jugantor
ঈদের ছবির পোস্টমর্টেম

  এফ আই দীপু  

১৬ অক্টোবর ২০১৪, ০০:০০:০০  | 

ঈদ এলেই একসঙ্গে অনেক ছবি মুক্তি দেয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। গেল ঈদেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে চারটি ছবি। এরমধ্যে তিনটি ছবিই শাকিব খান অভিনীত। ‘হিটম্যান’, ‘কঠিন প্রতিশোধ’ ও ‘সেরা নায়ক’ নিয়ে শাকিব খান আরাম কেদারায় বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। অন্যদিকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েও আরফিন শুভ ও আঁচল অভিনীত ‘কিস্তিমাত’ সফলতার এক দুই কিংবা তিন নাম্বার আসনের ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি। ঈদের এক সপ্তাহ শেষে হল রিপোর্টে দেখা গেছে, সব সমালোচনা পেছনে ফেলে এবারের ঈদে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে ‘হিটম্যান’ই শীর্ষাসন দখল করেছে। ব্যাপক প্রচারণায় আরেফিন শুভর ছবি ‘কিস্তিমাত’ নিয়ে মাতামাতি হলেও শাকিব ঝড়ে উড়ে গেছে সবকিছু। প্রথম থেকেই শাকিবের ছবি ছিল আলোচনার শীর্ষে। ঈদের আগে হল বুকিংয়ের রেকর্ডও গড়েছে ‘হিটম্যান’। ১১২টি হল নিয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত শতকরা নব্বই ভাগ কালেকশন ছিল এই ছবিটির দখলে। অন্যদিকে ঈদের ছবির লড়াইয়ে দ্বিতীয় অবস্থানেও রয়েছেন শাকিব খান। ৪২টি হলে মুক্তিপ্রাপ্ত শতকরা সত্তর ভাগ কালেকশন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ‘কঠিন প্রতিশোধ’ ছবিটি এক নাম্বার আসন দখলের লড়াইয়ে এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিন নাম্বার আসনের জন্য অপুকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করেছেন শাকিব খানই। এই আসনটি দখল করেছে এই জুটি অভিনীত ৪০টি হলে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সেরা নায়ক’ ছবিটি। এ ছবির গত কালেকশন হচ্ছে শতকরা ৫০ ভাগ। প্রচণ্ড যুদ্ধ চালিয়েও আঁচলকে নিয়ে আরফিন শুভ মোটেও সুবিধা করতে পারেননি। ফলে এই জুটি অভিনীত ‘কিস্তিমাত’ ছবিটি শতকরা ৩৫ ভাগ কালেকশন নিয়ে চার নাম্বার আসনে থেকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। অথচ সর্বনিু ৩৬ হলে মুক্তিপ্রাপ্ত ঈদের আগে এই ছবিটির মুখরোচক প্রচারণাই ছিল বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনও পর্যন্ত হল মালিকরা শাকিব খানের ছবির জন্য সর্বনিু এক লাখ টাকা মিনিমাম গ্যারান্টি দিয়ে থাকেন। এই সুবিধায় ঈদে ছবি ‘হিটম্যান’ অন্যদের টেক্কা দিয়ে ঈদের আগেই এগিয়ে গেছে। পাশাপাশি শাকিব খানের কল্যাণে ‘কঠিন প্রতিশোধ’ ও ‘সেরা নায়ক’ও সফলতা পেয়েছে। অন্যদিকে পরপর কয়েকটি ছবি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থতার কারণে আরফিন শুভর ক্ষেত্রে এই এমজির পরিমাণটা ৪০ হাজার টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তার ওপর ‘কিস্তিমাত’ এর ব্যর্থতায় এই পরিমাণ আরও কমতে পারে বলেই সিনেবোদ্ধাদের ধারণা।

এদিকে বুকিং এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের প্রথম সপ্তাহে ‘হিটম্যান’ এর আনুমানিক আয় ১ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখনও এ ছবিটির চাহিদা দর্শক চাহিদা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন হল মালিক। অন্যদিকে ‘কিস্তিমাত’-এর প্রথম সপ্তাহের আয় ছিল প্রায় আয় ৩০ লাখ টাকা। অবশ্য এই হিসাবের মধ্যে কিছুটা গরমিল থাকে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।

ঈদের ছবির ফলাফল বিশ্লেষণে এটাই প্রতীয়মান হল, শাকিব খান এখনও সেরা হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন। অন্যদিকে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, শুধু ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচারণা চালালেই ছবির সফলতা পাওয়া যায় না। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই হলে গিয়ে সিনেমা দেখেন না। অথচ তাদের একটি প্রশংসাসূচক মন্তব্যে পরিচালক প্রযোজক কিংবা শিল্পীরা আহ্লাদে আটখানা হয়ে উঠেন। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ঈদের ছবি ‘কিস্তিমাত’। শুধু ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কের বিলাসবহুল সিনেমা হল ‘ব্লকবাস্টার’ ছাড়া এ ছবির সাফল্য অন্য কোথাও চোখে পড়েনি। হলের পরিবেশ ও আধুনিকতার কারণে ব্লকবাস্টারে ছবিটির সফলতা ছবির প্রযোজককে আনন্দ দিলেও দেশের অন্যান্য প্রেক্ষাগৃহে ছবির ব্যর্থতা তার সাময়িক আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে।

এতসব কিছুর পরও এবারের ঈদের ছবিও নকলের অভিযোগ থেকে মুক্তি পায়নি। বেশ কয়েকটি তামিল এবং তেলেগু ছবির বাংলা সংস্করণই হচ্ছে এবারের ঈদ আয়োজন। দর্শকরা এখন হলমুখী হচ্ছেন। প্রযুক্তির কল্যাণে সবকিছু এখন হাতের নাগালের মধ্যেই। তাই নকলের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে মৌলিকত্বের দিকে নজর দেয়াটাই এখন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন সিনেবোদ্ধারা।


 

সাবমিট

ঈদের ছবির পোস্টমর্টেম

 এফ আই দীপু 
১৬ অক্টোবর ২০১৪, ১২:০০ এএম  | 

ঈদ এলেই একসঙ্গে অনেক ছবি মুক্তি দেয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। গেল ঈদেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে চারটি ছবি। এরমধ্যে তিনটি ছবিই শাকিব খান অভিনীত। ‘হিটম্যান’, ‘কঠিন প্রতিশোধ’ ও ‘সেরা নায়ক’ নিয়ে শাকিব খান আরাম কেদারায় বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। অন্যদিকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েও আরফিন শুভ ও আঁচল অভিনীত ‘কিস্তিমাত’ সফলতার এক দুই কিংবা তিন নাম্বার আসনের ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি। ঈদের এক সপ্তাহ শেষে হল রিপোর্টে দেখা গেছে, সব সমালোচনা পেছনে ফেলে এবারের ঈদে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে ‘হিটম্যান’ই শীর্ষাসন দখল করেছে। ব্যাপক প্রচারণায় আরেফিন শুভর ছবি ‘কিস্তিমাত’ নিয়ে মাতামাতি হলেও শাকিব ঝড়ে উড়ে গেছে সবকিছু। প্রথম থেকেই শাকিবের ছবি ছিল আলোচনার শীর্ষে। ঈদের আগে হল বুকিংয়ের রেকর্ডও গড়েছে ‘হিটম্যান’। ১১২টি হল নিয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত শতকরা নব্বই ভাগ কালেকশন ছিল এই ছবিটির দখলে। অন্যদিকে ঈদের ছবির লড়াইয়ে দ্বিতীয় অবস্থানেও রয়েছেন শাকিব খান। ৪২টি হলে মুক্তিপ্রাপ্ত শতকরা সত্তর ভাগ কালেকশন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ‘কঠিন প্রতিশোধ’ ছবিটি এক নাম্বার আসন দখলের লড়াইয়ে এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিন নাম্বার আসনের জন্য অপুকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করেছেন শাকিব খানই। এই আসনটি দখল করেছে এই জুটি অভিনীত ৪০টি হলে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সেরা নায়ক’ ছবিটি। এ ছবির গত কালেকশন হচ্ছে শতকরা ৫০ ভাগ। প্রচণ্ড যুদ্ধ চালিয়েও আঁচলকে নিয়ে আরফিন শুভ মোটেও সুবিধা করতে পারেননি। ফলে এই জুটি অভিনীত ‘কিস্তিমাত’ ছবিটি শতকরা ৩৫ ভাগ কালেকশন নিয়ে চার নাম্বার আসনে থেকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। অথচ সর্বনিু ৩৬ হলে মুক্তিপ্রাপ্ত ঈদের আগে এই ছবিটির মুখরোচক প্রচারণাই ছিল বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনও পর্যন্ত হল মালিকরা শাকিব খানের ছবির জন্য সর্বনিু এক লাখ টাকা মিনিমাম গ্যারান্টি দিয়ে থাকেন। এই সুবিধায় ঈদে ছবি ‘হিটম্যান’ অন্যদের টেক্কা দিয়ে ঈদের আগেই এগিয়ে গেছে। পাশাপাশি শাকিব খানের কল্যাণে ‘কঠিন প্রতিশোধ’ ও ‘সেরা নায়ক’ও সফলতা পেয়েছে। অন্যদিকে পরপর কয়েকটি ছবি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থতার কারণে আরফিন শুভর ক্ষেত্রে এই এমজির পরিমাণটা ৪০ হাজার টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তার ওপর ‘কিস্তিমাত’ এর ব্যর্থতায় এই পরিমাণ আরও কমতে পারে বলেই সিনেবোদ্ধাদের ধারণা।

এদিকে বুকিং এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের প্রথম সপ্তাহে ‘হিটম্যান’ এর আনুমানিক আয় ১ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখনও এ ছবিটির চাহিদা দর্শক চাহিদা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন হল মালিক। অন্যদিকে ‘কিস্তিমাত’-এর প্রথম সপ্তাহের আয় ছিল প্রায় আয় ৩০ লাখ টাকা। অবশ্য এই হিসাবের মধ্যে কিছুটা গরমিল থাকে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।

ঈদের ছবির ফলাফল বিশ্লেষণে এটাই প্রতীয়মান হল, শাকিব খান এখনও সেরা হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন। অন্যদিকে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, শুধু ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচারণা চালালেই ছবির সফলতা পাওয়া যায় না। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই হলে গিয়ে সিনেমা দেখেন না। অথচ তাদের একটি প্রশংসাসূচক মন্তব্যে পরিচালক প্রযোজক কিংবা শিল্পীরা আহ্লাদে আটখানা হয়ে উঠেন। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ঈদের ছবি ‘কিস্তিমাত’। শুধু ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কের বিলাসবহুল সিনেমা হল ‘ব্লকবাস্টার’ ছাড়া এ ছবির সাফল্য অন্য কোথাও চোখে পড়েনি। হলের পরিবেশ ও আধুনিকতার কারণে ব্লকবাস্টারে ছবিটির সফলতা ছবির প্রযোজককে আনন্দ দিলেও দেশের অন্যান্য প্রেক্ষাগৃহে ছবির ব্যর্থতা তার সাময়িক আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে।

এতসব কিছুর পরও এবারের ঈদের ছবিও নকলের অভিযোগ থেকে মুক্তি পায়নি। বেশ কয়েকটি তামিল এবং তেলেগু ছবির বাংলা সংস্করণই হচ্ছে এবারের ঈদ আয়োজন। দর্শকরা এখন হলমুখী হচ্ছেন। প্রযুক্তির কল্যাণে সবকিছু এখন হাতের নাগালের মধ্যেই। তাই নকলের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে মৌলিকত্বের দিকে নজর দেয়াটাই এখন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন সিনেবোদ্ধারা।


 

 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র