
প্রিন্ট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১০ এএম
সংস্কারের রাজনীতি, না রাজনীতির সংস্কার?

সাইফুল হক
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
আরও পড়ুন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাষ্ট্র-রাজনীতির সংস্কারের বিষয়াবলি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থাসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ১৬৬টি বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছে। অধিকাংশ দল ইতোমধ্যে বিষয়বস্তুর ওপর মতামত জানিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এসব মতামতের ভিত্তিতে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে।
কিন্তু কমিশন প্রদত্ত স্প্রেডশিটে যেভাবে উত্তর চাওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি সম্পর্কে যেভাবে স্কুলপড়ুয়াদের এমসিকিউ প্রশ্নপত্রের মতো কেবল টিকচিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে, তা দিয়ে বিষয়বস্তুর ওপর মতামত দেওয়া কঠিন। এভাবে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকৃত অবস্থান ব্যক্ত করাও রীতিমতো দুরূহ। কারণ, কোনো ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে কেবল একমত/একমত নই/আংশিকভাবে একমত-এভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মতামত জানানোর ভেতর দিয়ে বাস্তবে বিষয়বস্তুর ওপর কতখানি সুবিচার করা যাবে, তা নিয়ে বহু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। বেশকিছু রাজনৈতিক দল এভাবে উত্তর দিতে চায়নি বলে স্প্রেডশিটে মতামত জানানো থেকে বিরত রয়েছে।
এক্ষেত্রে একটা গুরুত্ববহ প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। আর তা হচ্ছে, বিষয়গুলো এমনভাবে পেশ করা হয়েছে, যা থেকে এরকম ধারণা হওয়ার সুযোগ আছে যে, ঐকমত্য কমিশন সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঠেলতে ঠেলতে একটা বিশেষ দিকে নিয়ে যেতে চায়। অবশ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার আমাদের জানিয়েছেন, তাদের এ ধরনের কোনো উদ্দেশ্য নেই। তারা কেবল সঞ্চালকের ভূমিকাই পালন করতে চান।
কিন্তু সংস্কার প্রশ্নে মতৈক্যে পৌঁছানোর আগেই সংস্কার ছাপিয়ে সংস্কারের রাজনীতিটাই প্রবল হয়ে উঠেছে। দিনশেষে গোটা রাষ্ট্র-রাজনীতির কতটা সংস্কার করা যাবে, সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও এখন সংস্কার নিয়ে যে বাগ্বিতণ্ডা চলছে, এর মূলে রয়েছে রাজনীতি, রাজনৈতিক অংশীজনদের রাজনীতির ভিত্তি ও রাজনৈতিক মেরূকরণ গড়ে তোলার লক্ষ্য।
১৫ বছর ধরে যে রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে রয়েছে, তারা অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি আর কিছুটা সামগ্রিক পরিস্থিতির চাপে তিন বছর আগেই ৩১ দফাসহ সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের কর্মসূচি তুলে ধরেছে। বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো তিন বছর ধরেই দেশবাসীর কাছে সংস্কারের ব্যাপারে তাদের অঙ্গীকারের কথা বলে আসছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা অপরাপর রাজনৈতিক দলও নিজেদের মতো করে সংস্কার প্রস্তাব হাজির করেছে। বাস্তবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই গেল ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের অনেক আগেই জনগণের কাছে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে। আর এটা সবার জানা, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে জনপরিসরে সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ কোনো এজেন্ডা ছিল না। ছাত্র-তরুণদের আশু নয় দফা, আন্দোলনের তুঙ্গ মুহূর্তে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন বিদায়ের একদফায় পরিণত হয়েছিল; আর রাজনৈতিক দিক থেকে আন্দোলনের প্রধান ইস্যু ছিল ভোটাধিকার তথা গণতন্ত্রের প্রশ্ন। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে দু-একটিও যদি তুলনামূলকভাবে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হতো, তাহলে জনগণকে এ রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের পথে যেতে হতো না।
এটা বিস্ময়কর, এখন তরুণদের রাজনৈতিক দলসহ কেউ কেউ সংস্কারের ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে আঙুল তুলছেন, তারা সংস্কার ছাড়াই যেনতেনভাবে নির্বাচনে যেতে চান। এ অভিযোগের যে কোনো রাজনৈতিক সারবত্তা নেই, তা দেশবাসী জানে, অভিযোগকারীরাও জানেন। জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচারের ইস্যুতেও তারা চরম দায়িত্বহীনভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে অভিযুক্ত করে আসছেন। অথচ গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে যে বর্বরোচিত গণহত্যা হয়েছে, লোমহর্ষক যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার উপযুক্ত বিচারের ব্যাপারেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার রয়েছে।
তাহলে এসব অভিযোগ কেন? কারণটা রাজনৈতিক ও রাজনৈতিক কৌশলের। কৌশলটা কী? তরুণ ও তরুণদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠদের রাজনৈতিক কৌশল হচ্ছে-সংস্কার ও গণহত্যার বিচারের ইস্যুতে তারাই চ্যাম্পিয়ন, এটি প্রমাণ করা। এটি প্রমাণ করতে পারলে রাজনৈতিক দলগুলোকে টেক্কা দিয়ে জনগণের মধ্যে কিছুটা জায়গা করে নেওয়া যায়। তাতে নিজেদের রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বের রাজনৈতিক ন্যায্যতাও খানিকটা প্রমাণ করা যায়। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে গণ-অভ্যুত্থানকে বিপ্লব হিসাবে আখ্যা দিয়ে তাদের প্রস্তাবিত ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা’কেন্দ্রিক তৎপরতা, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসাবে ঘোষণা করা, ’৭২-এর সংবিধান ছুড়ে ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদ নির্বাচনসহ এরকম আরও কিছু দাবি।
এসব দাবির সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিশেষ অবকাশ নেই; প্রশ্ন রয়েছে, দাবি অর্জনের বাস্তব রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি, প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও শ্রেণি মেরূকরণের অবস্থা নিয়ে। এসব দাবির পেছনের মতাদর্শিক অবস্থান কী, এর স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই। মধ্যপন্থার একটা শব্দ শোনা যায়; এর মাজেজা কী, অর্থ কী, তাও জানা যায় না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে মধ্যপন্থা সুবিধাবাদিতা হিসাবেই বেশি পরিচিতি পেয়েছে। এ মধ্যপন্থা পুঁজিতান্ত্রিক লিবারেল রাজনীতির আরও একটা চেহারা কি না, তাও পরিষ্কার নয়।
‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ নিয়ে আর কারা কথা বলছেন? ১৯৭১-এর প্রথম স্বাধীনতাযুদ্ধ যাদের বিব্রত করে, লজ্জিত করে, আজও অপরাধী হিসাবে সাব্যস্ত করে, যারা পুরোনো ইতিহাস ঢেকে রাখতে চান, তারাই বেশি বেশি করে দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা বলছেন। এ জনপদের মানুষের সবচেয়ে গৌরবের আখ্যান ১৯৭১-এর যে মহান সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, তাকে ছোট করার যে বহুমাত্রিক প্রচেষ্টা, তাও এখান থেকে উৎসারিত।
এসবই রাজনীতির অংশ। যে কোনো রাজনীতির পাটাতন তৈরি করতে দরকার হয় মতাদর্শিক রাজনীতি ও সংস্কৃতির নতুন ব্যাখ্যা, বিন্যাস। যারা সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চান ও নতুন রাজনীতির কথা বলছেন, তারা এখন আদাকাঁচড়াভাবে এ কাজগুলোই করার চেষ্টা করছেন। এতে দোষের কিছু নেই। সমস্যা হচ্ছে, এটি করতে গিয়ে কেউ কেউ আমাদের জনগণের সমগ্র রাজনৈতিক অভিযাত্রাকেই প্রকারান্তরে অস্বীকার বা অপনোদন করে আসছেন। তাতে আমাদের জনগণের রাজনৈতিক যাত্রার অসম্মান হয় না, বরং নিজেরাই ছোট হয়ে যান, ছিটকে পড়েন। অনেকে এখনো সুপারলেটিভ ডিগ্রিতে কথা বলছেন। তাদের অতিকথন বা হঠকারিতায় বিভক্তি, বিভাজন ক্রমাগত বাড়তে থাকলে গণ-অভ্যুত্থানের অসাধারণ অর্জন কতটা ধরে রাখা যাবে, তাও বোধকরি বিবেচনায় রাখা দরকার।
এ অবস্থায় আমাদের রাজনৈতিক সংস্কারের কী হবে? জাতীয় ঐকমত্য কমিশনই বা কোথায় দাঁড়াবে-এটি জরুরি প্রশ্ন। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে একমত হতে পারবে, ঐকমত্য কমিশনকে তার ওপরই ভিত্তি করতে হবে। বিশেষ কোনো দিকে হেলে পড়ে তাদের পক্ষ থেকে জবরদস্তি করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
এটা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান অপরিহার্য। গণতন্ত্র মর্মবস্তুর দিক থেকে অসাম্প্রদায়িক ও সমতাধর্মী, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের পাশাপাশি রাজনৈতিক, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের অধিকার, মর্যাদা ও প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সংবিধান এটি নিশ্চিত করবে, রাষ্ট্র কোনো নাগরিকের মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, লিঙ্গীয় পরিচয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের জন্য নাগরিকদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করবে না। একই সঙ্গে এ সংবিধান নাগরিকদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকারের এমন সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, যা সাংবিধানিক বা প্রশাসনিক কোনো আইন, বিধি বা অধ্যাদেশ দিয়ে বাতিল, সংকুচিত বা স্থগিত রাখতে পারবে না।
এ ধরনের একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, সমতাধর্মী ও অসাম্প্রদায়িক সংবিধান ব্যতিরেকে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের কোনো অবকাশ নেই। ২০২৪-এ ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থান পরিবর্তনের বিপুল প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছে সত্য; কিন্তু সাংবিধানিকভাবে এ ধরনের প্রত্যাশা পূরণের জন্য সমাজের মধ্যে যে মতাদর্শিক-রাজনৈতিক চৈতন্য ও বোঝাপড়া দরকার, বাস্তবে তা এখনো গড়ে উঠেনি। আর এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিসরের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন বা সংবিধানের কাঙ্ক্ষিত সংশোধন করাও সম্ভব হবে না। রাজনৈতিক অংশীজনরা যদি এ ধরনের পুনর্লিখিত বা সংশোধিত সংবিধান কার্যকর করতে অঙ্গীকারবদ্ধ না থাকেন, তাহলে সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কারের উদ্যোগও সফল হবে না।
বাস্তব এ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বিদ্যমান সংবিধান কতখানি গণতান্ত্রিক করা যায়, সংবিধান কীভাবে একটা বহুত্ববাদী সমাজে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিসর বৃদ্ধি করতে পারে, সরকারকে কীভাবে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক করা যাবে এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের তিন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কীভাবে যৌক্তিক ও ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক নিশ্চিত করা যাবে-সংবিধান সংস্কারে এ দিকগুলোই মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা উচিত।
আর নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পথে সরকার পরিবর্তনে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এ কারণে ধসে পড়া নির্বাচনি ব্যবস্থার খোলনলচে পালটানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। অনেকদিন ধরেই গোটা নির্বাচনি ব্যবস্থা টাকার খেলায় পর্যবসিত হয়েছে। ফলে জাতীয় সংসদও অনেকটা বিত্তবানদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। অথচ নির্বাচনসংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবে টাকার খেলা বন্ধে নির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবই নেই। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রস্তাবে এ বিষয়ে তেমন কোনো মনোযোগ দেখা যায়নি।
নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিশনের প্রস্তাবে স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে কি না, খোদ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেই এ প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু তা যেন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও এক্তিয়ার কমিয়ে না ফেলে, তাও নিশ্চিত করা দরকার। স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশন যাতে ভোটের অধিকার রক্ষা এবং সরকার ও সরকারি দলের অনৈতিক প্রভাব ও হস্তক্ষেপের বাইরে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, তার উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকা দরকার।
আরেকটি বিস্ময়কর দিক হচ্ছে, এতগুলো কমিশন গঠিত হলেও সমাজের নির্মম বৈষম্য বিলোপে কোনো কমিশন গঠিত হয়নি। অথচ এটা জানা কথা, কয়েক দশক ধরে চলে আসা দুর্বৃত্ত রাজনীতির সঙ্গে দুর্বৃত্ত অর্থনীতির যে অশুভ মেলবন্ধন, তা অব্যাহত থাকলে প্রকট বৈষম্য দূর হবে না এবং সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কারও আখেরে টেকসই হবে না। রাষ্ট্র-রাজনীতির গণতান্ত্রিক উত্তরণে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া দরকার; জনগণের অধিকার ও মুক্তি নিশ্চিত করতে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে এখন জাতীয় সমঝোতা গড়ে তোলার এক অসাধারণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যেহেতু অনেক আগে থেকেই সংস্কারের কথা বলে আসছে, সে কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ তুলনামূলক সহজ হয়েছে। বিশেষ কোনো পক্ষ অবলম্বন না করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কারের প্রশ্নে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগোলে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ সহজতর হবে। এক্ষেত্রে চাপাচাপি করতে গেলে যেটুকু অর্জন করা যেত, তাও হয়তো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সাইফুল হক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
saifulhuq888@gmail.com