
প্রিন্ট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম
হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় র্যাবের তদন্ত কমিটি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫৭ পিএম

আরও পড়ুন
নওগাঁয় আটকের পর র্যাবের হেফাজতে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি।
র্যাব সদর দপ্তর সোমবার এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় সংস্থার (র্যাব) সদস্যদের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা- তা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে র্যাবের কারো বিরুদ্ধে জড়িত থাকার ও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ফরেনসিক চিকিৎসকরা জেসমিন সুলতানার মৃত্যুর একদিন পর ময়নাতদন্ত করেছেন। এ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সমালোচনা করেছে এবং প্রশ্ন করেছেন হাইকোর্ট। ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত ৩ সদস্যের বোর্ডের নেতৃত্বে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, 'সুলতানা জেসমিনের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ছাড়াও মাথায় আঘাত লেগেছে।'
আজ র্যাব মুখপাত্র মঈন বলেন, ‘ওই নারীর মাথায় আঘাতের কোনো চিহ্ন থাকার বিষয়টি জানে না র্যাব। এই জাতীয় কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। উনার যে ডেথ সার্টিফিকেট, সেখানে এ রকম কোনো তথ্য আমরা পাইনি। আঘাতের ব্যাপারটি আমাদের জানা নেই।’
তিনি বলেন, আমরা ডেথ সার্টিফিকেট দেখেছি, পুলিশ কেইস দেখেছি। ডাক্তারের মন্তব্য আমি তদন্তের কথা বললাম। একটু সময় লাগবে, যেহেতু পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এটা তদন্ত করবো। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যদি এমন কিছু থাকে তাহলে, এখানে সাক্ষীরা ছিলেন, এলাকার অন্যান্য লোকজন ছিলেন, যখন কম্পিউটারে প্রিন্ট করছি, তাদেরকেও আমাদের তদন্ত কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তখন কারো ইনভলমেন্ট যদি পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওই নারীকে আটক করার বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার মঈন বলেন, রাজশাহীতে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের নামে ফেসবুক খুলে একটি চক্র প্রতারণা করে আসছিল। তিনি ২০২২ সালের মার্চ মাসে জিডি করেন তার আইডি হ্যাক হয়েছে বলে, আদালতে মামলাও করেন। গত ১৯ ও ২০ মার্চ তার নাম পদবি ব্যবহার করে অর্থ নেওয়া ও প্রতারণার তথ্য আসে তার কাছে। তখন তিনি জানতে পারেন আল আমিন নামে একজন জড়িত। জেসমিন নামে একজনেরও তথ্য পান।
‘২২ তারিখ ওই কর্মকর্তা অফিস যাওয়ার সময় টহলরত র্যাবের গাড়ি পেয়ে অভিযোগটি জানান। র্যাব তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ওই নারীর অবস্থান সনাক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।’
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘যুগ্ম সচিবের সামনেই ওই নারীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জন্য আটক করে র্যাব। জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি জড়িত কি না। এ সময় নারী র্যাব সদস্যরা ছিলেন। সাক্ষীদের সামনে তিনি অপকটে স্বীকার করেন। তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়। লাখ লাখ টাকা জমার প্রমাণ পাওয়া যায়। ২০-৩০ লাখ।’
ঘটনাক্রম জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে আটক করে র্যাব। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে কম্পিউটারের দোকানে নিয়ে আলামত প্রিন্ট করা হয়। এরপর থানায় যাওয়ার পথে অসুস্থবোধ করেন তিনি। নওগাঁ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গাড়ি থেকে নেমে তিনি যান। স্বজন, এসি ল্যান্ডসহ অন্যরাও হাসপাতালে আসেন। অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়া হয়। সিটিস্ক্যানে স্ট্রোকের আলামত পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তিনি মারা যান।’
র্যাব সদর দপ্তরের ইন্টারনাল ইনকোয়ারি সেল ঘটনাটি তদন্ত করছে জানিয়ে র্যাব মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘অভিযোগ যেহেতু এসেছে, ইন্টারনাল ইনকুয়ারি সেল কাজ করছে। কারো গাফিলতি আছে কিনা। আদালত আমাদের কাছে কিছু কোয়ারিজ দিয়েছেন। আদালতে সেগুলো উপস্থাপনা করা হবে। তদন্ত কমিটি গতকাল (সোমবার) করা হয়েছে। সময় লাগবে।’
প্রসঙ্গত, ৪৫ বছর বয়সি সুলতানা জেসমিন নওগাঁ শহরের কালিতলা মহল্লার নওগাঁ পৌরসভা ও চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।