শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে খেলাফত আন্দোলনের ১৫ প্রস্তাবনা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১১ পিএম
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেছেন, দেড় হাজার বছর আগে ছিল আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগ। মুর্খতা, অজ্ঞতার যুগ। অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই অবস্থা থেকে কুরআনি শিক্ষার আলোকে মহানবী (সা.) একটি আলোকিত সোনালী সমাজ গঠন করেছিলেন। পরবর্তীতের তার সাহাবায়ে কেরাম সেই আলোকে সারা পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন। এই শিক্ষার আলোকেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা এমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই না, যে শিক্ষা অর্জন করতে সন্তানকে পাঠিয়ে অভিভাবকরা সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে কি না, অশ্লীলতা, মাদক, অপসংস্কৃতির খপ্পরে পড়বে কি না- সেই দুশ্চিন্তায় থাকে।
বুধবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মিয়া হলে ‘বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা : উত্তরণের পথ ও পন্থা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খেলাফত আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- দলের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান রহমান হামিদী, যুগ্ম মহাসচিব আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সি, হাজী জালালুদ্দীন বকুল, বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. লিটন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর আমীর মাওলানা মাহবুবুর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি মোফাচ্ছির হোসাইন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মুফতি আ ফ ম আকরাম হোসাইন, মহানগর নায়েবে আমির মুফতি আখতারুজ্জামান আশরাফি, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আবুল হাসান কাসেমী, প্রচার সম্পাদক মুফতি জসীম উদ্দীন প্রমুখ।
মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, পাঠ্যবই থেকে বাংলাদেশের মানুষের ধর্ম-ইতিহাস-ঐতিহ্য-সাংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার সবকিছু বাদ দেওয়া হচ্ছে। এতে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তরুণ প্রজন্মকে জ্ঞানী দক্ষ ভালোমন্দ বোঝার মতো করে গড়ে তুলতে হবে।শিক্ষার্থীদের মাঝে আল্লাহর ভয়, উত্তম চরিত্র, হৃদয়বান, রচিশীল, নান্দনিক, নৈতিক ও মানবিক বোধসম্পন্ন ধার্মিক দেশপ্রেমিক ও সর্বোপরি আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা চালু হলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, দুর্নীতিসহ সব ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে।
আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সি বলেন, পশ্চিমাদের এবং ব্রাহ্মণ্যবাদীদের চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষাব্যবস্থা জাতির কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না। আল্লাহ প্রদত্ত কুরআন এবং রাসূলের (সা.) শিক্ষাব্যবস্থাই দেশকে একটি আদর্শ জাতি উপহার দিতে পারে।
মতবিনিময় সভায় খেলাফত আন্দোলনের পক্ষ থেকে শিক্ষাব্যবস্থার উত্তরণের লক্ষ্যে শিক্ষাক্রম প্রণয়নে পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ থেকে বের হয়ে আসা, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব কমিটিতে যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তকরণ এবং বিতর্কিত ব্যক্তিদের ছাঁটাইকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রূপদান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে কওমি সনদপ্রাপ্তদের নিয়োগদান, ১ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্যক্রমে রাখা, কওমি সনদপ্রাপ্তদের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার পথ সুগম করা, আলিয়া মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্ট প্রদানে বৈষম্য দূরীকরণ, জাতীয় বাজেটে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ের ব্যবহারিক ক্লাশের যথাযথ বাস্তবায়ন করা, প্রজনন ও স্বাস্থ্য শিক্ষার নামে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিব্রতকর বিষয়বস্তু শিশু ও টিনেজ বয়সি শিক্ষার্থীদের সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া, ছেলে-মেয়েদের উন্নত চরিত্র গঠন ও নৈতিকতা বিকাশের স্বার্থে সহশিক্ষা বন্ধ করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের মাধ্যমে সরকারের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথ বের না করে এই আইনকে আরও উদ্যোক্তাবান্ধব করা, অটোপাশের ধারা চিরতরে বন্ধ করা, উচ্চতর পড়াশোনায় প্রত্যেক প্রোগ্রামে বিদ্যমান পাঠ্যসূচিতে প্রাসঙ্গিক ধর্মীয় কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা, পাঠ্যপুস্তকের সব সংস্করণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা এনসিটিবির ওয়েবসাইটে উপলভ্য রাখা, শিক্ষাব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের সব বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাসহ ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।