বাবার কবরে মাটি দিতে দেয়নি এরিককে: বিদিশা

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০১৯, ০৪:৩০ পিএম

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবরে ছোট ছেলে এরিককে এক মুঠো মাটি দেয়ার সুযোগও দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তার (এরশাদ) সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ।
বুধবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেইজে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এই অভিযোগ করেন তিনি। বিদিশা এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এরশাদ তার ছেলে এরিককে পল্লী নিবাস দিয়ে গেছেন এমন দাবি করে বিদিশা ফেসবুকে লিখেন, এই পল্লী নিবাস তার আদরের ছেলে এরিককে দিয়ে গেছেন তার বাবা। কিন্তু এক মুঠো মাটি ও তার বাবার কবরে দিতে দেয়নি এরিককে।
স্ট্যাটাসে তিনি রংপুরের মানুষের কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকার কথাও জানান।
যুগান্তরের পাঠকদের জন্য বিদিশা এরশাদের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘চির নিদ্রায় শায়িত হলেন পল্লীবন্ধু পল্লী নিবাসে। যে পল্লী নিবাস তার আদরের ছেলে এরিককে দিয়ে গেছেন তার বাবা। কিন্তু এক মুঠো মাটিও তার বাবার কবরে দিতে দেয়নি এরিককে। রংপুরের মানুষের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা থাকবে সারা জীবন।’
এর আগে মঙ্গলবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিদিশা লিখেছেন, ছেলে এরিকের কান্নায় পাথর গলে যায়। কিন্তু রাজনীতিবিদদের হৃদয় গলে না।
মূলত বাবার মৃত্যুর শোকে শোকাহত এরিকের সঙ্গে এই কঠিন সময় মা বিদিশাকে দেখা করতে না দেয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি এরশাদকে শেষ দেখা দেখতে তাকে বাধা দেয়ার অভিযোগও তুলেছেন বিদিশা।
স্ট্যাটাসে রংপুরে এরশাদের দাফনের বিষয়ে সেখানকার নেতাকর্মীদের দাবির প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেন বিদিশা। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় ফেসবুকে দেয়া বিদিশার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
‘তাই যেন হয়, আমিও তাই চাই। লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের মতো রংপুরের মাটি যেন হয় এরশাদের শেষ ঠিকানা। সহধর্মিনী থাকতে বহুবার পল্লী নিবাসে বারান্দায় ছেলে এরিককে কোলে বসিয়ে উনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার ছোট, দেখ আমার মৃত্যুও যেন আমার ছেলের কাছে থেকে দূরে না রাখে। আমার কবর আমি এই পল্লী নিবাসে চাই। রংপুরের মানুষের ভালোবাসা প্রতিদান আমি দিতে পারিনি আজও। রংপুরের মানুষ আমার কবরে এসে দোয়া করবে, এটাই আমার চাওয়া।’
এর আগে সোমবার প্রয়াত এরশাদ এবং ছেলে এরিক এরশাদকে নিয়ে এক আবেগঘণ স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বিদিশা। সেখানে দেশে ফিরে সাবেক স্বামীর মরদেহ শেষবার দেখতে না পাওয়া এবং ছেলে এরিক এরশাদকে নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তোলেন তিনি।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদিশার দেয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘বাবার মৃত্যুতে আমার ছেলে এরিকের কান্নায় দেশবাসীও কেঁদেছে। আমি পাগলের মতো ছুটে চলে এসেছি দেশে। কিন্তু দেশে এসেও বাধার শিকার আমি। কোথায় স্বামীর লাশ কোথায় ছেলে? আমার সাথে এরিককে কথাও বলতে দিচ্ছে না। দেখা করা তো দূরের কথা। এমনিতেই আমার ছেলে প্রতিবন্ধী। এই সময় যেখানে মাকে বেশি প্রয়োজন, তখন আমার ছেলেকে নিয়েও রাজনীতি। শেষ পর্যন্ত মা হিসেবে ছেলের জন্য যদি জীবন দিতে হয় আমি তাই করব।’
এর আগে রোববার স্বামীর মৃত্যু নিয়ে আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দেন বিদিশা। সাবেক স্বামীর মৃত্যুতে আক্ষেপ জানিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে বার্তা দিয়েছেন বিদিশা। সেখানে প্রোফাইল ছবিতে এতদিন থাকা এরশাদ ও তাদের ছেলে এরিকের ছবি সরিয়ে বসিয়েছেন কালো ব্যাজ।
বিদিশা ফেসবুকে লিখেন- ‘এ জন্মে আর দেখা হলো না। আমিও আজমির শরিফ আসলাম, আর তুমিও চলে গেলে। এত কষ্ট পাওয়ার থেকে মনে হয় এই ভালো ছিল। আবার দেখা হবে হয়তো অন্য এক দুনিয়াতে, যেখানে থাকবে না কোনো রাজনীতি।’
এর আগে এরশাদ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বিদিশা।
প্রসঙ্গত রোববার সকাল পৌনে ৮টায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন। রোববার বাদ জোহর ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় এবং বাদ আসর বায়তুল মোকাররম মসজিদে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে মঙ্গলবার তাকে পল্লী নিবাসে সমাহিত করা হয়।