
প্রিন্ট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৩ পিএম
অপ্রতুল জনবলে ব্যাহত সেবা কার্যক্রম

রফিকুল ইসলাম
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১০:২৭ এএম

আরও পড়ুন
‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’-এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন ২২ থেকে ২৫ হাজার মানুষ কল দিয়ে গ্রহণ করছেন সেবা। নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ রোধ, জুয়া, সাইবার অপরাধ, ইভটিজিং, ছিনতাই, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনায় ফোন দিয়ে সেবা নিচ্ছেন তারা।
তবে এসব সেবা প্রদানে থানা-ফাঁড়ি পর্যায়ে প্রয়োজনের তুলনায় জনবল অপ্রতুল। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সেবার কার্যক্রম। এমন অবস্থায় অফিসার ফোর্স, টহল গাড়ি ও মোটরসাইকেল বরাদ্দ বাড়ালে সেবা আরও দ্রুততার সাথে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মহিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের অধিকাংশ জরুরি সেবা পুলিশের থানা, ফাঁড়ি বা তদন্ত কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। যেহেতু প্রতিটি থানা-ফাঁড়িতে প্রয়োজনের তুলনায় জনবল, টহল গাড়ি ও মোটরসাইকেল অপ্রতুল; সেহেতু ৯৯৯ ডেডিকেটেড অফিসার ফোর্স, টহল গাড়ি ও মোটরসাইকেল বরাদ্দ হলে আরও দ্রুততার সঙ্গে সেবা প্রদান সম্ভব হবে।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, অপরাধ দমন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালে চালু করা হয় ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ লাখ ৫৯ হাজার ৩৮৩ জন কলারকে দেওয়া হয়েছে জরুরি, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা। এর মধ্যে ৮৩ শতাংশ জরুরি পুলিশি, ৮ শতাংশ ফায়ার সার্ভিস ও ৯ শতাংশ মানুষকে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে।
তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে ২২ থেকে ২৫ হাজার কল রিসিভ করে ‘৯৯৯’। এর মধ্যে জরুরি ৪৪ শতাংশ কল সেবা গ্রহণযোগ্য। আর ৫৬ শতাংশ কল সেবাযোগ্য নয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬ কোটি ৮ লাখ ৪২ হাজার ৫৯ কল গৃহীত হয়েছে। যার মধ্যে ‘অজরুরি’ সেবা চেয়েছেন ২ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬১ জন কলার। এগুলো অধিকাংশই ব্ল্যাংক কল, মিসড কল, ফেক কল ইত্যাদি।
প্রতিষ্ঠার পর গত বছরের আগস্টে প্রথম ধাক্কা খায় ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন ও পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা পুড়িয়ে দেওয়ায় জরুরি সেবা দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। মূলত ‘৯৯৯’ পুরোপুরি পুলিশনির্ভর হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর জরুরি সেবা পেতে অনেক মানুষ ফোন করেছেন। কিন্তু আমরা সেবা দিতে পারিনি। মূলত থানা-ফাঁড়িতে পুলিশ সদস্যরা সক্রিয় না থাকায় এসব সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে সময়ের সাথে পরিস্থিতি পালটে গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ায় পুরোদমে সেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেক মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছে সেবার আওতায়। পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ব্যাপক সক্রিয় হয়েছে ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’। ঘরমুখো মানুষের সড়ক, নৌ ও রেলপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি।
১৭ মার্চ মাছ ধরতে ফিশিং ট্রলার নিয়ে সাগরে রওনা দেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ১২ জন জেলে। ১৮ মার্চ রাতে গভীর সাগরের মধ্যেই ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ৫ দিন ধরে সাগরে ভাসতে থাকেন তারা। ২৩ মার্চ রাতে ৯৯৯ এ ফোন করে উদ্ধারের অনুরোধ করেন তারা। এরপর ৯৯৯ এর পক্ষ থেকে কক্সবাজার কোস্টগার্ড নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, মহেশখালী থানা ও মহেশখালী নৌ-পুলিশকে বিষয়টি দ্রুত জানানো হয়। পরবর্তীতে জেলেদের অবস্থান শনাক্ত করে কক্সবাজার কোস্টগার্ডের উদ্ধারকারী দল। উপকূল থেকে প্রায় ৩৫ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে বঙ্গোপসাগরের ‘সোনাদিয়ার পেট’ থেকে ২৪ মার্চ সকালে ১২ জন জেলেসহ ট্রলারটিকে উদ্ধার করে নিরাপদে উপকূলে পৌঁছে দেওয়া হয়।
২ ফেব্রয়ারি সন্ধ্যায় গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে একজন কলার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। জানান, তিনি এবং তার ৬ বছর বয়সের ছেলে সন্তান শেরপুরগামী একটি বাসের যাত্রী ছিলেন।
গাজীপুর চৌরাস্তায় বাসটি যাত্রী নেওয়ার জন্য দাঁড়ালে তিনি কিছু কেনাকাটার জন্য বাস থেকে নামেন। কেনাকাটা শেষে দেখেন বাসটি তার ছেলেকে নিয়ে ছেড়ে চলে গেছে। দ্রুতই ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানান ৯৯৯। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ সদর ট্রাফিক বিভাগ পাটগুদাম বাসস্ট্যান্ড থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়।