দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন জরুরি: মেনন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:১৪ পিএম
দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের এক দশমাংশ জায়গা। সম্পদের শক্তিশালী উৎস এ অঞ্চল। পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর পূর্বে ভারত, মিয়ানমার। অন্যদিকে মিজোরাম, মনিপুর। এই এলাকাগুলো অসহিষ্ণু অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। একে ঘিরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পুরাতন পরিকল্পনা করছে। সুতরাং বাংলাদেশকে তার নিরাপত্তা ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতার এবং দেশের জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার জন্যই এ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন জরুরি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ বছর উপলক্ষ্যে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ আয়োজিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়ক জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাবি শিক্ষক মেসবাহ কামাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা দীপায়ন খীসা, ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএমএ সবুর, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুল রশীদ ফিরোজ প্রমুখ।
অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে যে বিরোধী পক্ষ রয়েছে; সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের এক দীর্ঘ প্রেক্ষাপট রয়েছে। কিন্তু এই চুক্তি বাস্তবায়নে প্রথম বাধা আসে বিএনপির আমলে।চুক্তিবিরোধী শক্তি আগের চাইতে আরও সক্রিয় হয়েছে।ফলে পুরো পরিস্থিতি এক জটিল রূপ ধারণ করেছে। যার সমাধান অনেক জরুরি। এ চুক্তির বড় বিষয় ছিল বেসামরিকীকরণ। এখন উল্টো ঘটনা ঘটছে। সেখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা বলে সামরিকীকরণ আরও বেশি করা হচ্ছে বলে আমার নিজের ধারণা। তিনি বলেন, বর্তমানে সমতলের আদিবাসীরাও সংকটে আছে। উত্তরাঞ্চলে তাদের উচ্ছেদ অভিযান চলছে।
তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামনে নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনি প্রচারের মধ্যে এ বিষয়গুলো নিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক সমাধানের ভিত্তিতে যে চুক্তি হয়েছিল, সেভাবে এ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঢাবি শিক্ষক মেসবাহ কামাল বলেন, বাংলাদেশ যে বহু জাতির দেশ, বহু সংস্কৃতির দেশ এটা অন্তত ফুটে উঠছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ৪১টি ভাষার খোঁজ পেয়েছে। আমরা আরডিসি থেকে ৪৩টি ভাষা পেয়েছি। ২০৩০-এর মধ্যে ভাষা সংখ্যা কমে যাবে। আর ৫০ সালের মধ্যে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেখানে এত ভাষা আছে, এত বৈচিত্র আছে সেটাকে আমরা এক জাতির রাষ্ট্র বানাতে চাচ্ছি। এটা চরম স্বৈরাচারিতা, অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিক।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারও ১৯৯৭ আগের পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে- এমন ধারণা করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমাধানের পথ ছিল এই চুক্তি। সেই সময় সরকার একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে এই চুক্তিতে বলিষ্ঠ ছিল। কিন্তু পঁচিশ বছরেও এ চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি।
মতবিনিময় সভায় এ চুক্তি বাস্তবায়নে পদক্ষেপে ৫ দফা দাবি তুলে ধরে অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম বলেন, সব বাম-প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক দলগুলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ আদিবাসী সম্পর্কিত নীতি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ২০২৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উত্থাপিত ৫ দফা দাবিসহ সমতলের আদিবাসীদের দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা, রাজনৈতিক দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ আদিবাসী জনগণের বিষয়ে একজন মুখপাত্র ও সাংগঠনিকভাবে সম্পাদকীয় পদ তৈরি করা এবং জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকার পরিষদগুলোতে সব রাজনৈতিক দল থেকে আদিবাসী মনোনয়ন প্রদান করার দাবি জানান তারা।