উৎসবপাগল উপমহাদেশীয় সংস্কৃতিতে বেশ ভরপুর একটা সময় গেল গত সপ্তাহটা। প্রথমে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা। আর তার রেশ না কাটতেই মুসলমানদের ঈদ। আর উৎসবপাগল উপমহাদেশীয় বিনোদন রাজ্যে তাই ধর্ম যার যার উৎসব সবার, এ মতবাদকে পুঁজি করে মেতেছিল বেশ ক’দিনের আনন্দযজ্ঞে। আর সেই সময়টাতে বলিউডের ফিল্মপাড়ায় কোনো একটা অঘটন হবে না তাই কী হয়? ঘটেছেও তাই। গত বছরের কিং খান আর বালাজি ফিল্মসের দখল লড়াইয়ের কথা মনে আছে নিশ্চই। খান সাহেবের চেন্নাই এক্সপ্রেসের প্রবল গতির চোটে এক সপ্তাহ পিছিয়েও মুখ থুবড়ে পড়া থেকে বাঁচতে পারেনি বালাজির ‘ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন মুম্বাই দোবারা’। এ বছরের প্রথম ঈদে সালমানের ‘কীক’ এর দাপটে কেউ কাছে ভিড়তে সাহস না করলেও ঠিক দখলের লড়াইটা বেশ জমেছে এবার। পূজা আর ঈদের ডাবল ধামাক্কায় এবার সম্পূর্ণ সম্মুখ সমরে নাম লিখিয়েছেন ঋত্বিক রোশন আর শহীদ কাপুর। ঋত্বিকের বাবা রাকেশ রোশন আর শহীদের বাবা পঙ্কজের মধ্যে বরাবরই বন্ধুবৎসল সম্পর্কের কথা শোনা গেলেও এবার দুই পুত্রের মধ্যে এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বেশ ভাবিয়েই তুলেছে সবাইকে। যদিওবা লড়াইটা নিছকই বক্স অফিসকেন্দ্রিক, তারপরও সফলতা ও ব্যর্থতাকে ঘিরে খানিকটা মতদ্বন্দ্ব তৈরি হয় বৈকী।
প্রথমটায় চলুন একটু ঘুরে দেখি ছবি দুটির প্রেক্ষাপট। শুরুতেই বলে নেয়া ভালো, আদতে কোনোটাকেই এক ধাক্কায় মৌলিক ছবি বলা চলে না। একদিকে শেকসপিয়ারের বিখ্যাত উপন্যাসের ‘হ্যামলেট’ এর ভারতীয় সংস্করণ শহীদের ‘হায়দার’। অনবদ্য গল্পকে কেন্দ্র করে পুরোদস্তুর ড্রামা ধাঁচের ছবিটির সঙ্গে টেক্কা দেয়া ব্যাং ব্যাং একেবারেই মারকুটে অ্যাকশন ঘরানার। সেটি আদতে কোনো প্রখ্যাত পুস্তকনির্ভর না হলেও ওর মূলটা গাঁথা হলিউডি ফিল্মের চিত্রনাট্যে। ২০১০ সালের টম ক্রুজ-ক্যামেরজ ডিয়াজ জুটির অ্যাকশন ফ্লিক ‘নাইট অ্যান্ড ডে’ ছবির ভারতীয় রিমেকে রূপ দেখিয়েছেন ঋত্বিক-ক্যাটরিনা। বহু দিনের শুটিং ধকল, মারাত্মক সব স্ট্যান্ট করতে গিয়ে নায়কের আহত হওয়া আর দুর্ধর্ষ সব অভিজ্ঞতার ঝুলিতে চেপে অনেক আগে থেকেই হায়দারকে ছাপিয়ে উঠেছিল ব্যাং ব্যাং। মুক্তির আগেও এ নিয়ে অগ্রগামিতায় হায়দারকে অনেকটাই দেখা গেছে পিছিয়ে পড়তে। প্রিমিয়ারের বহু আগেই টাইটেল গান রিলিজ করেই ইঁদুর দৌড়ে এগিয়ে থাকার অবস্থানটা অনেকটাই পাকা করে নেয় ঋত্বিকের শিবির। তার ওপর পুরো ছবির মার্কেটিং আর প্রচারণার দিক থেকে এগিয়ে ছিল পুরোটা সময় ‘হায়দার’-এর চেয়ে অনেকগুণ বেশি। যার বড় একটা প্রতিফলন দেখা যায় সিনেমা হলের পর্দা দখলের ক্ষেত্রেও। চলতি মাসের ২ তারিখে সর্বসাকুল্যে ১ হাজার ২০০ সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে ‘হায়দার’ ভারতজুড়ে। কিন্তু সেদিক থেকে অনেকগুণ এগিয়ে ব্যাং ব্যাং দখল করে নেয় প্রায় ৫ হাজার সিনেমা পর্দা। মার্কেটিং এ দাপিয়ে বেড়ানো ব্যাং সিনেমার পর্দা দখলের দৌড়ে এগিয়ে থেকে জয় করে নেয় পয়লা সপ্তাহের আয়ও। যেখানে প্রথম সপ্তাহান্তে ব্যাং ব্যাং জয়ডংকা বাজিয়েছে তার বিপুল আয়ে সেখানে হায়দারের আয়ের ঘরে সংখ্যাটা মাত্র তিন থেকে চার কোটিতেই সীমাবদ্ধ। আর সেই তুলনায় প্রিমিয়ারের সময়ই নাকি ব্যাং ব্যাং লুফে নিয়েছে ২৫ কোটির বিশাল সংখ্যা।
তবে ঠিক বিপরীত সূচকের দেখা মেলে ছবি দুটো আইএমডিবি রেটিংয়ে। বিশ্ব চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য এ প্লাটফর্মে ‘ব্যাং ব্যাং’ যেখানে মাত্র সাড়ে সাত হাজার ভোটের মাধ্যমে রেটিং তুলতে সক্ষম হয়েছে দশের মধ্যে ৫.৯। ঠিক একই প্রেক্ষাপটে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ দর্শকের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে ‘হায়দার’-এর ফিল্ম রেটিং গিয়ে ঠেকেছে ৮.৯। সত্যিই বাণিজ্য ও সূচকের সঙ্গে এ দর্শক জরিপের মানগত বিশাল বৈপরিত্য চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ইঁদুরকে এগিয়ে দর্শকের মন জয়ে সেই বিষয়টা সত্যিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সত্যিটা আসলে কী, সেটা জানতে হয়তো প্রতীক্ষায় থাকতে হবে আরও বেশ কিছু সময়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
উৎসবের বলিউড
দখল বাণিজ্যে কে এগিয়ে?
উৎসবপাগল উপমহাদেশীয় সংস্কৃতিতে বেশ ভরপুর একটা সময় গেল গত সপ্তাহটা। প্রথমে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা। আর তার রেশ না কাটতেই মুসলমানদের ঈদ। আর উৎসবপাগল উপমহাদেশীয় বিনোদন রাজ্যে তাই ধর্ম যার যার উৎসব সবার, এ মতবাদকে পুঁজি করে মেতেছিল বেশ ক’দিনের আনন্দযজ্ঞে। আর সেই সময়টাতে বলিউডের ফিল্মপাড়ায় কোনো একটা অঘটন হবে না তাই কী হয়? ঘটেছেও তাই। গত বছরের কিং খান আর বালাজি ফিল্মসের দখল লড়াইয়ের কথা মনে আছে নিশ্চই। খান সাহেবের চেন্নাই এক্সপ্রেসের প্রবল গতির চোটে এক সপ্তাহ পিছিয়েও মুখ থুবড়ে পড়া থেকে বাঁচতে পারেনি বালাজির ‘ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন মুম্বাই দোবারা’। এ বছরের প্রথম ঈদে সালমানের ‘কীক’ এর দাপটে কেউ কাছে ভিড়তে সাহস না করলেও ঠিক দখলের লড়াইটা বেশ জমেছে এবার। পূজা আর ঈদের ডাবল ধামাক্কায় এবার সম্পূর্ণ সম্মুখ সমরে নাম লিখিয়েছেন ঋত্বিক রোশন আর শহীদ কাপুর। ঋত্বিকের বাবা রাকেশ রোশন আর শহীদের বাবা পঙ্কজের মধ্যে বরাবরই বন্ধুবৎসল সম্পর্কের কথা শোনা গেলেও এবার দুই পুত্রের মধ্যে এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বেশ ভাবিয়েই তুলেছে সবাইকে। যদিওবা লড়াইটা নিছকই বক্স অফিসকেন্দ্রিক, তারপরও সফলতা ও ব্যর্থতাকে ঘিরে খানিকটা মতদ্বন্দ্ব তৈরি হয় বৈকী।
প্রথমটায় চলুন একটু ঘুরে দেখি ছবি দুটির প্রেক্ষাপট। শুরুতেই বলে নেয়া ভালো, আদতে কোনোটাকেই এক ধাক্কায় মৌলিক ছবি বলা চলে না। একদিকে শেকসপিয়ারের বিখ্যাত উপন্যাসের ‘হ্যামলেট’ এর ভারতীয় সংস্করণ শহীদের ‘হায়দার’। অনবদ্য গল্পকে কেন্দ্র করে পুরোদস্তুর ড্রামা ধাঁচের ছবিটির সঙ্গে টেক্কা দেয়া ব্যাং ব্যাং একেবারেই মারকুটে অ্যাকশন ঘরানার। সেটি আদতে কোনো প্রখ্যাত পুস্তকনির্ভর না হলেও ওর মূলটা গাঁথা হলিউডি ফিল্মের চিত্রনাট্যে। ২০১০ সালের টম ক্রুজ-ক্যামেরজ ডিয়াজ জুটির অ্যাকশন ফ্লিক ‘নাইট অ্যান্ড ডে’ ছবির ভারতীয় রিমেকে রূপ দেখিয়েছেন ঋত্বিক-ক্যাটরিনা। বহু দিনের শুটিং ধকল, মারাত্মক সব স্ট্যান্ট করতে গিয়ে নায়কের আহত হওয়া আর দুর্ধর্ষ সব অভিজ্ঞতার ঝুলিতে চেপে অনেক আগে থেকেই হায়দারকে ছাপিয়ে উঠেছিল ব্যাং ব্যাং। মুক্তির আগেও এ নিয়ে অগ্রগামিতায় হায়দারকে অনেকটাই দেখা গেছে পিছিয়ে পড়তে। প্রিমিয়ারের বহু আগেই টাইটেল গান রিলিজ করেই ইঁদুর দৌড়ে এগিয়ে থাকার অবস্থানটা অনেকটাই পাকা করে নেয় ঋত্বিকের শিবির। তার ওপর পুরো ছবির মার্কেটিং আর প্রচারণার দিক থেকে এগিয়ে ছিল পুরোটা সময় ‘হায়দার’-এর চেয়ে অনেকগুণ বেশি। যার বড় একটা প্রতিফলন দেখা যায় সিনেমা হলের পর্দা দখলের ক্ষেত্রেও। চলতি মাসের ২ তারিখে সর্বসাকুল্যে ১ হাজার ২০০ সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে ‘হায়দার’ ভারতজুড়ে। কিন্তু সেদিক থেকে অনেকগুণ এগিয়ে ব্যাং ব্যাং দখল করে নেয় প্রায় ৫ হাজার সিনেমা পর্দা। মার্কেটিং এ দাপিয়ে বেড়ানো ব্যাং সিনেমার পর্দা দখলের দৌড়ে এগিয়ে থেকে জয় করে নেয় পয়লা সপ্তাহের আয়ও। যেখানে প্রথম সপ্তাহান্তে ব্যাং ব্যাং জয়ডংকা বাজিয়েছে তার বিপুল আয়ে সেখানে হায়দারের আয়ের ঘরে সংখ্যাটা মাত্র তিন থেকে চার কোটিতেই সীমাবদ্ধ। আর সেই তুলনায় প্রিমিয়ারের সময়ই নাকি ব্যাং ব্যাং লুফে নিয়েছে ২৫ কোটির বিশাল সংখ্যা।
তবে ঠিক বিপরীত সূচকের দেখা মেলে ছবি দুটো আইএমডিবি রেটিংয়ে। বিশ্ব চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য এ প্লাটফর্মে ‘ব্যাং ব্যাং’ যেখানে মাত্র সাড়ে সাত হাজার ভোটের মাধ্যমে রেটিং তুলতে সক্ষম হয়েছে দশের মধ্যে ৫.৯। ঠিক একই প্রেক্ষাপটে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ দর্শকের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে ‘হায়দার’-এর ফিল্ম রেটিং গিয়ে ঠেকেছে ৮.৯। সত্যিই বাণিজ্য ও সূচকের সঙ্গে এ দর্শক জরিপের মানগত বিশাল বৈপরিত্য চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ইঁদুরকে এগিয়ে দর্শকের মন জয়ে সেই বিষয়টা সত্যিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সত্যিটা আসলে কী, সেটা জানতে হয়তো প্রতীক্ষায় থাকতে হবে আরও বেশ কিছু সময়।