বিএনপির মনোনয়নে বাবাকে ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়ে ক্ষমতার জানান দেন মতিউর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ১০:৩০ পিএম
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ড. মো. মতিউর রহমান। ফাইল ছবি
নিজের পাশাপাশি পরিবারের অন্য সবার ভাগ্যও ফিরিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ড. মো. মতিউর রহমান। রাজস্ব কর্মকর্তা হওয়ার পর স্কুলশিক্ষক বাবার ছোট ঘরকে পরিণত করেছেন আলিশান ভবনে। গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজীর চর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামেও গড়েছেন বিপুল সম্পদ।
রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে মতিউরের যোগদানের পর এই পরিবারকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিএনপি আমলে তিনি বাবা হাকিম হাওলাদারকে ভোটে দাঁড় করিয়ে কাজীর চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানান। ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি হিসাবে বিএনপির মনোনয়নেই তখন চেয়ারম্যান হন হাকিম হাওলাদার। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কাজীরচর ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী। ওয়ান-ইলেভেনকালীন সময়ে চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ শেষ হলেও নানা উপায়ে আরও প্রায় ৪ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকেন হাকিম।
বিএনপি আমলে সেই মতিউরের উত্থান যার হাত ধরে
বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা কালাম হাওলাদার বলেন, ‘বাবাকে চেয়ারম্যান বানাতে প্রচুর টাকা খরচ হয় মতিউরের। সে সময় পুরো টাকাই তিনি দিয়েছিলেন। কেননা তার অন্য দুই ভাই তখনও স্বাবলম্বী নয়। মূলত ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই এলাকায় প্রথম নিজের ক্ষমতা আর অবস্থানের জানান দেন এই রাজস্ব কর্মকর্তা।’
জীবদ্দশায় মোটামুটি একটি বাড়ি ছিল হাকিম হাওলাদারের। ওই বাড়িতে ছিলেন তাদের বংশের আরও বেশ কয়েকটি ঘরের বাসিন্দা। মতিউর ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে একে একে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বর্তমানে মতিউর পরিবারের দখলে আছে প্রায় ২ একরজুড়ে থাকা পুরো বাড়ি। অবশ্য সম্পত্তি বিক্রি করে, নাকি অন্য কোনো কারণে অন্য বাসিন্দারা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন তা জানা যায়নি।
গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যাতায়াত না থাকলেও বাবার পুরোনো ঘরের জায়গায় দৃষ্টিনন্দন আলিশান বাড়ি করেছেন এই রাজস্ব কর্মকর্তা। দোতলা সেই বাড়ি বছরের অধিকাংশ সময় থাকে তালাবদ্ধ। বাড়ির সামনে করেছেন একটি মসজিদ, কওমি মাদ্রাসা এবং বাহাদুরপুর রহমানিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুরুর দিকে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা বাবদ নেওয়া মোটা অঙ্কের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও স্কুল অ্যান্ড কলেজটি বর্তমানে এমপিওভুক্ত।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বরিশালের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে তার কাছে অনেক দায় ছিল আমাদের। যে কারণে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-মসজিদে দানের নামে টাকা বা সহযোগিতা চাইলে না করতে পারতাম না।’
এলাকায় বিএনপি ঘরানার বলে পরিচিত মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রচণ্ড ক্ষমতার দাপটও ছিল। তার বাড়ির পেছনে ছিল একটি জোয়ার-ভাটার খাল। ক্ষমতাবলে সেই খালের দুদিকে বাঁধ দিয়ে আটকে দেন মতিউর। বহতা খালকে এভাবে আটকে লেক বানিয়ে তিনি পৈতৃক ভিটার সৌন্দর্য বাড়িয়েছেন।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বাহাদুরপুর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘জোয়ার-ভাটার খাল আটকে দেওয়ায় শুকনো মৌসুমে ফসলি জমিতে সেচ দিতে দুর্ভোগে পড়েন কৃষকরা। অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে সেচের ব্যবস্থা করতে হয় কয়েকশ একর জমিতে। ফলে বেড়ে যায় ফসল উৎপাদনের খরচ।’ খালে বাঁধ দেওয়ার সময় বাধা দিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘মতিউর রহমানের প্রভাব ও ক্ষমতার দাপটের কারণে কেউই তখন বাধা দেওয়ার সাহস পাননি।’
এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য মতিউর রহমান এবং তার ভাই কাইয়ুম হাওলাদারের ফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তারা ফোন ধরেননি। গ্রামের বাড়িতে থাকা মতিউরের ছোট ভাই নুরুল হুদাও কোনো কথা বলতে রাজি হননি।