বিতর্কিতদের জায়গা হবে না কমিটিতে, আলোচনায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ১০:২৪ এএম
আওয়ামী লীগের চার সহযোগী সংগঠন
দীর্ঘদিন পর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন- আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম জাতীয় শ্রমিক লীগে। নতুন কমিটিতে স্থান পেতে বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। তদবির করছেন নীতিনির্ধারকদের কাছে।
প্রতিদিনই দলটির বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমণ্ডির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত। কিন্তু এ চার সংগঠনের হাল কে ধরতে যাচ্ছেন- তা এখন পর্যন্ত কোনো পর্যায়ের নেতারা তেমন কোনো আভাস দিতে পারছেন না।
সেটি জানতে এ মুহূর্তে সবার দৃষ্টি দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে। এ ব্যাপারে তিনি চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ নানা মাধ্যমে আদ্যোপান্ত খোঁজ নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট নেতাদের। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
তারা আরও জানান, তারুণ্যনির্ভর, ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব চাচ্ছে দলের হাইকমান্ড। ফলে এই চার সংগঠনের শীর্ষ পদসহ আগামী কমিটি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন টেন্ডার ও চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতরা।
পাশাপাশি অন্য দল থেকে এসে সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে যারা বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছেন- এমন বিতর্কিত নেতাদেরও জায়গা হবে না নতুন কমিটিতে। তাদের পরিবর্তে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
বিশেষ করে যুবলীগের শীর্ষ পদে এমন নেতাকেও দেখা যেতে পারে, যিনি সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। পাশাপাশি এই সংগঠনে নতুন নেতাদের ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়টিও বিবেচনা করা হতে পারে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ত্যাগী ও যোগ্য ব্যক্তিদেরই এবার সুযোগ দেয়া হবে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই, যাদের বয়স ৫০-এর বেশি নয়, যারা চাঁদাবাজি, ক্যাসিনোর মতো অবৈধ আয়ের সঙ্গে যুক্ত নন- তারাই কমিটিতে জায়গা পাবেন।
তিনি আরও বলেন, কে কার আত্মীয়, কে কোন বড় নেতার কাছের লোক, সেগুলো বিবেচনা করা হবে না। তিন বছর পরপর এই কাউন্সিল হওয়ার কথা। তাতে নতুন নেতৃত্ব আসে।
যারা খারাপ তারাও ভয় পায় যে, আমরা হয়তো আর আগামীতে হতে পারব না। সেজন্য নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) এবার সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুর্নীতির বিপক্ষে সঠিক নেতৃত্বের পক্ষে এটা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।
জানা যায়, ছাত্রলীগের নেতারা রাজনীতির পরের ধাপে মূলত আওয়ামী যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। কিন্তু এই দুটি সংগঠনে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রলীগের অনেক পরীক্ষিত নেতা এসব সংগঠনে ঢুকতে পারেননি।
অল্প কিছু নেতা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপকমিটির সদস্য হলেও বাকি অনেকেরই পরিচয় এখনও কেবল সাবেক ছাত্রনেতা। ফলে এবারের সম্মেলনে শীর্ষ পদ ছাড়াও এই দুই সংগঠনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে ছাত্রলীগের পরীক্ষিত নেতারাই জায়গা পেতে যাচ্ছেন।
এছাড়া কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগে সংশ্লিষ্ট ও পরিচ্ছন্ন নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হবে এবারের সম্মেলনে।
প্রসঙ্গত, ৬ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ২৩ নভেম্বর যুবলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১২ সালের ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ১৪ জুলাই যুবলীগ এবং ১৯ জুলাই কৃষক লীগের সম্মেলন হয়।
তিন বছর মেয়াদি এই তিন সংগঠনের মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন বছরেরও বেশি সময় আগে। এছাড়া ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন হয়। দুই বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চার বছরের বেশি সময় আগে।
আওয়ামী যুবলীগ : শুদ্ধি অভিযানের মতো বড় ধাক্কার পর কেমন হবে যুবলীগের কমিটি- সেই আলোচনা এখন সর্বত্র। ক্যাসিনো-কাণ্ডে আড়ালে চলে গেছেন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি আর যুবলীগের নেতৃত্বে থাকতে পারছেন না বলে জোর আলোচনা রয়েছে।
এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদেও আসতে পারে নতুন মুখ। যুবলীগের সাবেক নেতাদের চাওয়া- তরুণ, যুববান্ধব ও সৎ নেতৃত্ব। আর বর্তমানরা চান- ছাত্র ও যুব রাজনীতির অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ কর্মীবান্ধব, গতিশীল ও সহজপ্রাপ্য কাউকে।
এদিকে ২৩ নভেম্বরের সপ্তম কংগ্রেসকে সামনে রেখে শীর্ষ দুই পদ পেতে অনেকেই তৎপর। খোঁজ নিয়ে ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে অনেকেই আলোচনায় আছেন।
চেয়ারম্যান হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও তার ছোট ভাই ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বর্তমান কমিটির সদস্য শেখ ফজলে ফাহিম (শেখ সেলিমের ছেলে), যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য- শহীদ সেরনিয়াবাত, ফারুক হোসেন, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন ও ডা. মোখলেছুর রহমান হিরু। আর সাধারণ সম্পাদক পদে যারা আলোচনায় আছেন, তারা হলেন- বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন, অর্থ সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হালদার, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, সহসম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুজিবুর রহমান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমরা চাই- যোগ্য স্বচ্ছ ও পরিছন্ন ব্যক্তিরা নেতৃত্বে আসুক। সে ক্ষেত্রে নবীন ও অভিজ্ঞদের সমন্বয় থাকলে সংগঠন সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যায়।
প্রেসিডিয়ামের আরেক সদস্য ডা. মোখলেছুর রহমান হিরু বলেন, সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেছি। নেত্রী যদি দায়িত্ব দেন তাহলে আগামীতেও স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করব। মহিউদ্দিন আহমেদ মহি বলেন, আমরা চাই- যুবলীগের নেতৃত্বে যোগ্যরা আসুক।
এ ছাড়া যুবলীগকে ঢেলে সাজানো এবং তরুণদের নেতৃত্বে আনার সিদ্ধান্ত হলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকে শীর্ষ পদে জায়গা পেতে পারেন।
সে ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন- ইসহাক আলী পান্না, বাহাদুর ব্যাপারী, অজয় কর খোকন, নজরুল ইসলাম বাবু, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের মধ্য থেকে যে কেউ যুবলীগের মূল নেতৃত্বে আসতে পারেন।
জানতে চাইলে ইসহাক আলী পান্না যুগান্তরকে বলেন, আমি কোনো প্রার্থী না। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার কর্মী। তিনি যদি কোনো সাংগঠনিক পদে আমাকে দায়িত্ব পালন করতে দেন তাহলে আমি সেটাই করব।
অন্যান্য সময় কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যুবলীগের সম্মেলন হতো। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মহানগর শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠানের পক্ষে নয় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড; কারণ সম্প্রতি ক্যাসিনো কারবারের দায়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হয়েছেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ অনেকেই।
এদিকে যুবলীগের সম্মেলনের আগে এবার আলোচনায় এসেছে বয়সসীমা বেঁধে দেয়ার বিষয়টি। যদিও এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এই বয়সসীমার ওপর নির্ভর করবে আগামী কমিটিতে কারা নেতৃত্ব দেবেন। বর্তমান কমিটির দক্ষ ও ত্যাগী নেতাদের প্রায় সবারই বয়স ৫০-৬০ বছরের মধ্যে। বয়সসীমা ৬০ বছরের মধ্যে হলে বর্তমান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসার সুযোগ পাবেন।
আর যদি বয়সসীমা ৪৫ থেকে ৫০ বছর বেঁধে দেয়া হয়, তবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ভাগ্য খুলে যাবে। সে ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্য থেকে যুবলীগের চেয়ারম্যান কিংবা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ : ১৯৯৭ সালের তৎকালীন সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটি হয়। পরে ২০০২ সালে প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন বাহাউদ্দিন নাছিম, সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ।
সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হয়েছিল। মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটিই এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
আগামী ১৬ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলন ঘিরে পদপ্রত্যাশীরা তৎপর।
কেন্দ্রীয় ও ঢাকার দুই শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে লড়াইয়ে অন্তত এক ডজনেরও বেশি নেতা রয়েছেন বলে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান চার সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, শেখ সোহেল রানা টিপু, সাজ্জাদ শাকিব বাদশা ও আবদুল আলীম বেপারী রয়েছেন কেন্দ্রীয় শীর্ষ পদের লড়াইয়ে।
এর মধ্যে টিপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সাজ্জাদ শাকিব বাদশা সাধারণ সম্পাদক। চারজনই বিএনপি জামায়াত জোট ও এক এগারো সরকারের আমলে ছাত্রলীগকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এছাড়া কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সাচ্চু, সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, দফতর সম্পাদক সালে মোহাম্মদ টুটুল কেন্দ্রীয় পদের লড়াইয়ে আছেন।
বর্তমান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথের পুনরায় শীর্ষ পদে থাকতে কোনো আপত্তি নেই।
জানতে চাইলে সোহেল রানা টিপু যুগান্তরকে বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন তাদেরই নেতৃত্বে আসা দরকার। আমরাও চাই- নেতৃত্ব পাওয়ার প্রধান মানদণ্ড হোক ক্লিন ইমেজ, ত্যাগী মনোভাব, সাংগঠনিক দক্ষতা।
খায়রুল হাসান জুয়েল বলেন- সততা, স্বচ্ছতা, কমিটমেন্ট এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে দলের জন্য সব সময় নিয়োজিত রেখেছি। ১-১১ এর সময় এক বছর জেল খেটেছি। তবে আমি মনে করি নেতৃত্বে যেই আসুক, তার যেন অবশ্যই সততা, স্বচ্ছতা, কনট্রিবিউশন এবং কমিটমেন্ট থাকে।
জানতে চাইলে মেজবাহ উদ্দিন সাচ্চু বলেন, যারা রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন করেছেন, তারা নেতৃত্ব আসুক। এতে সংগঠন যেমন শক্ত হবে; তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতও শক্তিশালী হবে। সালেহ মোহাম্মদ টুটুল বলেন, আমরা চাই ত্যাগী, স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতারা নেতৃত্বে আসুক।
সম্প্রতি রাজধানীর ক্যাসিনো কারবারে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনামে আসেন মোল্লা কাওছার। সে কারণে তাকে আর স্বেচ্ছাসেবক লীগে রাখা হবে না এমনটিই ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
অন্যদিকে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথও দীর্ঘদিন ধরে (২০০৩ সাল) সংগঠনটির নেতৃত্বে থাকায় সেখানেও এবার নতুন কাউকে জায়গা দেয়া হতে পারে।
এদিকে প্রায় এক যুগ পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলন আগামী ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে।
সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনোরুল ইসলাম বিপুল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসহাক মিয়া ও মোহাম্মদপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক বাবু।
এর মধ্যে ইসহাক ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি। বিপুল স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগরের নেতাদের মধ্যে বেশ সক্রিয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগে আলোচনায় রয়েছেন দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, দফতর সম্পাদক তৌফিকুল সোহাগ, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আনিসুর রহমান আনিস ও আনিসুজ্জামান রানা প্রমুখ।
কৃষক লীগ : কৃষক লীগে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে কৃষক বা কৃষিকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই অধিকাংশ নেতার। শুধু তাই নয়, বর্তমান কমিটি গত সাত বছরে কৃষকদের নিয়ে একটি কর্মসূচিও হাতে নেয়নি।
অন্যদিকে সারা দেশের জেলা-উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে কমিটিও করতে পারেননি কৃষক লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাই আগামী ৬ নভেম্বর কৃষক লীগের সম্মেলনে কৃষি কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও যোগ্যরা শীর্ষ পদে জায়গা পাবেন বলে সবার প্রত্যাশা।
এদিকে সম্মেলনকে সামনে রেখে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমণ্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে নেতাকমীদের ভিড় বেড়েছে। শীর্ষ দুই পদে আলোচনায় রয়েছেন অনেকে।
তার মধ্যে সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু, কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা, শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. হারুনুর রশীদ হাওলাদারও সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সমীর চন্দ। এছাড়া সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিল্পব, বিশ্বনাথ সরকার বিটু, আবুল হোসেনও পদপ্রত্যাশা করছেন।
খান আলতাফ হোসেন ভুলু যুগান্তরকে বলেন, আমি কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের মানুষের কথা ভেবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় রাজনীতি করেছি। রাজনীতি করতে গিয়ে স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে জেলজুলুম সহ্য করেছি। বর্তমানে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আমি মনে করি, নেত্রী জানেন আমাকে কোন পদে বসানো উচিত। কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা বলেন, শিক্ষাজীবনে আমি কৃতী ছাত্র ছিলাম। মেট্রিকে বোর্ড স্ট্যান্ডসহ মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার রেকর্ড আমার আছে।
তৃণমূল থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে করে আমি কৃষক লীগে এসেছি। আমার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডও কৃষিকেন্দ্রিক। সুতরাং আমি প্রত্যাশা করি নেত্রী আমাকে যোগ্য জায়গাতে দায়িত্ব দেবেন।
এদিকে বর্তমান সভাপতি মোতাহের হোসেন মোল্লা ও বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা আবারও একই আসনে বসতে চান। তবে তাদের পুনরায় শীর্ষ পদে থাকা সম্ভাবনা কম। দলের অনেক নেতাকর্মীই তাকে আর সংগঠনে দেখতে চান না।
কারণ বর্তমান কমিটির সময়ে তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সফল বলতে পারছেন না কেউই।
জাতীয় শ্রমিক লীগ : ১৯৬৯ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিষ্ঠা লাভ করে জাতীয় শ্রমিক লীগ। ২০১২ সালের সর্বশেষ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক নেতা শুকুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন জনতা ব্যাংক ট্রেড ইউনিয়নের নেতা সিরাজুল ইসলাম। এই সময়ে ৪৫টি সাংগঠনিক জেলার কমিটি করা হয়েছে।
আগামী ৯ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন সামনে রেখে মাঠে নেমেছেন পদপ্রত্যাশীরা। তাদের মধ্যে সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান আকন্দ।
তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগ ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের শীর্ষ পদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়া শীর্ষ পদের দৌড়ে আছেন শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির। জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান আকন্দ যুগান্তরকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন শ্রমিক লীগের সঙ্গে আছি।
দীর্ঘদিন মহানগরের নেতৃত্ব দিয়েছি। কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন সামনে। আমি চাই অভিজ্ঞ ও যোগ্যরা নেতৃত্বে আসুক। হুমায়ন কবির বলেন, নেত্রীর কর্মী হিসেবে আছি। তিনি যে পদে দেবেন সেখানেই কাজ করতে চাই।
এছাড়া শ্রমিক লীগের বর্তমান কমিটির সিরাজুল ইসলাম এবার সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন।