jugantor
ঈদের টিভি আয়োজন
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট
ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের সবক’টি টিভি চ্যানেল ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করেছে সপ্তাহব্যাপী। অনেক আয়োজন আর হরেক বিজ্ঞাপনের ভিড়ে চ্যানেলগুলো দর্শকদের কতটা বিনোদিত করতে পেরেছে তা নিয়ে আজকের এ আয়োজন। ঈদের সময়টাতে চ্যানেলে চ্যানেলে চোখ সাঁটিয়ে থেকে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটি লিখেছেন-

  অনুরূপ আইচ  

১৬ অক্টোবর ২০১৪, ০০:০০:০০  | 

ঈদের পরদিন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার একজন সাংবাদিক ফেসবুকে সুন্দর একটা স্টেটাস দিয়েছিলেন। স্টেটাসটি ছিল এ রকম-

‘হানিফ সংকেত আসলেই জিনিয়াস। এবার ঈদে ইত্যাদি না থাকায় পর্দায় তার উপস্থিতি খুব মিস করেছি। আর ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন চ্যানেলের বস্তাপচা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখে মনে হয়েছে, হানিফ সংকেত ছাড়া এ দেশে আর কেউ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান বানাতে পারে না।’

এ কথা আরও অনেক দর্শক জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে। অনেকে আবার এও বলেছেন, ‘ঈদে হানিফ সংকেতের ইত্যাদি দেখতে না পারার খায়েশ মিটিয়েছি এটিএন বাংলায় প্রচারিত পাঁচফোড়ন অনুষ্ঠানটি দেখে। উল্লেখ্য, পাঁচফোড়ন অনুষ্ঠানটি হানিফ সংকেতেরে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ফাগুন অডিও ভিশনের ব্যানারে নির্মিত। এছাড়া এটিএন বাংলার অন্যান্য আয়োজন ছিল গৎবাঁধা ধাঁচের। নতুন কিছু ছিল না তাতে।

দেশের সরকারি চ্যানেল হিসেবে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড আয়োজন করেছিল ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠানগুলোতে যে পর্যাপ্ত বাজেটের ঘাটতি ছিল তা বোঝা গেছে অনুষ্ঠানগুলো দেখে। বিটিভির ঐতিহ্যবাহী ঈদ অনুষ্ঠান আনন্দমেলাতেও তার ছাপ রয়েছে। তবুও অনুষ্ঠানটিকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টায় কমিত ছিল না আনজাম মাসুদের মাঝে। এছাড়া বিটিভিতে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যান্ড শো, রম্য বিতর্ক, রুপালি সিঁড়ি ছিল মধ্যম মানের। অনুষ্ঠানগুলোতে সমকালীন বিষয়ের কমতি ছিল। বিটিভির ঈদ আয়োজনের নাটকগুলো বিনোদনের খোরাক জোগায়নি তেমন একটা। তার মাঝেও শামীম জামানের নাটক ‘থাপ্পড়’ ভালো ছিল। পাশাপাশি বিটিভিতে ঈদ উপলক্ষে পাকেজ নাটক নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি দলের প্রভাব ও বিটিভির কর্মকর্তাদের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রতি বছরই ওঠে। এবারও তেমন আলোচনা হচ্ছে মিডিয়া পাড়ায়। ঈদ উপলক্ষে বিটিভিতে প্রচারিত সিনেমাগুলোও তেমন একটা সাড়া ফেলতে পারেনি দর্শকদের মাঝে। তাই দর্শকরা ঈদে বিটিভির চেয়ে অন্য চ্যানেলের অনুষ্ঠান বেশি দেখেছে বলে জানা গেছে যুগান্তরের বিনোদন বিভাগের জরিপে।

প্রতি বছর ঈদ আয়োজনে চ্যানেল আই ভালো কিছু করার চেষ্টায় থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ চ্যানেলের প্রাণপুরুষ ফরিদুর রেজা সাগরের ‘ছোটকাকু’ সিরিজের ‘রাত বিরাতে, সাতক্ষীরাতে’ শিশু-কিশোরদের ঈদ আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ এ ধারাবাহিকটি নির্মাণে বেশ আন্তরিকতার ছাপ রেখেছেন আফজাল হোসেন। এবার আসি চ্যানেল আইয়ের আরেক অপরিহার্য ব্যক্তি শাইখ সিরাজ প্রসঙ্গে। দেশ বরেণ্য কৃষিবিষয়ক এ ব্যক্তিত্ব বিশেষ বিশেষ দিনে কৃষকদের নিয়ে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান করে থাকেন। তেমনই একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের নাম ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ ঈদেও সফল হয়েছেন শাইখ সিরাজ। তার পরিকল্পনা ও নির্মাণে কৃষকদের জন্য এত সুন্দর অনুষ্ঠান এর আগে আর কেউ করতে পারেননি। চ্যানেল আইয়ের কল্যাণে মেহের আফরোজ শাওনের নির্মাণে এ ঈদেও দর্শক উপভোগ করেছেন হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে নাটক ‘বিভ্রম’। পাশাপাশি একই চ্যানেলে প্রচারিত লাট সাহেবের নাতি, গনি মিয়ার কোচিং সেন্টার, কালো ঝড়, নায়িকা নাটকগুলো ভালো লেগেছে। হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে জুয়েল রানা পরিচালিত ‘গোবর’ টেলিছবিটি ভালো ছিল। এছাড়া ‘মতিন সাহেবের চমশা’, ‘ঢঙের পাগল’, ‘আনসার আলী টকার’, ‘চাঁদমুখ’ টেলিছবিগুলো ভালো লেগেছে।

বাংলাভিশন-এর এবারের ঈদ আয়োজনে ভালো কিছু অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার প্রচেষ্টা ছিল। বিশেষ করে তাদের বিশেষ ধারাবাহিক নাটক ‘সিকান্দার বক্স এখন বান্দরবান’ এবারও ভালো হয়েছে। তবে এ নাটকটির আর কোনো সিক্যুয়াল না হলে হয়তো সিকান্দার বক্সের প্রতি দর্শকের ভালোবাসা অটুট থাকবে অনেকদিন। পাশাপাশি সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘জামাইবন্দি’ ধারাবাহিকটিতে নিজস্বতার ছাপ রেখে তার ভক্তদের বিনোদিত করেছেন লাভলু। ঈদ আয়োজনে বাংলাভিশনের এক খণ্ডের নাটকগুলোর মধ্যে শামীম শাহেদের ‘মিশন ইনানী রয়েল রিসোর্ট’ নাটকটি উল্লেখ করার মতো। ভালো লেগেছে মারুফ মিঠুর নাটক ‘সেই রকম পানখোর’। তৌকীর-বিপাশার ‘মধ্যপ্রহর’ নাটকটিও সুন্দর ছিল। রওনক হাসানের ‘সাদাকালো’ নাটকটিও ছিল পছন্দসই। এছাড়া বাংলাভিশনের টেলিফিল্মগুলো ছিল মোটামুটি মানের। তবে ঈদ উপলক্ষে এ চ্যানেলের সিনেমাগুলো দর্শকদের হৃদয়গ্রাহী ছিল। অন্য অনুষ্ঠানগুলোতেও বাংলাভিশন বরাবরের মতো এবারও বৈচিত্র্য রাখার চেষ্টা করেছে। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

ঈদের দিন সকাল ১০টা ৫ মিনিটে এনটিভি তাদের আয়োজন শুরু করেছে সালমান শাহ ও শাবনূর অভিনীত ছবি ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ দিয়ে। বহুল দর্শকপ্রিয় এ ছীবটি আবারও বিনোদিত করেছে সিনে দর্শকদের। পাশাপাশি তাদের প্রচারিত অন্য সিনেমাগুলোও ভালো ছিল। তাদের কিছু নাটক ও টেলিছবি ছিল ভালো মানের। তার মধ্যে ‘নিঝুম রাত্রি’, ‘বুনো ফুলের ঘ্রাণ’, ‘এপারে আকাশ’ ‘ব্ল্যাক কফি’ নাট্যমানে বেশ ভালো ছিল। ভালো লেগেছে শাহরিয়ার শাকিলের টেলিছবি ‘পিছুটান’। আরিফ খানের টেলিছবি ‘গন্তব্য’ সুন্দর লেগেছে। আদনান আল রাজীবের ‘মিডলক্লাস সেন্টিমেন্ট’ দেখে মনে হয়েছে তিনি বিজ্ঞাপন নির্মাণে যতটা পোক্ত, ততটা পোক্ত হননি টেলিছবি নির্মাণে। ফেরদৌস হাসানের টেলিছবি ‘সন্ধ্যাতারা’ ছিল প্রশংসনীয়। এছাড়া এনটিভির অন্যান্য আয়োজন ছিল প্রতিবারের মতোই গতানুগতিক।

আরটিভির হেড অব প্রোগ্রামের দায়িত্ব পাওয়ার পর দেওয়ান শামসুর রকিব বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন অনুষ্ঠান ও নাটক নির্বাচনের ক্ষেত্রে। তাদের একখণ্ডের নাটকগুলোর মধ্যে জাহিদ হাসানের ‘বেয়াদব ছেলে’ ভালো লেগেছে। ভালো ছিল হাসান জাহাঙ্গীরের নাটক ‘অনুভবে ভালোবাসা’। মীর সাব্বিরের নাটক ‘সবজান্তা শমসের’ ও মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘দি মিস্টিরিয়াস গেম’ ছিল প্রশংসনীয়। আরটিভিতে ঈদ উপলক্ষে প্রচারিত বাংলা ছায়াছবির মধ্যে ‘আম্মাজান’ ও ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ সিনেমা দুটি বেশি পছন্দ করেছেন দর্শক। ভালো লেগেছে রুদ্র মাহফুজের লেখা ও সাখাওয়াত মানিক পরিচালিত টেলিছবি ‘অপরাহ্ন’। আরটিভির বাকি টেলিছবিগুলো তেমন একটা ভালো লাগেনি। এবার ঈদে আরটিভি বিজ্ঞাপনহীন কিছু নাটক প্রচার করেছে যা দর্শকদের মাঝে ঈদের বাড়তি আনন্দ জুগিয়েছে। তার মধ্যে হিমেল আশরাফের ‘মিস্টার পাষাণ এখন নেতা হতে চায়’ ও পলাশ মাহবুবের ‘সাধারণ জ্ঞান’ সুন্দর লেগেছে। এছাড়া আরটিভির ভণ্ড সিরিজের প্রায় সবক’টি নাটক ছিল মজার। সালাহউদ্দীন লাভলুর ‘লাঠি পাগল’ ঈদ ধারাবাহিকটিও ভালো লেগেছে।

চ্যানেল নাইন-এর জন্মলগ্ন থেকে প্রতি ঈদের কোনো নাটক, টেলিফিল্ম কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠান কখনোই আলোচিত ছিল না। এবারও তাই হয়েছে। তাদের আয়োজনের কমতি ছিল না। ভালো কিছু উপহার দেয়ার প্রচেষ্টাও ছিল। তবুও তারা দর্শকের হৃদয় রাঙাতে পারেনি। এর মাঝেও ভালো লেগেছে বদরুল আনাম সৌদের নাটক আগন্তুক। ‘অ্যাঙ্গার স্টোরি’ নাটকটি সুন্দর ছিল। তানজিলের কোরিওগ্রাফিতে ‘অ্যাংকর স্টেপ’ অনুষ্ঠানটি ছিল পছন্দ হওয়ার মতো।

দেশ টিভির ঈদ আয়োজনজুড়ে এবার দর্শকের আকর্ষণ ছিল ‘ফেস টু ফেস : অনন্ত জলিল’ অনুষ্ঠানটি নিয়ে। অন্তত জলিল নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে বেশ ভালো উপস্থাপনা করে দেখিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। পাশাপাশি দেশ টিভির লাইভ সঙ্গীতানুষ্ঠানগুলো ছিল বেশ আকর্ষণীয়। তাদের নাটক ও টেলিফিল্মগুলো ছিল মাঝারি মানের। তবে এ ক্ষেত্রে নতুনরা অনেক সুযোগ পেয়েছেন। যদিও বা মিডিয়াতে চাউর আছে, দেশ টিভি নতুনদের সুযোগ দেয়ার নাম করে প্রতি ঈদের নাটক বা টেলিফিল্ম ক্রয়ের টাকা সময়মতো প্রদান করে না। এবার দেখা যাক, মিডিয়ায় রটে যাওয়া এ গুজবের জাল ছিঁড়ে বের হয়ে আসতে পারে কিনা।

একুশে টিভি ঈদ আয়োজনে ভিন্নতা রাখার চেষ্টা করেছে। তাদের প্রচারিত বাংলা সিনেমাগুলো সিনে দর্শকদের মন মতো ছিল। তাদের ঈদ ধারাবাহিক নাটক নীল কষ্টতে ভালো অভিনয় করেছেন অপূর্ব ও পপি। আদিবাসীদের নিয়ে ঈদ অনুষ্ঠান ‘নীল পাহাড়ের গায়’ ছিল বেশ বৈচিত্র্যময়। তাদের ‘লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন’ নাটকটি ভালো লেগেছে। ভালো ছিল ‘সেয়ানা জামাই’ টেলিফিল্মটি।

এশিয়ান টিভিতে ঈদ উপলক্ষে প্রচারিত ডোরেমন কার্টুন ছবিটি শিশু-কিশোরদের ভালো লাগার মতোই ছিল। সুন্দর লেগেছে ‘বউ বদল’ নাটকটি। ভালো লেগেছে ‘চিলেকোঠার রোদ্দুর’ ও ‘অধরার রোদ’ নাটক দুটি। তাদের প্রচারিত বাংলা সিনেমাগুলো খারাপ ছিল না। ভালো ছিল ‘মিউজিক আওয়ার’ অনুষ্ঠানটি। পাশাপাশি তাদের নিজস্ব প্রযোজনার কিছু কিছু ঈদ অনুষ্ঠান ভালো লেগেছে। যেমন- স্টার আওয়ার, এশিয়ান কিচেন ও ড্যান্স শো।

মাছরাঙা টিভির এবারের ঈদ আয়োজন অন্য বারের মতোই মনে হয়েছে। পৃথক করে কিছু বলার মতো নেই। তাদের ‘টিনএজারস ঈদ’ অনুষ্ঠানটি ভালো ছিল। ভালো ছিল তাদের গানের অনুষ্ঠিান ‘রাঙ্গা রাত’। দেওয়ান শামসুর রকিবের নাটক ‘প্রতিদিনের একদিন’ ভালো লেগেছে। ভালো টেলিছবি ছিল ‘প্রেম ও প্রতিহিংসা’। ব্যতিক্রমী নাটক ছিল ‘থিয়েটারওয়ালা’। ‘অবশেষে ভালোবেসে’ নাটকটিও সুন্দর লেগেছে। তাদের বাকি ঈদের নাটক ও টেলিফিল্মগুলো ছিল সারা বছর প্রচারিত নাটক কিংবা টেলিছবির মতো। তবুও অনুষ্ঠানের মান নিয়ন্ত্রণে মাছরাঙা টিভি যে সচেষ্ট ছিল তা বোঝা গেছে।

বৈশাখী টিভিতে প্রচারিত শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষ ঈদ ধারাবাহিক নাটক ‘পিটি রতন সিটি খোকন’ অনেক সুন্দর হয়েছে। ভালো লেগেছে ‘গেন্দুচোরা লোকাল সার্ভিস’ ধারাবাহিকটিও। তাদের বাংলা ছায়াছবির আয়োজনও মন্দ ছিল না। ঈদের বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘কাটুক গানে গানে’ ভালো লেগেছে। এছাড়া বাকি অনুষ্ঠানগুলো ছিল গতানুগতিক।

সংবাদ নির্ভর চ্যানেল হলেও যমুনা টিভির ঈদ আয়োজন ভালো ছিল। যমুনা টিভির দর্শকরা প্রতিটি অনুষ্ঠানই উপভোগ করেছেন।

এসএ টিভির কমেডি শো ‘হাসিপুরের হাসির মানুষ’ ভালো লেগেছে। মাতিয়া বানু শুকুর নাটক ‘এক পায়ে নূপুর’ সুন্দর ছিল। সকাল আহমেদের টেলিছবি ‘কাল পূর্ণিমা’ ভালো লেগেছে। তাদের বাকি অনুষ্ঠানগুলো ঈদকেন্দ্রিক করার চেষ্টা করেছে। যদিও তা প্রশংসনীয় নয়। তাদের প্রচারিত বাংলা চলচ্চিত্রগুলো ভালো ছিল। ‘তোমার কণ্ঠে আমার গান’ অনুষ্ঠানটি ছিল মাঝারি মানের।

গাজী টিভির ঈদ আয়োজনে চোখে পড়ার মতো তেমন কিছু ছিল না। যদিও তারা হরেক রকমের আয়োজনের পসরা সাজিয়েছিল দর্শকদের জন্য। প্রতিবারের মতো এবারও তারা গতানুগতিকতার বাইরে যেতে পারেনি। তবে তাদের ‘গানোফোন’ অনুষ্ঠানটি বেশ ভালো ছিল। ‘ফোক ফিউশন’ অনুষ্ঠানটিও মন্দ লাগেনি। জাহিদ হাসানের ঈদ ধারাবাহিক ‘মজনুরা’ ছিল আনন্দদায়ক। ‘সেই চোখ’ নাটকটি ভালো লেগেছে। ছায়াপরি নাটকটি ছিল মোটামুটি মানের। ‘আমি, তুমি এবং সে’ নাটকটি ভালো ছিল। ‘আলাল দুলাল ও হাজী চান’ ঈদ ধারাবাহিকটি মন্দ লাগেনি।

অন্যদিকে নিউজ চ্যানেল এটিএন নিউজ, সময় টিভি, একাত্তর ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে তাদের দর্শককে বিনোদিত করতে। তারা কতটা সফল হয়েছেন তা জনিয়ে দেবে টিআরপি রিপোর্ট।

এছাড়া চ্যানেল সিক্সটিন ও মাই টিভি তাদের স্বল্প বাজেটেও ভালো কিছু অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। গানপ্রিয় দর্শকরা ঈদের নানা অনুষ্ঠানের ভিড়েও চ্যানেল সিক্সটিন দেখেছেন। এ চ্যানেলে প্রচারিত খন্দকার বাপ্পী ও ইশরাক হোসেনের গাওয়া তিন ভাষায় ঈদের গান ‘ঈদ এসেছে’ বেশ প্রশংসিত হয়েছে দর্শক মহলে।

এবার ঈদে আশার কথা হল, বেশকিছু চ্যানেল চেষ্টা করছে দর্শকদের বিজ্ঞাপন নামক নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই দিতে। তবুও কর্পোরেট বেনিয়াদের কাছ থেকে রেহাই পায়নি অনেকে। বিজ্ঞাপনদাতা অনেক এজেন্সির চাপে পড়ে কিছু মানহীন নাটকও চলেছে ঈদে- এমন অভিযোগ করেছেন চ্যানেল সংশ্লিষ্ট অনেকে। তবে তারা নাম প্রকাশ করতে আগ্রহী নন। পাছে চাকরি হারানো কিংবা চ্যানেলের অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। একটি বেসরকারি চ্যানেলের হেড অব প্রোগ্রাম নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বিজ্ঞাপনদতা কোম্পানিগুলো যদি বিজ্ঞাপন প্রদানের শর্তে নাটক প্রচার করতে চাপ দেন তবে চ্যানেলগুলো ভালো নাটক চালাবে কী করে? বিজ্ঞাপন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের অনেক নাটক চ্যানেলের প্রিভিউ বোর্ড রিফিউজ করার পরও চালাতে বাধ্য হয় অনেক টিভি চ্যানেল। সে ক্ষেত্রে মানহীন ঈদ অনুষ্ঠান প্রচার নিয়ে একতরফা দোষ টিভি চ্যানেলগুলোকে দেয়া যায় না।

তবে একথা না বললেই নয়, এ রিপোর্টে লেখা কয়েকটি চ্যানেলের কয়েকটি অনুষ্ঠান, নাটক কিংবা টেলিফিল্ম ছাড়া বাকি সবকিছু ছিল তথৈবচ। যে কারণে গ্রামে কিংবা শহুরে অনেক দর্শক তাদের পছন্দের সিরিয়াল দেখেছেন বিদেশী চ্যানেলে। দেশী চ্যানেল থেকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়া বেশিরভাগ দর্শকের চোখ ফিরিয়ে আনতে টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ, নির্মাতাদের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনদাতাদেরও নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। না হলে আগামীতে ঈদের বিশেষ আয়োজনও ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে দর্শকের কাছে।


 

সাবমিট
ঈদের টিভি আয়োজন

পোস্টমর্টেম রিপোর্ট

ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের সবক’টি টিভি চ্যানেল ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করেছে সপ্তাহব্যাপী। অনেক আয়োজন আর হরেক বিজ্ঞাপনের ভিড়ে চ্যানেলগুলো দর্শকদের কতটা বিনোদিত করতে পেরেছে তা নিয়ে আজকের এ আয়োজন। ঈদের সময়টাতে চ্যানেলে চ্যানেলে চোখ সাঁটিয়ে থেকে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটি লিখেছেন-
 অনুরূপ আইচ 
১৬ অক্টোবর ২০১৪, ১২:০০ এএম  | 

ঈদের পরদিন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার একজন সাংবাদিক ফেসবুকে সুন্দর একটা স্টেটাস দিয়েছিলেন। স্টেটাসটি ছিল এ রকম-

‘হানিফ সংকেত আসলেই জিনিয়াস। এবার ঈদে ইত্যাদি না থাকায় পর্দায় তার উপস্থিতি খুব মিস করেছি। আর ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন চ্যানেলের বস্তাপচা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখে মনে হয়েছে, হানিফ সংকেত ছাড়া এ দেশে আর কেউ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান বানাতে পারে না।’

এ কথা আরও অনেক দর্শক জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে। অনেকে আবার এও বলেছেন, ‘ঈদে হানিফ সংকেতের ইত্যাদি দেখতে না পারার খায়েশ মিটিয়েছি এটিএন বাংলায় প্রচারিত পাঁচফোড়ন অনুষ্ঠানটি দেখে। উল্লেখ্য, পাঁচফোড়ন অনুষ্ঠানটি হানিফ সংকেতেরে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ফাগুন অডিও ভিশনের ব্যানারে নির্মিত। এছাড়া এটিএন বাংলার অন্যান্য আয়োজন ছিল গৎবাঁধা ধাঁচের। নতুন কিছু ছিল না তাতে।

দেশের সরকারি চ্যানেল হিসেবে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড আয়োজন করেছিল ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠানগুলোতে যে পর্যাপ্ত বাজেটের ঘাটতি ছিল তা বোঝা গেছে অনুষ্ঠানগুলো দেখে। বিটিভির ঐতিহ্যবাহী ঈদ অনুষ্ঠান আনন্দমেলাতেও তার ছাপ রয়েছে। তবুও অনুষ্ঠানটিকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টায় কমিত ছিল না আনজাম মাসুদের মাঝে। এছাড়া বিটিভিতে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যান্ড শো, রম্য বিতর্ক, রুপালি সিঁড়ি ছিল মধ্যম মানের। অনুষ্ঠানগুলোতে সমকালীন বিষয়ের কমতি ছিল। বিটিভির ঈদ আয়োজনের নাটকগুলো বিনোদনের খোরাক জোগায়নি তেমন একটা। তার মাঝেও শামীম জামানের নাটক ‘থাপ্পড়’ ভালো ছিল। পাশাপাশি বিটিভিতে ঈদ উপলক্ষে পাকেজ নাটক নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি দলের প্রভাব ও বিটিভির কর্মকর্তাদের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রতি বছরই ওঠে। এবারও তেমন আলোচনা হচ্ছে মিডিয়া পাড়ায়। ঈদ উপলক্ষে বিটিভিতে প্রচারিত সিনেমাগুলোও তেমন একটা সাড়া ফেলতে পারেনি দর্শকদের মাঝে। তাই দর্শকরা ঈদে বিটিভির চেয়ে অন্য চ্যানেলের অনুষ্ঠান বেশি দেখেছে বলে জানা গেছে যুগান্তরের বিনোদন বিভাগের জরিপে।

প্রতি বছর ঈদ আয়োজনে চ্যানেল আই ভালো কিছু করার চেষ্টায় থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ চ্যানেলের প্রাণপুরুষ ফরিদুর রেজা সাগরের ‘ছোটকাকু’ সিরিজের ‘রাত বিরাতে, সাতক্ষীরাতে’ শিশু-কিশোরদের ঈদ আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ এ ধারাবাহিকটি নির্মাণে বেশ আন্তরিকতার ছাপ রেখেছেন আফজাল হোসেন। এবার আসি চ্যানেল আইয়ের আরেক অপরিহার্য ব্যক্তি শাইখ সিরাজ প্রসঙ্গে। দেশ বরেণ্য কৃষিবিষয়ক এ ব্যক্তিত্ব বিশেষ বিশেষ দিনে কৃষকদের নিয়ে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান করে থাকেন। তেমনই একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের নাম ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ ঈদেও সফল হয়েছেন শাইখ সিরাজ। তার পরিকল্পনা ও নির্মাণে কৃষকদের জন্য এত সুন্দর অনুষ্ঠান এর আগে আর কেউ করতে পারেননি। চ্যানেল আইয়ের কল্যাণে মেহের আফরোজ শাওনের নির্মাণে এ ঈদেও দর্শক উপভোগ করেছেন হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে নাটক ‘বিভ্রম’। পাশাপাশি একই চ্যানেলে প্রচারিত লাট সাহেবের নাতি, গনি মিয়ার কোচিং সেন্টার, কালো ঝড়, নায়িকা নাটকগুলো ভালো লেগেছে। হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে জুয়েল রানা পরিচালিত ‘গোবর’ টেলিছবিটি ভালো ছিল। এছাড়া ‘মতিন সাহেবের চমশা’, ‘ঢঙের পাগল’, ‘আনসার আলী টকার’, ‘চাঁদমুখ’ টেলিছবিগুলো ভালো লেগেছে।

বাংলাভিশন-এর এবারের ঈদ আয়োজনে ভালো কিছু অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার প্রচেষ্টা ছিল। বিশেষ করে তাদের বিশেষ ধারাবাহিক নাটক ‘সিকান্দার বক্স এখন বান্দরবান’ এবারও ভালো হয়েছে। তবে এ নাটকটির আর কোনো সিক্যুয়াল না হলে হয়তো সিকান্দার বক্সের প্রতি দর্শকের ভালোবাসা অটুট থাকবে অনেকদিন। পাশাপাশি সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘জামাইবন্দি’ ধারাবাহিকটিতে নিজস্বতার ছাপ রেখে তার ভক্তদের বিনোদিত করেছেন লাভলু। ঈদ আয়োজনে বাংলাভিশনের এক খণ্ডের নাটকগুলোর মধ্যে শামীম শাহেদের ‘মিশন ইনানী রয়েল রিসোর্ট’ নাটকটি উল্লেখ করার মতো। ভালো লেগেছে মারুফ মিঠুর নাটক ‘সেই রকম পানখোর’। তৌকীর-বিপাশার ‘মধ্যপ্রহর’ নাটকটিও সুন্দর ছিল। রওনক হাসানের ‘সাদাকালো’ নাটকটিও ছিল পছন্দসই। এছাড়া বাংলাভিশনের টেলিফিল্মগুলো ছিল মোটামুটি মানের। তবে ঈদ উপলক্ষে এ চ্যানেলের সিনেমাগুলো দর্শকদের হৃদয়গ্রাহী ছিল। অন্য অনুষ্ঠানগুলোতেও বাংলাভিশন বরাবরের মতো এবারও বৈচিত্র্য রাখার চেষ্টা করেছে। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

ঈদের দিন সকাল ১০টা ৫ মিনিটে এনটিভি তাদের আয়োজন শুরু করেছে সালমান শাহ ও শাবনূর অভিনীত ছবি ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ দিয়ে। বহুল দর্শকপ্রিয় এ ছীবটি আবারও বিনোদিত করেছে সিনে দর্শকদের। পাশাপাশি তাদের প্রচারিত অন্য সিনেমাগুলোও ভালো ছিল। তাদের কিছু নাটক ও টেলিছবি ছিল ভালো মানের। তার মধ্যে ‘নিঝুম রাত্রি’, ‘বুনো ফুলের ঘ্রাণ’, ‘এপারে আকাশ’ ‘ব্ল্যাক কফি’ নাট্যমানে বেশ ভালো ছিল। ভালো লেগেছে শাহরিয়ার শাকিলের টেলিছবি ‘পিছুটান’। আরিফ খানের টেলিছবি ‘গন্তব্য’ সুন্দর লেগেছে। আদনান আল রাজীবের ‘মিডলক্লাস সেন্টিমেন্ট’ দেখে মনে হয়েছে তিনি বিজ্ঞাপন নির্মাণে যতটা পোক্ত, ততটা পোক্ত হননি টেলিছবি নির্মাণে। ফেরদৌস হাসানের টেলিছবি ‘সন্ধ্যাতারা’ ছিল প্রশংসনীয়। এছাড়া এনটিভির অন্যান্য আয়োজন ছিল প্রতিবারের মতোই গতানুগতিক।

আরটিভির হেড অব প্রোগ্রামের দায়িত্ব পাওয়ার পর দেওয়ান শামসুর রকিব বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন অনুষ্ঠান ও নাটক নির্বাচনের ক্ষেত্রে। তাদের একখণ্ডের নাটকগুলোর মধ্যে জাহিদ হাসানের ‘বেয়াদব ছেলে’ ভালো লেগেছে। ভালো ছিল হাসান জাহাঙ্গীরের নাটক ‘অনুভবে ভালোবাসা’। মীর সাব্বিরের নাটক ‘সবজান্তা শমসের’ ও মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘দি মিস্টিরিয়াস গেম’ ছিল প্রশংসনীয়। আরটিভিতে ঈদ উপলক্ষে প্রচারিত বাংলা ছায়াছবির মধ্যে ‘আম্মাজান’ ও ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ সিনেমা দুটি বেশি পছন্দ করেছেন দর্শক। ভালো লেগেছে রুদ্র মাহফুজের লেখা ও সাখাওয়াত মানিক পরিচালিত টেলিছবি ‘অপরাহ্ন’। আরটিভির বাকি টেলিছবিগুলো তেমন একটা ভালো লাগেনি। এবার ঈদে আরটিভি বিজ্ঞাপনহীন কিছু নাটক প্রচার করেছে যা দর্শকদের মাঝে ঈদের বাড়তি আনন্দ জুগিয়েছে। তার মধ্যে হিমেল আশরাফের ‘মিস্টার পাষাণ এখন নেতা হতে চায়’ ও পলাশ মাহবুবের ‘সাধারণ জ্ঞান’ সুন্দর লেগেছে। এছাড়া আরটিভির ভণ্ড সিরিজের প্রায় সবক’টি নাটক ছিল মজার। সালাহউদ্দীন লাভলুর ‘লাঠি পাগল’ ঈদ ধারাবাহিকটিও ভালো লেগেছে।

চ্যানেল নাইন-এর জন্মলগ্ন থেকে প্রতি ঈদের কোনো নাটক, টেলিফিল্ম কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠান কখনোই আলোচিত ছিল না। এবারও তাই হয়েছে। তাদের আয়োজনের কমতি ছিল না। ভালো কিছু উপহার দেয়ার প্রচেষ্টাও ছিল। তবুও তারা দর্শকের হৃদয় রাঙাতে পারেনি। এর মাঝেও ভালো লেগেছে বদরুল আনাম সৌদের নাটক আগন্তুক। ‘অ্যাঙ্গার স্টোরি’ নাটকটি সুন্দর ছিল। তানজিলের কোরিওগ্রাফিতে ‘অ্যাংকর স্টেপ’ অনুষ্ঠানটি ছিল পছন্দ হওয়ার মতো।

দেশ টিভির ঈদ আয়োজনজুড়ে এবার দর্শকের আকর্ষণ ছিল ‘ফেস টু ফেস : অনন্ত জলিল’ অনুষ্ঠানটি নিয়ে। অন্তত জলিল নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে বেশ ভালো উপস্থাপনা করে দেখিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। পাশাপাশি দেশ টিভির লাইভ সঙ্গীতানুষ্ঠানগুলো ছিল বেশ আকর্ষণীয়। তাদের নাটক ও টেলিফিল্মগুলো ছিল মাঝারি মানের। তবে এ ক্ষেত্রে নতুনরা অনেক সুযোগ পেয়েছেন। যদিও বা মিডিয়াতে চাউর আছে, দেশ টিভি নতুনদের সুযোগ দেয়ার নাম করে প্রতি ঈদের নাটক বা টেলিফিল্ম ক্রয়ের টাকা সময়মতো প্রদান করে না। এবার দেখা যাক, মিডিয়ায় রটে যাওয়া এ গুজবের জাল ছিঁড়ে বের হয়ে আসতে পারে কিনা।

একুশে টিভি ঈদ আয়োজনে ভিন্নতা রাখার চেষ্টা করেছে। তাদের প্রচারিত বাংলা সিনেমাগুলো সিনে দর্শকদের মন মতো ছিল। তাদের ঈদ ধারাবাহিক নাটক নীল কষ্টতে ভালো অভিনয় করেছেন অপূর্ব ও পপি। আদিবাসীদের নিয়ে ঈদ অনুষ্ঠান ‘নীল পাহাড়ের গায়’ ছিল বেশ বৈচিত্র্যময়। তাদের ‘লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন’ নাটকটি ভালো লেগেছে। ভালো ছিল ‘সেয়ানা জামাই’ টেলিফিল্মটি।

এশিয়ান টিভিতে ঈদ উপলক্ষে প্রচারিত ডোরেমন কার্টুন ছবিটি শিশু-কিশোরদের ভালো লাগার মতোই ছিল। সুন্দর লেগেছে ‘বউ বদল’ নাটকটি। ভালো লেগেছে ‘চিলেকোঠার রোদ্দুর’ ও ‘অধরার রোদ’ নাটক দুটি। তাদের প্রচারিত বাংলা সিনেমাগুলো খারাপ ছিল না। ভালো ছিল ‘মিউজিক আওয়ার’ অনুষ্ঠানটি। পাশাপাশি তাদের নিজস্ব প্রযোজনার কিছু কিছু ঈদ অনুষ্ঠান ভালো লেগেছে। যেমন- স্টার আওয়ার, এশিয়ান কিচেন ও ড্যান্স শো।

মাছরাঙা টিভির এবারের ঈদ আয়োজন অন্য বারের মতোই মনে হয়েছে। পৃথক করে কিছু বলার মতো নেই। তাদের ‘টিনএজারস ঈদ’ অনুষ্ঠানটি ভালো ছিল। ভালো ছিল তাদের গানের অনুষ্ঠিান ‘রাঙ্গা রাত’। দেওয়ান শামসুর রকিবের নাটক ‘প্রতিদিনের একদিন’ ভালো লেগেছে। ভালো টেলিছবি ছিল ‘প্রেম ও প্রতিহিংসা’। ব্যতিক্রমী নাটক ছিল ‘থিয়েটারওয়ালা’। ‘অবশেষে ভালোবেসে’ নাটকটিও সুন্দর লেগেছে। তাদের বাকি ঈদের নাটক ও টেলিফিল্মগুলো ছিল সারা বছর প্রচারিত নাটক কিংবা টেলিছবির মতো। তবুও অনুষ্ঠানের মান নিয়ন্ত্রণে মাছরাঙা টিভি যে সচেষ্ট ছিল তা বোঝা গেছে।

বৈশাখী টিভিতে প্রচারিত শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষ ঈদ ধারাবাহিক নাটক ‘পিটি রতন সিটি খোকন’ অনেক সুন্দর হয়েছে। ভালো লেগেছে ‘গেন্দুচোরা লোকাল সার্ভিস’ ধারাবাহিকটিও। তাদের বাংলা ছায়াছবির আয়োজনও মন্দ ছিল না। ঈদের বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘কাটুক গানে গানে’ ভালো লেগেছে। এছাড়া বাকি অনুষ্ঠানগুলো ছিল গতানুগতিক।

সংবাদ নির্ভর চ্যানেল হলেও যমুনা টিভির ঈদ আয়োজন ভালো ছিল। যমুনা টিভির দর্শকরা প্রতিটি অনুষ্ঠানই উপভোগ করেছেন।

এসএ টিভির কমেডি শো ‘হাসিপুরের হাসির মানুষ’ ভালো লেগেছে। মাতিয়া বানু শুকুর নাটক ‘এক পায়ে নূপুর’ সুন্দর ছিল। সকাল আহমেদের টেলিছবি ‘কাল পূর্ণিমা’ ভালো লেগেছে। তাদের বাকি অনুষ্ঠানগুলো ঈদকেন্দ্রিক করার চেষ্টা করেছে। যদিও তা প্রশংসনীয় নয়। তাদের প্রচারিত বাংলা চলচ্চিত্রগুলো ভালো ছিল। ‘তোমার কণ্ঠে আমার গান’ অনুষ্ঠানটি ছিল মাঝারি মানের।

গাজী টিভির ঈদ আয়োজনে চোখে পড়ার মতো তেমন কিছু ছিল না। যদিও তারা হরেক রকমের আয়োজনের পসরা সাজিয়েছিল দর্শকদের জন্য। প্রতিবারের মতো এবারও তারা গতানুগতিকতার বাইরে যেতে পারেনি। তবে তাদের ‘গানোফোন’ অনুষ্ঠানটি বেশ ভালো ছিল। ‘ফোক ফিউশন’ অনুষ্ঠানটিও মন্দ লাগেনি। জাহিদ হাসানের ঈদ ধারাবাহিক ‘মজনুরা’ ছিল আনন্দদায়ক। ‘সেই চোখ’ নাটকটি ভালো লেগেছে। ছায়াপরি নাটকটি ছিল মোটামুটি মানের। ‘আমি, তুমি এবং সে’ নাটকটি ভালো ছিল। ‘আলাল দুলাল ও হাজী চান’ ঈদ ধারাবাহিকটি মন্দ লাগেনি।

অন্যদিকে নিউজ চ্যানেল এটিএন নিউজ, সময় টিভি, একাত্তর ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে তাদের দর্শককে বিনোদিত করতে। তারা কতটা সফল হয়েছেন তা জনিয়ে দেবে টিআরপি রিপোর্ট।

এছাড়া চ্যানেল সিক্সটিন ও মাই টিভি তাদের স্বল্প বাজেটেও ভালো কিছু অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। গানপ্রিয় দর্শকরা ঈদের নানা অনুষ্ঠানের ভিড়েও চ্যানেল সিক্সটিন দেখেছেন। এ চ্যানেলে প্রচারিত খন্দকার বাপ্পী ও ইশরাক হোসেনের গাওয়া তিন ভাষায় ঈদের গান ‘ঈদ এসেছে’ বেশ প্রশংসিত হয়েছে দর্শক মহলে।

এবার ঈদে আশার কথা হল, বেশকিছু চ্যানেল চেষ্টা করছে দর্শকদের বিজ্ঞাপন নামক নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই দিতে। তবুও কর্পোরেট বেনিয়াদের কাছ থেকে রেহাই পায়নি অনেকে। বিজ্ঞাপনদাতা অনেক এজেন্সির চাপে পড়ে কিছু মানহীন নাটকও চলেছে ঈদে- এমন অভিযোগ করেছেন চ্যানেল সংশ্লিষ্ট অনেকে। তবে তারা নাম প্রকাশ করতে আগ্রহী নন। পাছে চাকরি হারানো কিংবা চ্যানেলের অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। একটি বেসরকারি চ্যানেলের হেড অব প্রোগ্রাম নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বিজ্ঞাপনদতা কোম্পানিগুলো যদি বিজ্ঞাপন প্রদানের শর্তে নাটক প্রচার করতে চাপ দেন তবে চ্যানেলগুলো ভালো নাটক চালাবে কী করে? বিজ্ঞাপন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের অনেক নাটক চ্যানেলের প্রিভিউ বোর্ড রিফিউজ করার পরও চালাতে বাধ্য হয় অনেক টিভি চ্যানেল। সে ক্ষেত্রে মানহীন ঈদ অনুষ্ঠান প্রচার নিয়ে একতরফা দোষ টিভি চ্যানেলগুলোকে দেয়া যায় না।

তবে একথা না বললেই নয়, এ রিপোর্টে লেখা কয়েকটি চ্যানেলের কয়েকটি অনুষ্ঠান, নাটক কিংবা টেলিফিল্ম ছাড়া বাকি সবকিছু ছিল তথৈবচ। যে কারণে গ্রামে কিংবা শহুরে অনেক দর্শক তাদের পছন্দের সিরিয়াল দেখেছেন বিদেশী চ্যানেলে। দেশী চ্যানেল থেকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়া বেশিরভাগ দর্শকের চোখ ফিরিয়ে আনতে টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ, নির্মাতাদের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনদাতাদেরও নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। না হলে আগামীতে ঈদের বিশেষ আয়োজনও ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে দর্শকের কাছে।


 

 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র