বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য ‘ভারত সরকার দায়ী’: কর্নেল অলি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ০৫:২৭ পিএম
‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস এবং স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভারত সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী’ বলে অভিযোগ করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম।
শনিবার বিকালে রাজধানীর মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদ এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি ভারত সরকার তাদের পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্যের নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আমরা অন্য কোনো দেশের কোনো ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না, অন্য দেশের কোনো ক্ষতি হোক এই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে চাই না। কারণ, এই ধরনের কর্মকাণ্ড ইসলাম ধর্মের পরিপন্থি।’
অলি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, ভারত সরকার কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে সম্পর্ক করা থেকে বিরত থাকবে বরং ভারতের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব স্থাপনে মনযোগী হবে। আসুন, আমরা একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করি। ভালো প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করি। এতেই সবার মঙ্গল নিহিত রয়েছে।’
বিএনপির নেতৃত্বে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে এলডিপিও। এই প্রথমবারের মতো এলডিপির সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অলি আহমদের পাশেই বসা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। এছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানেরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু তার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তিনি যোগ দেননি বলে জানানো হয়।
ভারত সরকারের উদ্দেশে অলি আহমদ আরও বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণ প্রায় ১৮ কোটি। ভারত সরকারের উচিত হবে না বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে শত্রুতামূলক আচরণ করা। আমরা সুপ্রতিবেশী হিসেবে থাকতে চাই। বর্তমান সরকার আপনাদেরকে আমাদের দেশের সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর এবং বিভিন্ন সড়ক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। অনেকগুলো অসম চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেছে। যার ফলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও কেন ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে, তা বোধগম্য নয়। মেহেরবাণী করে আমাদেরকে আমাদের মতো করে থাকতে দেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না। ভারত সরকারের বর্তমান মনোভাব পরিবর্তন না হলে উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। বাংলাদেশের মানুষ অকৃতজ্ঞ নয়।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন পূর্বে ভারতের কংগ্রেসের সভাপতি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন- আমরা পাকিস্তানকে দুই টুকরা করে তাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছি। তার এই বক্তব্যে সুস্পষ্ট বুঝা যায়, বাংলাদেশের জনগণ তাদের বন্ধু নয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৯৪৭ সালের পর উপমহাদেশ ত্যাগ করে নিজ দেশে ফিরে যায়। বিগত কয়েক বছর যাবৎ ভারত সরকার বাংলাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অনুরূপ দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো বিরূপ মন্তব্য নেই। এছাড়াও অন্যের ক্ষতি করা ইসলাম ধর্ম পরিপন্থি একটি কাজ।’
সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদ দেশে আইনের শাসন, অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘দেশে লুটতরাজের কারণে প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের টাকা পাঠানো থেকে বিরত রয়েছে। ডলার সংকট এবং অর্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য মেগা প্রকল্পগুলো অনেকাংশে দায়ী। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ আশঙ্কাজনক হারে প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে এবং দেশীয় মুদ্রার তারল্য সংকট প্রতীয়মান। খুব শিগগিরই এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো পথ খোলা নেই।’
বর্তমান সরকার বিগত ১৫ বছর ধরে বাকশালী কায়দায় দেশ শাসন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন ক্ষ্যান্ত হন। জনগণকে তাদের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করার সুযোগ দেন। আমি না থাকলে দেশ চলবে না এই ধরনের ভ্রান্ত ধরণা থেকে বের হয়ে যান।’
অলি বলেন, ‘বর্তমান অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে বাধ্য। হয়ত নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে। আমাদের সবার উচিত, দেশের সমস্যাগুলো পর্যালোচনা করা এবং যত দ্রুত সম্ভব এগুলোর সমাধান বের করা। অন্যথায় আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। মনে রাখতে হবে, লোভ এবং মোহ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।’
আন্দোলন প্রসঙ্গে অলি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরতিহীন আন্দোলন চালিয়ে আসছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা বিএনপির নেতৃত্বে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব। সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বর্তমান বাকশালী সরকারের পতন হবে। দেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, ড. নেয়ামূল বশির,ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, অধ্যক্ষ কেকিউ স্যাকলায়েন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহে আলম চৌধুরী, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি প্রমুখ।