জামায়াতে ইসলামী। ফাইল ছবি
নতুন দল গঠন করছেন জামায়াতের সংস্কারপন্থী নেতারা। এটিকে আপাতত তারা নতুন রাজনৈতিক দল নয় বরং ‘উদ্যোগ’ হিসেবে অভিহিত করতে চাইছেন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণাপত্র তুলে ধরা হবে।
এখনই তারা এ নতুন রাজনৈতিক দলটির নাম ঘোষণা দিচ্ছেন না। তবে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
এ কমিটির প্রধান হচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য (সদ্য বহিস্কৃত) মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি একসময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি কারা থাকবেন তাদের নাম গোপন রাখা হয়েছে। তবে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মজিবুর রহমান মঞ্জু যুগান্তরকে বলেন, এ উদ্যোগ ধর্মভিত্তিক নয়, এমনকি সুনির্দিষ্ট তত্ত্বের আদলে আদর্শভিত্তিকও নয়। সম্ভাব্য ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ হচ্ছে একদল আশাবাদী মানুষের উদ্যোগ ও তাদের ভাবনা।
এতে তুলে ধরা হবে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনার কথা। যারা এ কাফেলায় শরিক হতে চান, তাদের সংগঠিত করার কাজ শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ নামে উদ্যোগ শুরু হলেও রাজনৈতিক দলের নাম, লোগো-পরিচয় আরও পরে নির্ধারণ করা হবে। নতুন এ উদ্যোগের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবেন তিনি।
এ ঘোষণার পর আগামী তিন মাসের মধ্যে দলের গঠনতন্ত্র, ইশতেহার চূড়ান্ত করে রাজনীতিতে সোচ্চার হওয়ার পরিকল্পনা তাদের।
সংস্কারপন্থী নেতারা জানিয়েছেন, তাদের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ ইসলাম বা ধর্মভিত্তিক নয়। সাম্য ও মানবাধিকারকে বেশি গুরুত্ব দেবেন। প্রথমে একটি ‘সমন্বয় কমিটি’ করা হবে।
এ কমিটির সদস্যরা সারা দেশে সফর করে শিক্ষার্থী, নারীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের কাছে তাদের ভাবনা জানাবেন।
নতুন উদ্যোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনই তারা সরাসরি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেবেন না।
নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগে ইসলাম বা ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোকে অনুসরণ করা হবে না। সাম্য ও মানবাধিকারকে বেশি গুরুত্ব দেবেন তারা।
জামায়াতে সংস্কার নিয়ে ১৯৭৯ সাল থেকেই বিরোধ চলছে। ১৯৭৭ সালে ধর্মভিত্তিক দল গঠনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর জামায়াত নেতারা মাওলানা আবদুর রহিমের নেতৃত্বে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল) গঠন করেন।
স্বাধীনতা বিরোধিতাকারীদের অন্যতম নেতা গোলাম আযম দেশে ফিরে ১৯৭৯ সালে জামায়াত পুনরুজ্জীবিত করেন।
দলচ্যুত হন সংস্কারের দাবি করা আবদুর রহিম। সংস্কারের দাবিতে ১৯৮১ সালে জামায়াত-শিবিরে ফের অস্থিরতা দেখা দেয়।
তখন যারা সংস্কারের দাবি করেছিলেন তাদের দলছাড়া করা হয়। ২০০৭ সালে ফের জামায়াতে সংস্কারের দাবি ওঠে। ২০১০ সালে কামারুজ্জামান, আবদুর রাজ্জাক ও মীর কাসেম আলী সংস্কারের প্রস্তাব করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
তখনও সংস্কারের জন্য কমিটি হয়। তবে মতিউর রহমান নিজামীসহ রক্ষণশীল নেতাদের বিরোধিতায় সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে জামায়াত। এখনও অনড়।