Logo
Logo
×

রাজনীতি

এরশাদের শাসনে মুক্তিযোদ্ধাদের যত সুযোগ-সুবিধা

Icon

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০১৯, ০২:৪৮ এএম

এরশাদের শাসনে মুক্তিযোদ্ধাদের যত সুযোগ-সুবিধা

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ফাইল ছবি

মুক্তিযোদ্ধাদের অস্তিত্ব যখন নিজস্ব স্বাধীন মাটিতে বিপন্ন তখন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অভয় বাণী নিয়ে তাদের অভিভাবকরূপে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনিই প্রথম উচ্চারণ করেন ‘মুক্তিযোদ্ধারা এ জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান’।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও লাখো শহীদের স্মৃতি সংবলিত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের অসমাপ্ত কাজসমূহ সমাপ্ত এবং তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন।

তিনি মুক্তিযুদ্ধের মরণোত্তর সর্বোচ্চ বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত সাতজন শহীদের প্রত্যেক পরিবারবর্গের জন্য একটি করে সুসজ্জিত পাকা আবাসিক বাড়ি তৈরি করে দেন। তার আমলে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত সাতজন শহীদের নামে বিশেষ স্মরণীয় ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করা হয়।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালিত ২২টি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের চিরস্থায়ী মালিকানা বিনামূল্যে কল্যাণ ট্রাস্টকে প্রদান করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের প্রধান কার্যালয়ের জন্য নিজস্ব কোনো ভবন না থাকায় মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় একটি বহুতল ভবন কল্যাণ ট্রাস্টকে বিনা মূল্যে প্রদান করা হয়, যার নামকরণ করা হয়েছে ‘স্বাধীনতা ভবন’। 

এরশাদ শহীদ সোহারাওয়ার্দী হাসপাতালের নিকট যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্থায়ীভাবে ব্যবহৃত দুটি পাকা ভবনের মালিকানা স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করে দেন।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন ও আবাসগৃহের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ফান্ড কার্যকরভাবে পুনর্গঠন করা হয় এরশাদের আমলেই। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করমুক্ত ঘোষণা করেন।

সারাদেশে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, দুস্থ ও নিঃস্ব মুক্তিযোদ্ধাসহ সব মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে সংগঠিত করে তাদের অসুবিধাসমূহ দূরীকরণসহ পুনর্বাসনের জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর ফলে বাংলাদেশের সর্বত্র মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নিজস্ব শাখা ও কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৬৪টি জেলা হেডকোয়ার্টারে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের জন্য মাত্র ১০১ টাকা টোকেন মূল্যে ৫ কাঠা করে জমি বরাদ্দ করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিটি জেলা হেডকোয়ার্টারের কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য প্রথম কিস্তি হিসেবে এক কোটি টাকা প্রদান করা হয়।

পল্লীবন্ধু এরশাদ সরকারের আমলে তালিকাভুক্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা পূর্বের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয় এবং সরকারি তহবিল থেকেও বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করা হয়।

বিগত সরকারসমূহের আমলে ষড়যন্ত্রমূলক মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় শাস্তিপ্রাপ্ত ও আটককৃত প্রায় এক হাজার মুক্তিযোদ্ধার শাস্তি হ্রাস ও সম্পূর্ণ মওকুফ করে মুক্তি দেয়া হয়। এদের মধ্যে অনেক ফাঁসি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তেরও শাস্তি মওকুফ করা হয়।

প্রকৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি বাস, ট্রেন ও বিমানে বিনামূল্যে ভ্রমণের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঐতিহাসিক অবদানের জন্য তাদের স্বীকৃত ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সব মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত করা হয়।

পল্লীবন্ধু এইচ এম এরশাদই মুক্তিযোদ্ধাদের একক ও দলবদ্ধভাবে অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য সহস্রাধিক ছোটবড় প্রকল্প করেছিলেন।

তার শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশাসনিক ও সামাজিক কার্যক্রমে বিশেষভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলা পরিষদে একজন করে মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনয়ন দেয়া হয় এবং প্রতিটি ইউনিয়নে, পৌরসভাসহ অন্যান্য পরিষদে ও স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একজন করে প্রতিনিধি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পল্লীবন্ধু এরশাদের শাসনামলে প্রতিবছর পবিত্র হজ পালনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে ৩ জন করে মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি হজ ডেলিগেশন টিমে সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যানকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে মন্ত্রীর মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করার বিধান চালু করা হয় পল্লীবন্ধু এরশাদের আমলেই।

মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার উৎস ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অমর শহীদদের স্মরণে স্থাপিত শহীদ স্মৃতিসৌধটিকে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে সুসজ্জিতকরণসহ সমুদয় কাজ সম্পূর্ণ করেন। ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রত্যেককে ১টি করে পাকাবাড়ি নির্মাণ করে দেন এইচ এম এরশাদ।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মনে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে তিনি প্রতিদিন বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারের পূর্বে জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ প্রদর্শন ও মুক্তিযুদ্ধের গান প্রচারের ব্যবস্থা করেন, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবাইকে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মুক্তিযুদ্ধের সময় মেহেরপুরের আম্রকাননে প্রতিষ্ঠিত মুজিবনগরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনিই প্রথম ভ্রমণ করেন ও সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এম এ জি ওসমানী স্মরণে ঢাকায় ওসমানী উদ্যান, ওসমানী মিউজিয়াম, আন্তর্জাতিক মানের ওসমানী স্মৃতি মিলানায়তন তৈরি ও সিলেট বিমানবন্দরকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করা হয় এবং সিলেটে জে. ওসমানীর বাড়িটিকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এম এ জি ওসমানী স্মরণে বিশেষ ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করা হয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি অমর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সরকারি উদ্যোগে সহস্রাধিক রাস্তাঘাট ও ভবনের নামকরণ করা হয়। 

পল্লীবন্ধু এরশাদ মুক্তিযোদ্ধাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য ঢাকার ইস্কাটনে প্রয়োজনীয় জায়গাসহ একটি দ্বিতল ভবন স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করেন। পল্লীবন্ধু এরশাদের শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের বহুতল ভবনের জন্য কাকরাইলের নিকট একটি জমি টোকেন মূল্যে বরাদ্দ করা হয়।

পল্লীবন্ধু এরশাদের শাসনামলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি উদ্যোগে বিদেশে প্রেরণ করা হয়। বেকার মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান ও চাকরির ক্ষেত্রে ৩০% কোটা যথাযথ পালন করা কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

পল্লীবন্ধু এরশাদের শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ বছর থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। সহস্রাধিক ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি খাস জমি, পুকুর, জলাশয় ও পতিত জমি বরাদ্দ করা হয়। 

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘর বিশেষ ব্যবস্থায় সরকার নির্ধারিত স্বপ্ল মূল্যে দীর্ঘ মেয়াদে ২৫ কিস্তিতে বিক্রি করা হয় এরশাদের আমলে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্রীড়াচক্রের স্থায়ী কার্যালয়ের জন্য বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী উদ্যানে নিজস্ব ভবন ও জমি দান করা হয়।

উল্লেখ্য, এইচএম এরশাদ রোববার সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম