ঐক্য ধরে রাখতে জাতীয় সংলাপ জরুরি: ড. কামাল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম
ঐক্য ধরে রাখতে জাতীয় সংলাপ জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেছেন, বিগত ১৬ বছরে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্লজ্জ দলীয়করণের ফলে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তাদেরকে যৌক্তিক সময় ও সার্বিক সহযোগিতা করা সব রাজনৈতিক দল এবং জনগণের নৈতিক দায়িত্ব। যাতে তারা অভীষ্ট সংস্কার কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন।
ড. কামাল আরও বলেন, এ বিষয়ে যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে উঠেছে- তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা প্রয়োজন। এ জন্য গণতন্ত্রমনা সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজের মধ্যে জাতীয় সংলাপ জরুরি।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণফোরামের ৭ম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সকাল ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত শহিদ মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়ার বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া।
গণফোরামের এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের চেতনায় বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে আসুন ঐক্যবদ্ধ হই’।
ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, ছাত্র-জনতা আবারও প্রমাণ করেছে এই দেশ কোনো স্বৈরশাসকের নয়, এই দেশ জনতার। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং যেই জাতীয় ঐকমত্য গড়ে উঠেছে তা সুসংহত করতে গণতন্ত্রকামী সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজের মধ্যে জাতীয় সংলাপ অত্যন্ত জরুরি। গণফোরাম বিগত ৩১ বছরে তার নীতি-আদর্শের সঙ্গে কোনো আপস করেনি। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনায় বৈষম্যমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন নতুন করে দেশ গড়ার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হই।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংস্কার নিয়ে কারও চিন্তা করার দরকার নেই। সংস্কার আমরা করব। ৩১ দফা সংস্কার এই বাংলাদেশে আমরা বাস্তবায়ন করব। নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐকমত্যের ভিক্তিতে নির্বাচনি সংস্কারসহ যে কয়টি সংস্কার দরকার সেটা করতে সময় লাগবে না।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই প্রেক্ষাপটে যেখানে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। আবারও ঐক্যবদ্ধ জনতা, ঐক্যবদ্ধ জাতি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটাই চিন্তা, আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা কিন্তু বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম বিভিন্নভাবে শুরু করেছে। কখনও আনসারের বিদ্রোহ, কখনও সংখ্যালঘু, কখনও অটোরিকশার মাধ্যমে, প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। স্বৈরাচারকে সরিয়েছি আজ কিন্তু আমাদের ঐক্যকে অটুট রাখতে হবে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি এবং আমরা সেটা করতে চাই এই কারণে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া আর কোনো পথ নেই। এজন্য আমাদের এই প্রক্রিয়ায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। আজ যে ঘটনাগুলো ঘটছে তা জাতির জন্য সুখবর নয়।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিভিন্ন সংস্থা নামছে। একটা অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এসব দাবি-দাওয়ার পেছনে অন্য শক্তি কাজ করছে। কারা, এটা আমাদের বুঝতে হবে। এই শক্তির উৎস কোথায় তা জানতে হবে। তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে যেন একটা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে পারি, এটা আমাদের লক্ষ্য। সংস্কারের কথা যারা বলে, বহু আগে ৩১ দফা সংস্কারের কথা তুলে ধরেছি। সেই ৩১ দফার মধ্যে আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সবকিছু আছে। সেটা আমরা করব। আগামী দিনে নির্বাচনের পরে যে সরকার হবে সেটা হবে জাতীয় সরকার এবং সেই জাতীয় সরকার এই ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। এটা আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সম্মেলনে গণফোরাম সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ আমাদের দেশের জনগণ। ষড়যন্ত্রকারীরা যতই উসকানি দিক না কেন বাংলাদেশের জনগণ সম্প্রীতি বজায় রাখবে। ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, কোনো অপশক্তির কুমন্ত্রণায় নিজেদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। ছাত্রসমাজ একতাবদ্ধ থাকলে কোনো স্বৈরাচারের ক্ষমতা নাই জনগণকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। আমরা স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হয়েছি কিন্তু এখনো সংকট কাটেনি। এই সংকট থেকে উত্তরণে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণফোরাম সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. মিজানুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণফোরাম সমন্বয় কমিটির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন, সমন্বয় কমিটির সদস্য সিনিয়র অ্যাডভোকেট একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ।