সংসদে প্রধানমন্ত্রী
কারও মুখাপেক্ষী হয়ে রাজনীতি করি না
সংসদ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪, ১১:২৪ পিএম
ফাইল ছবি
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারও মুখাপেক্ষী হয়ে রাজনীতি করি না। ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় দেশসেবার সুযোগ দেওয়ায় জনগণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন লক্ষ্য নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন করা। মঙ্গলবার রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধ মজুতের কারণে রমজান মাস উপলক্ষ্যে পণ্যমূল্য অদ্ভুতভাবে বেড়ে গেছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি বাজেট প্রণয়নের সময় অবশ্যই নির্বাচনি ইশতেহারের বিষয়গুলো প্রাধান্য দেওয়া হবে। তিনি বলেন, জনকল্যাণ মাথায় রেখে যথাযথ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স থাকবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণে সব দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছি।
মাদক সমস্যা নিরসনে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইদানীং ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডগুলো দুর্ঘটনা। কিন্তু রাজনীতি ও নির্বাচন ঠেকানোর নামে জীবন্ত মানুষকে কী করে পুড়িয়ে মারতে পারে? নির্বাচন ঠেকানো মানেই বিএনপির কাছে অগ্নিসন্ত্রাস আর জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা। এ তো তাদের রাজনীতি। দিনের পর দিন তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। এর সাজা তাদের একদিন না একদিন পেতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওদের (বিএনপি) চরিত্রই হলো খুনের। এত সাক্ষীর কী প্রয়োজন? তারা তো প্রতিনিয়তই প্রমাণ দিচ্ছেন সেসব অপরাধের। এখানে নাশকতা করে তারা লন্ডনে ছবি পাঠায়। তারা ভিডিও কনফারেন্সের হুকুম পালন করে। নেতারা কী বোঝেন না- লন্ডন থেকে তাদের বিপদে ফেলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে বলব, এ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
মানুষ খুন আর অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত দিনের পর দিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। অগ্নিসন্ত্রাস করছে। পুড়িয়ে মানুষ মারছে। এ ধরনের অপরাধ যারা করে তাদের ক্ষমা করা যায় না। তাদের শাস্তি পেতেই হবে। হুকুমদাতা, অর্থদাতা আর সরাসরি জড়িত কেউ রেহাই পাবে না।
জাতীয় নির্বাচন পূর্ববর্তী বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির তরফ থেকে দেশে-বিদেশে বারবার লেখা হচ্ছে তাদের এত সংখ্যক লোক গ্রেফতার। তারা দেশে-বিদেশে নালিশ করছে। জেলে বন্দি থাকা তাদের নেতারা নাকি রাজবন্দি। যারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারে তারা কী করে রাজবন্দি হয়? তারা তো সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী ও অপরাধী। রাজনৈতিক কারণে তো কেউ গ্রেফতার নেই। যারা গ্রেফতার আছে তারা হয় হুকুমদাতা না হয় সরাসরি অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িত। অথবা এসব কর্মকাণ্ডের অর্থপ্রদানকারী। এ হুকুমদাতা, অর্থদাতা আর সরাসরি জড়িত কেউই রেহাই পাবে না। বিচারের মুখোমুখি তাদের হতেই হবে।
দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, নিজ নিজ এলাকায় যারা এ ধরনের অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা চলছে, সেই মামলাগুলো যেন যথাযথভাবে চলে। সাক্ষী-সাবুদ যেন হয়। তারা যেন শাস্তি পায়। তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এদের চরিত্র মানুষ খুন আর দুর্নীতি করা। লন্ডন থেকে হুকুম আসে আর এখানে আগুন দেওয়া হয়, মানুষ খুন করা হয়। তিনি বলেন, এক মিলিটারি ডিক্টেটর ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল দেখিয়ে গেছে। আরেক ডিক্টেটর এসে তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বাংলাদেশের মতো করে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বিদেশিরা কে কি বলল তাতে কিছু যায় আসে না।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার মতো বাংলাদেশেও বিএনপি হাসপাতাল, পুলিশ ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গাজায় যে ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, একই কায়দায় বিএনপিও পুলিশকে আক্রমণ করছে, হাসপাতালে আক্রমণ করছে। গাজায়ও হাসপাতালে বোম্বিং হচ্ছে, নারী-শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। বিএনপিরও ওই একই চরিত্র। বিএনপি বাংলাদেশের জন্য আজরাইল হয়ে এসেছে। তারা নির্বাচন করবে না, কারণ তারা জানে ভোট পাবে না, সমর্থন পাবে না। জনগণের ওপর তাদের আস্থা নেই।
এবারের সংসদে স্বতন্ত্রদেরই দাপট বেশি- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত সফলভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন সম্পন্ন হয়েছে।