ইচ্ছানুযায়ী অন্তিম সময়ে তাকে দেশে নেয়াও পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। পাসপোর্ট না থাকায় দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে কী হবে, এ নিয়ে স্বজনরা বিভ্রান্তিতে আছেন।
ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে সপরিবারে নিউইয়র্ক চলে যান সাদেক হোসেন খোকা। তার পর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে একটি বাসায় দীর্ঘদিন ধরে থাকছিলেন বিএনপির এ নেতা।
ভিজিট ভিসার নিয়ম অনুযায়ী, ৬ মাস পর পর যাওয়া-আসা করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বৈধ রাখার নিয়ম। ২০১৭ সালে খোকা ও তার স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তারা নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে কনস্যুলেট থেকে কোনো সদুত্তর দেয়া হয়নি।
হাসপাতালে খোকার পাশে আগে থেকেই আছেন তাঁর স্ত্রী ইসমত হোসেন, মেয়ে সারিকা সাদেক, ছেলে ইশফাক হোসেন। বাবার সংকটাপন্ন অবস্থার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে তার বড় ছেলে ইশরাক হোসেনও নিউইয়র্কে ছুটে গেছেন।
বাবার সবশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ইশরাক হোসেন জানান, পুরো ফুসফুসে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে। অক্সিজেন দিয়ে তার বাবাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। লোকজন এলে কাউকে কখনো কখনো তিনি চিনতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে। গত কয়েক দিন থেকে তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।
ইশরাক হোসেন বলেন, বড় হতাশা আর বিভ্রান্তির মধ্যে আছি। আব্বু-আম্মু দুজনেরই পাসপোর্ট নেই। কী করব, তাও বুঝে উঠতে পারছি না।
২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন খোকা। ২৯ নভেম্বর ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ১৪ মে মাসে সাদেক হোসেন খোকা চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যান। সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন। এ সময়কালে দেশে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা হয়। এর কয়েকটিতে তাকে সাজাও দেয়া হয়েছে।