Logo
Logo
×

স্বপ্নের পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু পালটে দেবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবন

কুয়াকাটায় নির্বিঘ্নে যেতে পারবেন পর্যটকরা * রাজধানী থেকে যান চলাচল করবে ২ থেকে ৫ ঘণ্টায়

Icon

কে এম রায়হান কবীর, শরীয়তপুর

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২২, ০২:০০ পিএম

পদ্মা সেতু পালটে দেবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবন

পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, চোখের সামনে বাস্তব এক চোখ ধাঁধানো অবকাঠামো। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। আর মাত্র ১১ দিন পর সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতু শরীয়তপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার তিন কোটি মানুষের জীবনমান পালটে দেবে। মানুষের জীবনে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন।

এ সেতুর কারণে শুধু শিল্প খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ হবে না, সুফল যাবে কৃষি খাতও। পর্যটন এলাকাও গড়ে উঠবে। নৌপথের ঝুঁকি, সময় ও অর্থ অপচয় ছাড়াই মাত্র ২ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানী থেকে শরীয়তপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলা পণ্যবাহী ট্রাক, বাস-মিনি বাস ও অন্যান্য গাড়ি চলাচল করতে পারবে। পর্যটকরা সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটায় চলে যেতে পারবেন নির্বিঘ্নে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা সেতু চালু হলে তা শুধু দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জনগণের জীবনমানকে এগিয়ে নেবে তা নয়, বরং এটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পুরো দেশের মানুষের জীবনকে এগিয়ে নেবে আরেক ধাপ। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু হবে একটি নতুন মাইলফলক।

উপকূলীয় অঞ্চলের উৎপাদিত তরমুজ সারা দেশে সুস্বাদু ফল হিসাবে পরিচিত। দেশের মানুষের কাছে এই ফলের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। পদ্মার ফেরি জটিলতার কারণে এই ফল রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় পৌঁছতে সময় বেশি লাগত। ঝামেলাও হতো। সুযোগ পেয়ে পাইকাররা কৃষকদের দাম কম দিত। পদ্মা সেতু চালু হলে কৃষকরা লাভবান হবেন। চাইলে কৃষকরাই তরমুজ নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতে পারবেন।

শরীয়তপুরের মাছ, শাক, সবজির সুনাম সারা দেশেই। এই জেলার মৎস্য বিভাগ সূত্র ও খামারিরা জানান, শরীয়তপুরে তিন হাজার ৬২৬ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ১৮২টি ছোট-বড় মাছ চাষের পুকুর রয়েছে। একই সঙ্গে ২৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে ২২৫টি প্লাবনভূমিতে মাছ চাষ হয়। এক হাজার ২৭ হেক্টর জমির ৩৩৪টি ধানখেতে মাছ চায় হয়। রয়েছে চার হেক্টর জমিতে ৩০টি গলদা চিংড়ির হ্যাচারি। পদ্মা, মেঘনা ও কীর্তিনাশা নদীর ১৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর এলাকায়ও মাছ শিকার হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে শরীয়তপুরের এই মাছ সহজেই রাজধানীতে বিক্রি করতে পারবেন খামারিরা। এতে লাভবান হবেন তারা।

বরিশাল জেলার ট্রাকচালক সায়েদুল মিয়া, রনি বেপারী বলেন, আগে ঢাকা পৌঁছতে পুরো দিন লেগে যেত। দিনে গিয়ে দিনে ফেরা যেত না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যাবে।

শরীয়তপুরের ব্যবসায়ী ইব্রাহিম মিয়া ও ফিরোজ মিয়া বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের এলাকার মানুষের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আগে তো আমাদের অঞ্চল ছিল অবহেলিত। চাকরিজীবী শাহ আলম খান, অশোক কুমার পোদ্দার, মিলন শেখ বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে জায়গা-জমির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ সহজ হবে। এতে আমাদের অঞ্চলের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবদুর রহমান খান (দুলু) বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আছে বলেই আজ পদ্মা সেতু হয়েছে। আগে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে পদ্মার পাড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হতো। সেতু হওয়ায় সেই দুর্দশা থাকবে না। দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে এই সেতু। জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, প্রতি বছর জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ভালো বাজারের অভাবে খামারিরা খুব বেশি লাভের মুখ দেখতে পারেন না। পদ্মা সেতুর কারণে খামারিরা রাজধানীসহ পদ্মার ওপারের বিভিন্ন জেলার বাজার পাবেন। শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক গোলাম রসুল বলেন, পদ্মা-মেঘনা নদীবেষ্টিত শরীয়তপুরের মাটি বেশ উর্বর। ফসলের ফলন ভালো হয় এ জেলায়। কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এখানকার কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতেন। পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের কৃষকের ভাগ্য খুলে যাবে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে দেশের জিডিপি ২ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পাবে। কৃষি, পর্যটন, শিল্প, শিক্ষাসহ নানা খাতে সাফল্য আসবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম