ঘটনা ১৬ বছর আগের। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর। রাওয়ালপিন্ডির লিয়াকত বাগের নির্বাচনি সভা শেষে নিজের গাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন বেনজির ভুট্টো। চারপাশে অসংখ্য জনতার ভিড়। হঠাৎই মিছিল থেকে উঠে আসে এক ১৫ বছরের বালক। বিলাল নামের সেই ছেলে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে তিনটি গুলি ছোড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজিরের দিকে। সঙ্গে সঙ্গেই আত্মঘাতী বোমায় উড়িয়ে দেয় নিজেকে। রাওয়ালপিন্ডি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয় বেনজির ভুট্টোকে। পাকিস্তানসহ সারা বিশ্বের আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড আজও রহস্য! হত্যাকাণ্ডের মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। বৃহস্পতিবার ছিল তার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। পাকিস্তান ও মুসলিম বিশ্বের প্রথম এ নারী প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুবার্ষিকী এদিন দেশজুড়ে পালন করে তার দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি)। এএফপি, আলজাজিরা।
সেদিনের আকস্মিক ওই হত্যাকাণ্ডে শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন নিহত হয়েছিলেন আরও ১৩৯ জন। পাশাপাশি আহতের সংখ্যা ছিল ৪৫০। তাদের মধ্যে বেনজির ভুট্টোর ২০ নেতাকর্মী নিহত হন, আহত হন প্রায় ৭০ জন। আকস্মিক এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তোলপাড় শুরু হয় পাকিস্তানজুড়ে। একাধিক তদন্তের পরও সব খুনিদের বের করা সম্ভব হয়নি। এমনকি মামলাটি এখন লাহোর হাইকোর্টের রাওয়ালপিন্ডি বেঞ্চে বিচারাধীন। বেনজির ভুট্টো হত্যার ঘটনায় চারটি তদন্ত হয়। তদন্তকারীদের মধ্যে ছিল পুলিশের যৌথ তদন্ত দল ( জেআইটি), কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফআইএ), জাতিসংঘ (ইউএন) ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। তারা হত্যার রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করলেও কোনো ফল আসেনি। মামলায় ১২টি নথি দাখিল করা হয়, ৩৫৫টি হাজিরা রেকর্ড করা হয়। ১০ জন বিচারক পরিবর্তিত হন। ৬৮ জন প্রসিকিউশন সাক্ষীসহ ১৪১ জন সাক্ষ্য দেন। মামলায় ১৬ জনকে আসামি করা হয়, তাদের মধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যার প্রধান অভিযুক্ত তালেবান কমান্ডার বায়তুল্লাহ মেহসুদ ড্রোন হামলায় নিহত হন। অন্য পাঁচ অভিযুক্ত নাদির খান, নাসরুল্লাহ, আবদুল্লাহ, ইকরামুল্লাহ, ফয়েজ মুহাম্মদ কাসকাত বিভিন্ন স্থানে গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে এনকাউন্টারে নিহত হন। এছাড়াও পুলিশ পাঁচজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন আইতজাজ শাহ, শের জামান, রশিদ আহমেদ, রাফাকাত ও হাসনাইন গুল। জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টো ১৯৯০’র দশকে দুইবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কিন্তু সেনাবাহিনী তাকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। বেনজির ভুট্টোকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরপর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এফআইএ এই মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ, সাবেক সিটি পুলিশ অফিসার সৌদ আজিজ ও পুলিশ সুপার রাওয়াল খুররম শেহজাদকে আসামি হিসাবে গ্রেফতার করা হয়। যদিও পরে তারা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যান। ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট বিশেষ সন্ত্রাসবিরোধী আদালতের (এটিসি) বিচারক মুহাম্মদ আসগর খান রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে পাঁচ আসামিকে খালাস দেন বিচারক। পারভেজ মোশাররফকে পলাতক ঘোষণা করা হয়। তার বিরুদ্ধে স্থায়ী গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়। প্রমাণ ধ্বংস ও নিরাপত্তা ভঙ্গের দায়ে পুলিশ কর্মকর্তা সৌদ আজিজ ও খুররম শেহজাদকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাদের প্রত্যেককে ১০ লাখ রুপি করে জরিমানা করা হয়। তবে ৩ মাস পর হাইকোর্ট এ সাজা স্থগিত করে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেন।