Logo
Logo
×

রাজনীতি

আলোচনায় ডা. জোবাইদা

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৩৪ পিএম

আলোচনায় ডা. জোবাইদা

ডা. জোবাইদা রহমান। ছবি: সংগৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় নির্বাচনী প্রস্তুতি ও গণসংযোগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে রাজপথের এ বিরোধী দল।

 

আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় বিএনপির এবারের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা অনেকটাই ভিন্ন। ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর থেকে সব নির্বাচনে সামনে থেকে বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

 

২০০১ সালের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে খালেদা জিয়াকে সহায়তা করেন তার বড় ছেলে তারেক রহমান।

 

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এর পর থেকে নানা আন্দোলন কর্মসূচি দিলেও রাজপথে দাঁড়াতেই পারেনি দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটি।

 

১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর এ মুহূর্তে সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করছে দলটি। কারণ দলের দুই শীর্ষ নেতা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অনেকটাই নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।

 

এই যখন অবস্থা, তখন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলে এলো। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

 

প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ বহু আগ থেকেই নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন জরিপের আলোকে প্রার্থীও প্রায় ঠিক করে ফেলেছে।

 

অথচ মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এখনও নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারেনি। গত রোববার তারা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। স্বভাবতই দেরিতে মাঠে নামায় প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বিএনপি।

 

বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুই মামলায় ১৭ বছর সাজা নিয়ে কারাবন্দি। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুর্নীতির একাধিক মামলায় দণ্ডিত হয়ে লন্ডনে অনেকটা নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন।

 

আদালত দণ্ড স্থগিত না করলে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না। এমতাবস্থায় জিয়া পরিবার থেকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কেউ এগিয়ে আসুক এমন চাওয়া তৃণমূলের।

 

সে ক্ষেত্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানকে বিএনপির নেতৃত্বে আসুক এমনটিই চাওয়া অনেকের।

 

জোবাইদার মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জিয়া পরিবারের কাউকে ক্ষমতায় আনলে ভোটারদের কাছে যেমন বার্তা দেয়া যাবে, দলের কর্মীরাও চাঙ্গা হবেন বলে মনে করছেন নেতারা। ভারতের বহুল প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

 

বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অমানিশায় থাকা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, বিএনপির শীর্ষ দুই নেতৃত্বের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যখন প্রশ্নবিদ্ধ, তখন জিয়া পরিবারের সদস্য ডা. জোবাইদা রহমানই পারেন দলের হাল ধরতে। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জোবাইদা রাজনীতিতে এলে চাঙা হবেন দলের নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক সংকটে দলীয় নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে সঠিক দিশা পাবেন।

 

আলোচনায় এমনও আছে-খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্বাচন করতে না পারলে জোবাইদা রহমান নির্বাচনে অংশ নেবেন। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া যে তিন আসনে (বগুড়ার দুটি ও ফেনীর একটি আসন) মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সেই আসনগুলোতে কিংবা জোবাইদার জন্মস্থান সিলেট-১ আসন থেকেও নির্বাচন করতে পারেন তিনি।  

 

বিষয়টি স্পষ্ট হবে আজ বা কাল। শোনা যাচ্ছে-জোবাইদা রহমানের পক্ষে আজ বা কাল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বগুড়ার কোনো একটি আসনে তার পক্ষে মনোনয়ন ফরম তোলা হতে পারে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—ভারতে গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়া কংগ্রেস যেমন চলতে পারে না, বাংলাদেশে শেখ পরিবারের কাউকে ছাড়া আওয়ামী লীগকে যেমন ভাবা যায় না, তেমনি জিয়া পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়াও বিএনপি টিকতে পারে না। দলের নেতৃত্বে তরুণ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কোনো গ্রহণযোগ্য মুখ এনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ‘দেশি-বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীরাও।

 

বিষয়টি মেনেই জুবাইদাকে রাজনীতিতে আনার কথা ভাবা হয়েছে। সিলেট, বগুড়ার একাধিক আসনে তাকে প্রার্থীও করা হতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

 

নির্বাচনী কাজ সমন্বয়ের দায়িত্বও তার হাতে ছাড়ার কথা ভাবছে বিএনপি। নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চ থেকে তার ভিডিও-বক্তৃতা প্রচারের কথা ভেবে রেখেছেন বিএনপি নেতৃত্ব।

 

এদিকে বিএনপির ঘাঁটি বগুড়ার দুই আসনে কে প্রার্থী হচ্ছেন—এমন প্রশ্ন এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। শুধু তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই নন, জেলার শীর্ষ নেতারাও বিষয়টি জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন।

 

অনেকেই বলছেন, আইনি জটিলতায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিংবা অন্য কোনো কারণে তার পরিবারের সদস্যদের কেউ যদি নির্বাচনে অংশ না নিতে পারেন, তা হলে স্থানীয় নেতাদের বেছে নেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।

 

ফলে এখন থেকেই পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হচ্ছে স্থানীয় নেতাদের।

 

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া-৭ আসনের গাবতলী উপজেলায়। যে কারণে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সব নির্বাচনে ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরে তিনি পাশের বগুড়া-৬ (সদর) আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

 

২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি বগুড়া সদর আসনের এমপি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি বর্তমানে কারাগারে থাকায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তার প্রার্থিতা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

 

বগুড়া ও ঢাকায় বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মামলায় দণ্ডিত হলেও তারা খালেদা জিয়ার প্রার্থিতার ব্যাপারে এখনও আশাবাদী। তারা মনে করছেন, নির্বাচন কেন্দ্র করে আগামীতে রাজনীতিতে ইতিবাচক বেশ কিছু বিষয় দৃশ্যমান হতে পারে। যার ভিত্তিতে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতার বিষয়টিও নিশ্চিত হয়ে যাবে।

 

তবে কোনো কারণে খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে না পারলে দুটি বিকল্প ভেবে রাখা হয়েছে। প্রথমত তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে প্রার্থী করা অথবা বগুড়ায় দলের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাকে দাঁড় করিয়ে দেয়া।

 

তবে বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্রের ভাষ্য- ডা. জোবাইদা রহমানের এ মুহূর্তে দেশে আসা কিংবা তার প্রার্থিতার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পাসপোর্ট সমস্যার কারণে ডা. জোবাইদা রহমান দেশে আসতে পারবেন না। লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে তার পাসপোর্ট আটকা। যে কারণে অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি শাশুড়িকে দেখতে আসতে পারেননি।

 

উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের রাজনীতিতে আসার গুঞ্জন নতুন নয়। বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে-জিয়া পরিবারের এ সদস্য বিএনপির রাজনীতির হাল ধরবেন। তবে এখনও পর্যন্ত জিয়া পরিবারের কেউ এ বিষয়ে কিছুই বলেননি। 

 

জোবাইদার বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারে তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী জোবাইদার কাকা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আইরিন খানের চাচাতো বোন জোবাইদা চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম হন।

 

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন থেকে রেকর্ড নম্বর ও স্বর্ণপদক নিয়ে এমএসসি করেছেন।

 

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম