কূটনীতিকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বৈঠক: গুরুত্ব পায় খালেদা জিয়া ও ব্যারিস্টার মইনুল ইস্যু
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৩:০৩ এএম
লম্বা বিরতি দিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে হঠাৎ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের গুলশানের বাসায় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে এ বৈঠক হয়। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে এ বৈঠক শুরু হয়। আর শেষ হয় দুপুর ১২টার আগেই।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক ইস্যুর পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জেলে থাকা ও ব্যারিস্টা মইনুল ইসলামের গ্রেফতারের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বৈঠকের বিষয়ে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে কিছু জানানো হয়নি। তবে বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির কোনো নেতা। মির্জা ফখরুল মঈন খানের বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা গাড়িতে ওঠে যান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।
পরে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সাংবাদিকরা ঘিরে ধরেন। তিনিও বৈঠকের বিষয়ে কোনো কিছু জানাতে রাজি হননি।
তবে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
সুব্রত চৌধুরী বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন বারবার আটকে দেয়ার বিষয়েও কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া জামিন নিতে গিয়ে নিম্নআদালতের রায়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে পুনরায় গ্রেফতারের বিষয় নিয়েও কূটনীতিকের সঙ্গে কথা হয়েছে।
আপনাদের কথা শুনে কূটনীতিকরা কী বলেছেন, জানতে চাইলে সুব্রত চৌধুরী বলেন, তারা তো এভাবে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেন না। তারা নোট নেন। তবে দেশের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তারাও সব কিছু দেখছেন।
আর কী বিষয়ে কথা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা কূটনীতিকদের বলেছি, দেশে গণতন্ত্র নেই। ভোট ডাকাতির সংসদ গঠনের মধ্য দিয়ে যত রকমের অনিয়ম সবই হচ্ছে। একটা লুটপাটের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়াবাড়ি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় একটি দেশ চলতে পারে না। এর থেকে মুক্ত হতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন প্রয়োজন। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ গঠিত হলেই দেশে শান্তি ফিরে আসবে।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন জানান, কূটনীতিকদের সঙ্গে সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুতে কথা হয়েছে। দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের কলংকিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে ‘অবৈধ’ সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে, মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়টিই কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে। এই সংকট উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা আ স ম আবদুর রব বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, মঈন খানের বাসায় চায়ের আড্ডায় এসেছিলাম। এখানে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। অনির্বাচিত সরকারের কারণে দেশে যে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেটিই কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত, কানাডার উপরাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাসদ সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।