‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশ ভারত-চীনের রশি টানাটানির মধ্যে পড়েছে’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১০:০৪ পিএম
‘সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ এখন ভারত ও চীনের রশি টানাটানির মধ্যে পড়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।
শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে ‘সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও রাষ্ট্রের গতিমুখ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তারা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন- গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডাভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদ নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা এবং জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘বর্তমান সরকার ভূরাজনৈতিকভাবে এবং বাণিজ্যিকভাবে ভারতের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতের পছন্দ অনুযায়ী এমপি নির্বাচিত হয়েছে, ভারতের চাহিদা অনুযায়ী মন্ত্রী পরিষদ ও সরকার গঠিত হয়েছে। এখন ভারতের অনুমতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চীন সফরে যেতে হচ্ছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ এখন ভারত ও চীনের রশি টানাটানির মধ্যে পড়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে হলে নতজানু বিনা ভোটের সরকারকে বিদায় করতে হবে। এজন্য সব রাজনৈতিক দল ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য ও সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।’
তারা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে এক মহাদুর্নীতিযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতকারীদের অর্থ লুটে নেওয়ার জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে, এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও ব্যবহার করা হচ্ছে।একইভাবে বিদ্যুৎ সংকটকে পুঁজি করে এ খাতে লুট ও দুর্নীতি নিশ্চিত করার জন্য আইন করে কয়েকটি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পুরো খাত। দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে গ্রাহকদের পকেট কেটে ভর্তুকির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে সরকারের ঘনিষ্ট কিছু কোম্পানির হাতে। তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য দায়মুক্তি আইন পর্যন্ত করা হয়েছে।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘বলা হচ্ছে বেনজির বা জেনারেল আজিজের দুর্নীতির দায় প্রতিষ্ঠান বা ওই বিভাগ নেবে না।কিন্তু সরকারের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য আজিজ-বেনজিরদের স্বেচ্ছাচারিতার ব্ল্যাঙ্ক চেক দেওয়া হয়েছে। এদের নেতৃত্বে যেভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে তাতে পুরো বাহিনী অকার্যকর হয়ে পড়েছে।একইভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করে দেশকে একটি অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
নেতারা বলেন, ‘সরকার গণমাধ্যমে চমক দেওয়ার জন্য এবং জনগণের সামনে আইওয়াশ হিসেবে কিছু দুর্নীতির বিচারের মহড়া দিচ্ছে। সরকারের সুবিধা অনুযায়ী কিছু দুর্নীতির বিচার প্রক্রিয়া চলবে। এই বিচার প্রক্রিয়া কতদিন টিকে থাকবে, সেটি নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় আছে। কেননা দুর্নীতিবাজ, মাফিয়া ডাকাতদের আশ্রয়স্থল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এদের সহযোগিতা নিয়েই সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতায় টিকে থাকে।’
বক্তারা বলেন, ‘দুর্নীতিকে রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে তৈরি করার দায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে এবং দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে নিতে হবে।’