
প্রিন্ট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৯ এএম
বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করা উচিত হয়নি: ক্রুগম্যান

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪২ পিএম
-67f55ff86263e.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের পোশাকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক আরোপ করা উচিত হয়নি বলে মনে করেন নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান। এ ধরনের সিদ্ধান্তে মার্কিন ক্রেতাদের জীবন বিঘ্নিত হবে। এতে মার্কিন নাগরিকদের জীবন আরও নিরাপদ হবে-সেই সম্ভাবনা নেই, বরং মার্কিনিদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। নিউইয়র্ক টাইমসকে (এনওয়াইটি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।
‘বিগেস্ট ট্রেড শক ইন হিস্টোরি’ শিরোনামে ৫১ মিনিটের ভিডিও সাক্ষাৎকারে পল ক্রুগম্যান বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই বন্ধুস্থানীয় ও প্রতিবেশী দেশেও উৎপাদন করা প্রয়োজন, এতে সরবরাহব্যবস্থার ওপর ভরসা করা যায়। এ উভয় বিবেচনায় বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কানাডা ও মেক্সিকোর মতো দেশের পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা ঠিক হয়নি।
মার্কিন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ রবার্ট লাইথিজারের কথা উল্লেখ করে পল ক্রুগম্যান বলেন, তার এ বন্ধু ওয়াশিংটনে বাণিজ্য সংরক্ষণবাদী হিসাবেই পরিচিত। বাণিজ্যের জগতে তিনি ‘একরকম শয়তান’ হিসাবে পরিচিত, যদিও নিজের কাজটা তিনি খুব ভালো বোঝেন, এ কারণে সব মহলেই তিনি শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি স্বাধীনচেতা মানুষ; এ কারণে ট্রাম্প প্রশাসনে তার ঠাঁই হয়নি। হলে তিনি হয়তো বলতেন, বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে পল ক্রুগম্যান বলেন, উচ্চ শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা প্রকৃতই কঠিন। এর মধ্যে এমন অনেক কিছুই আছে যার কারণে শুল্কের প্রভাব কমে যায়-এই বাস্তবতায় উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করেও বাণিজ্য ঘাটতি তেমন একটা কমানো সম্ভব নয়। একটা সম্ভাবনা আছে, এরকম কোনো দেশ অতি উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বন্ধ করে দিলে তা সম্ভব হতে পারে, অর্থাৎ আপনার বাণিজ্য না থাকলে তো আর বাণিজ্য ঘাটতি থাকবে না।
তিনি বলেন, যদি ভেবে দেখতে চান, বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে পারলে আমরা ঠিক কী পরিমাণ অতিরিক্ত উৎপাদন করব। তখন এমন হতে পারে যে উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থানের হার মোট কর্মসংস্থানের ১০ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫ শতাংশে উঠবে। একসময় আমাদের কর্মসংস্থানের যে ৩০ শতাংশই হতো উৎপাদন খাতে, তা আর হবে না। মোদ্দা কথা, উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো অটোমেশন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য ঘাটতি নয়।
বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে ক্রুগম্যান আরও বলেন, সব দেশই কিছু না কিছু পণ্য উৎপাদন করে। যে পণ্য এক দেশ তৈরি করে না, সেটা তারা আরেক দেশ থেকে আমদানি করে। এখন কথা হচ্ছে, প্রতিটি দেশের সঙ্গেই যে বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, এর কোনো কথা নেই। সবকিছুই হতে পারে। কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি থাকার অর্থ এ নয়, যে দেশের হাতে উদ্বৃত্ত আছে, সেই দেশ অন্যায্য বাণিজ্যনীতি অনুসরণ করছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের মানুষ এসব বিশ্বাস করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি পারস্পরিকতার ভিত্তিতে প্রণীত। গত ৯০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র যত বাণিজ্য চুক্তি করেছে, সেগুলো হয়েছে মূলত ১৯৩৪ সালের রিসিপ্রকাল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট অ্যাক্টের ভিত্তিতে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের সময়ে এ আইন প্রণীত হয়েছে। এ আইনে বলা হয়েছে, কোনো দেশ মার্কিন পণ্যে শুল্ক হ্রাস করলে যুক্তরাষ্ট্রও করবে।
সেই সঙ্গে শুল্ক নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলে পল ক্রুগম্যান বলেন, বাণিজ্য ঘাটতিকে সংশ্লিষ্ট দেশের আমদানি দিয়ে ভাগ করে শুল্ক হার নির্ধারণ করা এবং তার অর্ধেক হারে সেই দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করা-এই পদ্ধতি অবাস্তব।