সুলতান মনসুরের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যাবে বিএনপি
তারিকুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০১৯, ১০:৫৮ পিএম
বিএনপি। ফাইল ছবি
মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সুলতান মনসুর আহমেদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি।
ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়ে জোটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন তিনি।
দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ বিএনপির নামে। এই প্রতীক নিয়ে সুলতান মনসুর জয়ী হয়েছেন।
তাই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন তারা। এরই মধ্যে আইনগত দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। একই সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকেও চিঠি দেয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সুলতান মনসুর গণফোরাম থেকে জোটের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তার দল ইতিমধ্যে তাকে বহিষ্কার করেছে।
ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর বিএনপি থেকে চিঠি নিয়ে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন।
এখন আমাদের সিদ্ধান্তের বাইরে নিজের ইচ্ছায় শপথ নিয়ে তিনি সংসদে যোগ দিয়েছেন। তাই তার বিরুদ্ধে বিএনপিও যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে ‘দল কর্তৃক মনোনীত প্রার্থী’ লেখা রয়েছে, মার্কাটা লেখা নেই। তাই এটা নিয়ে আইনগত দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে।
বিএনপির একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতা ও আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করব। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে স্পষ্ট লেখা আছে। সুলতান মনসুরকে যেহেতু গণফোরাম বহিষ্কার করেছে সেহেতু তার সদস্যপদ থাকার কথা নয়।
কিন্তু এখন সরকার তো আইনের নানা ফাঁকফোকর দিয়ে তাকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করবে। যেহেতু তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, এখন স্পিকার কী সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা দেখতে হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা দলের সিনিয়র আইনজীবীরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে জ্যেষ্ঠ একাধিক আইনজীবী জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে অংশ নেয়নি। অংশ নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে।
সে নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসনে সুলতান মনসুর গণফোরামের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ার পর বৃহস্পতিবার ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরাম থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এখন তার সংসদ সদস্যপদ থাকবে কিনা তা ফয়সালা করতে জোট (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) ও তার দল (গণফোরাম) আদালতে যেতে পারে। বিএনপি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে কিনা তা বিশ্লেষণ করতে হবে।
বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী মুহাম্মদ খোরশেদ মিয়া আলম যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে আইনিভাবে বিএনপির কিছুই করার নেই। নির্বাচন কমিশন ঐক্যফ্রন্টকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়েছে। সেক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্টই এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেয়া না নেয়া সম্পর্কে সংবিধানে স্পস্ট করে কিছু বলা নেই। বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
তাই এটি সুরাহার জন্য শেষ পর্যন্ত তা আদালতে গড়াবে। সেক্ষেত্রে ফয়সালা হবে আদালতেই। সুপ্রিমকোর্টই একমাত্র সংবিধানের ব্যাখ্যা দিতে পারে বলে তারা মনে করেন।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর একাদশ সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের টিকিটে মনোনয়ন জমা দিলেও প্রতীকের জন্য চিঠি নেন বিএনপি থেকে। ফলে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন।
জোট ও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বৃহস্পতিবার সকালে শপথ নেয়ার পর বিকালে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু দলীয়?
কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাকে দলের প্রাথমিক পদ থেকে বহিষ্কার করেন। একই সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।