অস্থিরতা সমাধানে একমাত্র পথ রাজনৈতিক ঐক্য: ড. কামাল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫২ পিএম
দেশের রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা সমাধানের একমাত্র পথ রাজনৈতিক ঐক্য বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় ও সার্বিক সহযোগিতা করা দেশের সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের নৈতিক দায়িত্ব বলেও মনে করেন তিনি।
ড. কামাল বলেন, এই ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে আমাদের জাতীয় চেতনা, যা ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ’৭২-এর সংবিধান এবং ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা। আজ সময়ের প্রয়োজনে জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে সংবিধান সংশোধন কিংবা যুগোপযোগী করা রাষ্ট্রের জন্য চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত ও মীমাংসিত বিষয়গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে তা আমাদের অগ্রসরমান বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাধাগ্রস্ত করবে। এ ব্যাপারে আমাদের সবার দায়িত্বশীল হওয়া কর্তব্য।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত ‘জাতীয় কাউন্সিল-২০২৪ পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা ও সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
কামাল হোসেনের পক্ষে তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরাম সভাপতি পরিষদের সদস্য সুব্রত চৌধুরী। এতে ড. কামাল হোসেনকে ইমেরিটাস, মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে সভাপতি এবং ডা. মো. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা মন্তব্য করে কামাল হোসেন বলেন, বিগত ৫৩ বছরেও আমরা কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারিনি। আবার ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা হচ্ছে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার। এক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। দেশ গড়ার কাজে তারুণ্যের এই শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। এটা যাতে বিনষ্ট না হয় সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষিত একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের চেতনা থেকে যেমন সরে আসতে পারি না, তেমনি ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নসাৎ হতে দিতে পারি না। এই ঐতিহাসিক বিষয়গুলো একটি আরেকটির সম্পূরক ও পরিপূরক।
বিগত বছরগুলোতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্লজ্জ দলীয়করণের ফলে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল বলে মন্তব্য করেন ড. কামাল। তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান সংস্কার করতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তাদের যৌক্তিক সময় ও সার্বিক সহযোগিতা করা সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের নৈতিক দায়িত্ব। যাতে তারা অভীষ্ট সংস্কার কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন।
কামাল হোসেন বলেন, গত নভেম্বরে জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে রোববার গণফোরামের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলো। আমি আশা করি, দলে যে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে তারা গণফোরামের ঘোষিত নীতি, আদর্শ ধারণ করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হবে।