খালেদা জিয়ার জামিনে সরকারের হাত আছে কাদেরের কথায় প্রমাণিত: রিজভী
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০১৯, ০৩:৫৭ এএম
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী। ফাইল ছবি
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনে সরকারের হাত আছে, সেটি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায় প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি করেন।
রিজভী বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) উচ্চ আদালত কথিত মানহানির অভিযোগে করা বানোয়াট দুই মামলায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন। কারণ এ দুটি ভুয়া মামলা সরকারি দলের যে ব্যক্তি করেছেন, তিনি মামলাবাজ ও মানুষের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা করেই তিনি আনন্দ পান। তাকে সবাই চেনে ও জানে। যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে অসত্য এবং মামলারই যোগ্য না। তা কেবল প্রতিহিংসামূলক। তার প্রমাণ হলো- গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত জামিন দিলে সে ক্ষেত্রে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, কিছুদিন আগে লন্ডন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য আর ওবায়দুল কাদেরের এ কথায় বোঝা যায়, জামিনযোগ্য হলেও সরকারের বাধার কারণেই খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না। অর্থাৎ সরকার যদি খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে কোনো হস্তক্ষেপ না করে, তা হলে খালেদা জিয়ার জামিন হবে এবং তিনি মুক্তি পাবেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে রিজভী বলেন, কালবিলম্ব না করে সামনে আরও দুটি বানোয়াট মামলায় দেশনেত্রীর জামিন নিশ্চিত হলে উচ্চতর আদালতের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে। এ দুই মামলায় নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করে সরকার খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে। নিম্ন আদালতের সেই সাজার ওপর আপিল করা হলেও এখনও পর্যন্ত তাকে জামিন দেয়া হয়নি। আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা থাকলে বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া যেত না। আমরা আশা করব উচ্চতর আদালত সব চাপকে উপেক্ষা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন এবং জনগণের নেত্রী জনগণের মাঝে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা আরও আশা করব- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকার আর কোনো কারসাজি করবে না, বাধা দেবে না।
উপজেলা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে রিজভী বলেন, গতকাল অনুষ্ঠিত পঞ্চম ও শেষ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছে। ২০টি উপজেলার প্রায় সবখানে পুলিশের ভূমিকা ছিল দলীয় ক্যাডারের মতো। নৌকা প্রার্থী ছাড়া অন্য যারা প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন, তাদের ঠেকানোর জন্য মাঠে সক্রিয় ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাতে ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। নৌকার প্রতীকে ভোট না দিলে দেখে নেয়া হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়। এই আওয়ামী জবরদস্তিমূলক শাসন দীর্ঘায়িত হতে থাকলে নির্বাচন শব্দটি থাকলেও সুষ্ঠু শব্দটি পরলোকেই অবস্থান করবে। ভোটার থাকলেও ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। নির্বাচন কমিশন ভোট তামাশার রঙ্গমঞ্চে প্রধান অভিনেতা হিসেবেই ভূমিকা পালন করবে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোহেল তাজের ভাগ্নে ‘নিখোঁজ’ হওয়ার নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, দেশ আজ মগ দস্যু ও ঠগীদের অভয়ারণ্য। মানুষের জীবনযাপন ও বেঁচে থাকা নির্ভর করছে ঠগীদের ওপর। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো মানুষ অথবা যেকোনো পরিবারের যেকোনো সদস্য গুম হয়ে যেতে পারে। ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যদি কারও ন্যূনতম মনোমালিন্য হয়, তবে নাই হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশে এখন কন্ট্রাক্ট গুম চলছে। প্রভাবশালীরা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যারা গুমের দায়িত্বে আছে, তাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করে প্রতিপক্ষকে অদৃশ্য করাচ্ছেন। বর্তমান সরকারেরই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাগ্নে ও মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাতির গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনা গোটা জাতিকে আতঙ্কিত ও শিহরিত করে তুলেছে। এমনিতেই দেশব্যাপী গুম হওয়া পরিবারের হাহাকারে বাতাস ক্রমশ ভারী হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরই যদি গুমের ন্যায় করুণ পরিণতির শিকার হতে হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপদে বেঁচে থাকার আর কোনো অবলম্বনই থাকবে না। কত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও রাস্তায় নামতে হয়। দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনকে আওয়ামী বাক্সে বন্দি করে রাখার জন্যই গুমকে জাতীয় জীবনের অংশ করা হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে গুম করার পর এখন ক্ষমতাসীনদের ভেতরেই যারা কিছুটা বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি আছেন, তাদের পরিজনরাও এখন গুমের শিকার হচ্ছেন।
বিএনপি নেতা হাসান মামুন ২০ ঘণ্টা নিরুদ্দেশ থাকার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, শনিবার বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান আল মামুনকে ২০ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর গুম করে রাখার পর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনা ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, সুমনের ধারাবাহিকতারই একটি নমুনা। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার প্রতি নিবিড় নিবিষ্ট ধ্যানে নিমগ্ন থাকার জন্যই বাংলাদেশ আজ গুম-খুনের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন, জবাবদিহি ও মানুষের মানবিক মর্যাদার বিরুদ্ধে তিনি নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছেন কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করে। তিনি গণতন্ত্র ও সংবিধানকে কেড়ে নিয়ে নিজের দখলে রাখার জন্য গুমকে সরকারি কর্মসূচিতে পরিণত করেছেন। শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গুমের চেতনায় আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।