ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে রাজপথে জনতার ঢল
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি দাবিতে একজোট হয়েছে দেশটির সাধারণ জনগণ। রোববার ইমরান খানের মুক্তি দাবিতে রাজপথে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের ঢল।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ইসলামাবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। এ সময় তারা ইমরান খানকে ‘অবিলম্বে মুক্তি দাবি’তে সরকারকে দুই সপ্তাহের আলটিমেটাম দেন। তবে সেই সময় বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের বাধায় সংঘর্ষে জড়িয়ে যান প্রতিবাদকারীরা। খবর আলজাজিরা, এএফপির।
ফেব্রুয়ারিতে বিতর্কিত জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনের পর প্রথমবার এত বড় সমাবেশ করতে পারল পিটিআই। পিটিআইয়ের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দি রয়েছেন ইমরান খান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওগুলোতে খানের সমর্থকদের দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীর দিকে মার্চ করতে দেখা গেছে। তবে ইসলামাবাদ প্রশাসন শহরের প্রধান প্রবেশ পয়েন্টগুলো ব্লক করে রাখে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিক্ষোভকারীদের।
এছাড়া রাস্তায় কনটেইনার দিয়ে ব্যারিকেড ও দাঙ্গা পুলিশও মোতায়েন করা হয়। ফলে বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে পিটিআইয়ের কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। পিটিআই সমর্থক রবিনা গফুর আলজাজিরাকে বলেন, সমাবেশে পৌঁছানো খুবই কঠিন ছিল। সব রাস্তা বন্ধ ছিল। তবে আমরা সংকল্পবদ্ধ। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইমরান খানের সঙ্গে থাকব।
পিটিআই বলেছে, সরকার কর্মীদের হয়রানি করে সমাবেশে অংশ নেওয়া বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
স্থানীয় সামা নিউজে প্রচারিত দৃশ্যে দেখা গেছে, ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা দাঙ্গা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ছে, আর পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করছে। সমাবেশের উদ্বোধনী বক্তৃতায় খানের ঘনিষ্ঠ সহচর হাম্মাদ আজহার বলেন, ‘আমরা খানের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না।’
লাহোর থেকে পিটিআই নেতা এবং বিশিষ্ট আইনজীবী সালমান আকরাম রাজা বলেন, ইমরান খানই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই দেশকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও অদক্ষ রাজনীতিবিদদের কবল থেকে রক্ষা করতে পারেন। সমাবেশের শেষের দিকে পুলিশের সঙ্গে পিটিআইয়ের কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে।
ইসলামাবাদ থেকে আলজাজিরার প্রতিবেদক কামাল হায়দার বলেছেন, খানকে গ্রেফতারের পর এই প্রথম পিটিআইকে ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
এর আগে কয়েক মাস ধরে পিটিআই রাজধানীতে জনসভার অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে তিনি কারাবন্দি আছেন। তার বিরুদ্ধে ৯ মে সমর্থকদের সহিংসতার উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিচার চলছে।
অন্য একটি মামলায় তার স্ত্রীও কারাবন্দি রয়েছেন। ইমরান খান তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার বেশির ভাগ দণ্ড স্থগিত হয়েছে অথবা খারিজ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্ট থেকে কারাগারে ইমরান। তার মুক্তি দাবিতে সমর্থন তৈরির জন্য দলের পক্ষ থেকে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। গত জুলাইয়ে ইদ্দত মামলায় (ইসলামি বিধিবহির্ভূত নিকাহ) দেশটির একটি জেলা ও দায়রা আদালত দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির আবেদন গ্রহণ করেন।
এরপর তাদের মুক্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এরপর আবার ইমরানকে তোশাখানা মামলায় নতুন করে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)।
আগের দুটি তোশাখানা মামলায় তার সাজা ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছিল, যখন তিনি ইসলামাবাদ হাইকোর্টে সাইফার মামলায় খালাস পেয়েছিলেন। এর আগে কয়েক মাস ধরে পিটিআই রাজধানীতে জনসভার অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।