ভোটাধিকার দাবিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় হানিফের পদযাত্রা!

বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:৩৩ পিএম

ভোটাধিকার দাবিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার পথে হানিফের পদযাত্রা। ছবি-যুগান্তর
জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং নির্বিঘ্ন ভোটের পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে ‘টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া’ পর্যন্ত এক হাজার চার কিলোমিটার একক পদযাত্রায় বের হয়েছেন মোহাম্মদ হানিফ ওরফে হানিফ বাংলাদেশি।
ফরোয়ার্ড পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হানিফ ১৪ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার জিরো পয়েন্ট থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। ১৯ দিনের মাথায় ৬৭০ কিলোমিটার পথ হেঁটে তিনি গতকাল সোমবার বিকালে বগুড়ায় এসে পৌঁছেছেন। বগুড়া শহরে আসার পর রাতে শহরের ঝাউতলা এলাকার একটি হোটেলে রাতযাপন করেন।
২০তম দিনে মঙ্গলবার সকাল ৭টায় হানিফ তেঁতুলিয়ার উদ্দেশে বগুড়া ছেড়েছেন। পথে পথে জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় ও লিফলেট বিলি করছেন।
নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার নিয়াজপুর ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের আবদুল মান্নান রেনু মিয়ার একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ হানিফ।
দেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করায় বন্ধুরা তাকে ‘হানিফ বাংলাদেশি’ বলে ডাকেন। বর্তমানে তিনি এ নামেই পরিচিত।
গত ১৯৯৯ সালে নোয়াখালীর বুলুয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এর পর চট্টগ্রাম ওমর গণি এমএস কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন। রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় লেখাপড়া ছেড়ে চট্টগ্রামের একটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানে কমিশন এজেন্টের কাজ নেন।
২০১৬ সালে ড. কামাল হোসেন ও আ ব ম মোস্তফা আমিনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার যুব শাখার আহ্বায়ক ছিলেন। বর্তমানে মোস্তফা আমিনের নেতৃত্বাধীন ফরোয়ার্ড পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এক সাক্ষাৎকারে হানিফ জানান, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার কারণেই ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্ত, অনেক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করি। মুক্তিযুদ্ধের আগে অন্য দেশের শাসকগোষ্ঠীর মাধ্যমে বাঙালি শাসিত ও শোষিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর এখন দেশীয় লুটেরাদের দ্বারা শোষিত ও ভোটাধিকার বঞ্চিত হচ্ছি।
তিনি বলেন, যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তারা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকতে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে।
হানিফ দাবি করেন, ভোটের প্রতি জনগণের আর আস্থা নেই। নির্বাচনে আগের মতো উৎসবমুখর পরিবেশ নেই। নির্বাচনব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। ৩০ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। নির্বাচনের নামে রাষ্ট্রের টাকা অপচয় হয়েছে। ৪ দফা উপজেলা নির্বাচনে জনগণ ভোটবিমুখ ছিলেন। ভোট না দিলেও সরকারদলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। এটি ভেবে অনেক জনগণ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাননি।
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের ৪৭ বছর পরও মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারছে না। সার্বজনীন ভোট উৎসব এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। স্বাধীন রাষ্ট্রে নির্বাচনের নামে আর প্রহসন চলতে পারে না। তাই ভোটের প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে এবং তাদের ভোটকেন্দ্রমুখী করতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে স্থায়ীভাবে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। সব নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে ভোটাররা আবার কেন্দ্রে ফিরবেন।
আর এ পরিবেশ সৃষ্টি করতেই তিনি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত এক হাজার চার কিলোমিটার একক পদযাত্রা করছেন বলে জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, তার এ কর্মসূচি সরকারবিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন নয়। নিজের উপলব্ধি থেকে কর্মস্থলে এক মাসের ছুটি নিয়ে গত ১৪ মার্চ বেলা ১০টায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার জিরো পয়েন্ট থেকে একক পদযাত্রা শুরু করেছেন।
তিনি জানান, এ কাজে তিনি পথে পথে মানুষের অনেক সমর্থন ও সাড়া পাচ্ছেন। তার এ কর্মসূচির খরচ নিজে ও বন্ধুদের সহযোগিতায় চলছে।
তিনি আশা করেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ১০ এপ্রিল তেঁতুলিয়া পৌঁছবেন।
হানিফ বাংলাদেশি তার আলোচিত কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, রাজধানীতে গণশৌচাগার স্থাপনের দাবিতে আন্দোলনে মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলেন। এর পর অনাকাঙ্ক্ষিত মানব ভ্রুণ হত্যা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে জনগণকে সচেতন করেছিলেন।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুবর্ণচরে গৃহবধূকে ধর্ষণের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। দেশে যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতেও তার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান হানিফ বাংলাদেশি।