জাতীয় সরকারের রূপরেখা দিল চরমোনাই পিরের দল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ০৯:২৮ পিএম
নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানের একটি হোটেলে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ রূপরেখা তুলে ধরেন দলটির আমির চরমোনাই পির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
এতে রয়েছে, আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে। যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
রূপরেখায় আরও রয়েছে- সংসদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে এবং বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউই নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।
‘বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ এবং একটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয়’ বিষয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন। এ সময় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিসহ দেশের শীর্ষ ওলামা, শায়েখ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে সভায় অংশ নেওয়া বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল জাতীয় সরকারের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেয়। অনেকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার কেউ কেউ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের পক্ষে মত দেন। তবে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও সভায় অংশ নেওয়া বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ সব রাজনৈতিক দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বলে একমত পোষণ করেন।
সভায় আওয়ামী লীগ বাদে নিবন্ধিত অধিকাংশ দলকে আমন্ত্রণ জানায় ইসলামী আন্দোলন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে দলের প্রোগ্রাম থাকার কারণে তারা অংশ নিতে পারেননি বলে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা জানান। বিএনপির পক্ষে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল অংশ নেন। জাতীয় পার্টির কেউ সভায় যাননি। তবে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ সভায় উপস্থিত ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীকে দলীয়ভাবে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য খলিলুর রহমান মাদানীকে দাওয়াত দেওয়া হয়। তিনি সভায় যোগ দেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে বিএনপিও কারচুপির অভিযোগ তোলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় না, নিরপেক্ষও হয় না।
দলীয় সরকারের অধীনে ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনে যাবে না জানিয়ে চরমোনাই পির আরও বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজনের পাঁয়তারা চলছে। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা চলছে। আগেও বলেছি, এখনো বলছি দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই ইসলামী আন্দোলন অংশ নেবে না।
জাতীয় সরকার পদ্ধতির সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, তবে এ রূপরেখার সঙ্গে বিএনপির রূপরেখার অনেকাংশেই মিল রয়েছে। জালিম সরকার হটানোর আন্দোলনে যাদের অবদান থাকবে, বিএনপি তাদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করবে।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, জাতীয় সরকারের সময়কাল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ৭০-এর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ৬৯-এ গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য ছিল। ৯১-এর নিরপেক্ষ নির্দলীয় নির্বাচনের জন্য ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান প্রধান ভূমিকা রেখেছে। আগামীর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন ২০২৩-এ আরেকটি গণঅভ্যুত্থান।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না- এ ব্যাপারে সবাই একমত। এ অবস্থায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিকল্প নেই।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও অংশ নেন- বাংলাদেশ জমিয়তুল মুছলেহীনের মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির ববি হাজ্জাজ, মুসলিম লীগের আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, পির সাহেব মোকামিয়া মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস, মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, খেলাফতে রব্বানী পার্টির ড. আবদুল লতিফ মাসুম প্রমুখ।
ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, খন্দকার গোলাম মাওলা প্রমুখ।