Logo
Logo
×

অন্যান্য

পঁচিশের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় খেলাফত মজলিস

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০১ পিএম

পঁচিশের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় খেলাফত মজলিস

বিএনপি ও অন্যান্য সমমনা দলের মতো খেলাফত মজলিসও ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে রোডম্যাপ চেয়েছে।

শনিবার খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের দ্বাদশ অধিবেশনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে দলটির আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ বলেন, ২০২৫-এর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।

এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত অধিবেশন উদ্বোধন করেন খেলাফত মজলিসের সাবেক আমির ও বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ বলেন, চূড়ান্ত বিজয় এখনো আসেনি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদেরকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সব প্রকার দুর্নীতি, জুলুম ও অবিচার মূলোৎপাটনে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমরা জোর দাবি জানাতে চাই- যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে, তার কার্যকারিতা আরও দৃশ্যমান করুন। প্রশাসনিক সংস্কারসহ সব সংস্কারে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত প্রাধান্য দিন। বিশেষ করে শিক্ষা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনে ইসলামী মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিন। এখানে ইসলামবিরোধী কোনো অপতৎপরতা মেনে নেওয়া হবে না। আগুন সন্ত্রাসসহ সব নাশকতা রুখে দিতে রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করুন। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর গণহত্যাসহ সব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করুন। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার মনিটরিং জোরদারের উদ্যোগ নিন। পাচারকৃত সব অর্থ ফিরিয়ে আনুন। ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন কমিয়ে আনুন।

খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের (ভারত) অব্যাহত আধিপত্যবাদি আচরণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজও হুমকির সম্মুখীন। হাজার হাজার শহিদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ আজ চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের শিকার। এই মুহূর্তে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সবার ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আজকের এই অধিবেশন থেকে দেশপ্রেমিক সব দলের প্রতি আমরা ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হলে দেশের সর্বস্তরে সংস্কার প্রয়োজন। আমূল সংস্কারের জন্য খেলাফতভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। জগতগুলোর প্রতিপালক মহান আল্লাহ একমাত্র মানুষকে তার খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন। একটি সত্যিকার কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে হলে রাষ্ট্রে আল্লাহর রবুবিয়্যাত প্রতিষ্ঠা আবশ্যক।স্রষ্টার দেওয়া ম্যানুয়ালই সৃষ্টিকে স্বাচ্ছন্দ্যে চালিত করে। মানুষকে জানতে হবে আল্লাহর হুকুম মানার মধ্যে কত শান্তি। ইসলামের আলোকে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালিত হলে বৈষম্য থাকবে না, দারিদ্র্য থাকবে না, জুলুম থাকবে না, অবিচার থাকবে না, রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এই জন্য খলিফার মর্যাদাপূর্ণ মানুষগুলোকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে হবে। 

খেলাফত মজলিসের আমির আরও বলেন, খেলাফত মজলিস ঈমান ও আমলে সালেহর অধিকারী একদল যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। খেলাফতের দায়িত্ব পালনে সদা তৎপর একদল যোগ্য জনগোষ্ঠী বিনির্মাণে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত। সাধারণ পরিষদের অধিবেশন হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় গঠনতান্ত্রিক অনুষ্ঠান, যা একদল যোগ্য লোকের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। আজকের এই অধিবেশনের মধ্যদিয়ে ইসলামী আদর্শের আলোকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আন্দোলন আরও জোরদার হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব অধ্যক্ষ মাসউদ খান, মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করীম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ, অধ্যাপক সিরাজুল হক, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মাওলানা সাইয়্যেদ ফেরদাউস বিন ইসহাক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা এএফএম সোলাইমান চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাগপা সভাপতি রাশেদ প্রধান, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, হাজারো আলেমকে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার হামলা-মামলা দিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে। তাদেরকে মানুষই মনে করেনি। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকষ দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। শাপলা চত্বরে আলেমদেরকে হত্যা করেছে। সবাইকে এই ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, একটা দুঃসময় আমরা পার করেছি। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করেছেন। বিগত ১৬ বছর আমাদের কেউ বাড়িতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি। হামলা-মামলার শিকার হয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ভারত পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে। এক ঘরে আগুন লাগলে যেমন পাশের ঘর নিরাপদ থাকে না, বাংলাদেশের কিছু হলে ভারতও নিরাপদ থাকবে না। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির সমন্বয়ে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। বৈষম্য দূর করে সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।

ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আওয়ামী লীগ মূলত ভারতের সরকার ছিল। ভারতের স্বার্থ ছাড়া তাদের দ্বারা দেশের কোনো কল্যাণ হয়নি। জনগণের মতামত তোয়াক্কা না করে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হয়নি।দেশরক্ষা ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী ও অধ্যাপক আবদুল জলিলের পরিচালনায় অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন- খেলাফত মজলিস যুগ্ম মহাসচিব এবিএম সিরাজুল মামুন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, ডা. আখলাক আহমদ, সদরুজ্জামান খান, ছরছিনা দরবারের বড় হুজুর মাওলানা শাহ মো. সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী, আঞ্জুমানে হেফাজত ইসলামের মহাসচিব মাওলানা আবদুস সবুর, বরুণা মাদ্রাসার পরিচালক শায়েখ বদরুল আলম হামিদী, বিশিষ্ট আলেম দ্বীন মাওলানা আবদুস সামাদ, মুফতি আলী হাসান উসামা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম ইউনুস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব মোর্শেদ, অধ্যাপক কেএম মাহবুব আলম, খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হক, উত্তর সভাপতি মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস কেন্দ্রীয় সভাপতি রায়হান আলী, ইসলামী যুব মজলিস কেন্দ্রীয় সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, শ্রমিক মজলিস কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রভাষক আবদুল করিম, খেলাফত মজলিস যুক্তরাষ্ট্র শাখা সভাপতি মাওলানা আবুল কাশেম, যুক্তরাজ্য তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. শেখ মোস্তাক আহমদ, জেদ্দা মহানগরী সভাপতি মাওলানা আবদুল মুকিত, মদীনা মনোওয়ারা সভাপতি মাওলানা জালালুদ্দিন, কাতার শাখার উপদেষ্টা মাওলানা লোকমান আহমদ, মালয়েশিয়া সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুর রব, আরব আমিরাতা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খালেদ আহমদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতা ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আবু আফফান ওসমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম