
প্রিন্ট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০৮ পিএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩৪ পিএম

দেশের খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক ও গবেষকদের উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা এবং ‘গ্রাফিতিতে জুলাই বিপ্লব’সমৃদ্ধ যুগান্তরের ঈদসংখ্যা ২০২৫-এর পাঠ উন্মোচন হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বারিধারার প্রগতি সরণিতে যুগান্তর কার্যালয়ে আয়োজিত জমজমাট ইফতারসন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা এবারের ঈদসংখ্যার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বরেণ্য শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, সময় একদিন আসবে, এখন আমরা যেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছি, ঝগড়া করছি, আমাদের বাংলাদেশে এই ঝগড়াটা অত্যন্ত বেশি এবং প্রকট-সেই ঝগড়া থেকে আমরা দূরে সরে আসব। সেটা হচ্ছে-কেউ ধর্ম নিরপেক্ষকতা বা ইহলৌকিকতার পক্ষে আবার কেউ এর বিরুদ্ধে। আমার মনে হয়, সমাজের সভ্যতার যে প্রবণতা, সেই প্রবণতায় এই বিরোধ মুছে যাবে। এই ঈদ উৎসব এবং ঈদ উৎসবের সঙ্গে ঈদসংখ্যা প্রকাশ করাসহ আরও নানারকম উৎসবের আয়োজন করা, নতুন পোশাক পরা, সুগন্ধি ধারণ করা-সবকিছুই হয়ে উঠবে মানুষের উৎসব এবং ইহজাগতিক উৎসব। ইহজাগতিক ও পারলৌকিকতার মধ্যে যে দেওয়াল, সেই দেওয়াল আর থাকবে না-আমি এটাই কামনা করি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী; বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক, রাজনীতিক ও যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, ঔপন্যাসিক মঈনুল আহসান সাবের, কবি ও প্রাবন্ধিক ড. মাহবুব হাসান, কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ, কবি-প্রাবন্ধিক ও নজরুল গবেষক মজিদ মাহমুদ, শিক্ষক ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারুল হক, কবি লুব্ধক মাহবুব, কবি তাসলিমা মাহমুব, গবেষক হোসাইন মোহাম্মদ জাকি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন, সাবেক সভাপতি এলাহী নওয়াজ খান, প্রচিত গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান সাবিনা ইয়াসমিন ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রওশন আরা জামান, কবি জাকির আবু জাফর, হোসাইন আলমগীর, কবি ফরিদুল ইসলাম নির্জন, আহমেদ বাশার, যুগান্তরের উপসম্পাদক আহমেদ দীপু, এহসানুল হক বাবু, বিএম জাহাঙ্গীর, আসিফ রশীদ, প্রধান বার্তা-সম্পাদক আবদুর রহমান, নগর সম্পাদক মিজান মালিক, প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম, যুগ্ম বার্তা-সম্পাদক জোহায়ের ইবনে কলিম, কেএম আজিজুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুন্নু রাইন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমেই ধন্যবাদ জানাব যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার এবং যারা যুগান্তরের জন্য কাজ করছেন তাদের। ঈদসংখ্যা উপলক্ষ্যে এ আয়োজনের জন্য আমি আবারও তাকে (সম্পাদক) ধন্যবাদ জানাব। আমার স্মৃতিতে ঈদসংখ্যা হলো অত্যন্ত আনন্দের। আমার মা বেগম পত্রিকা রাখতেন এবং এই বেগম পত্রিকার একটা ঈদসংখ্যা বের হতো। সেই ঈদসংখ্যাটা আসলে পরে আমার মায়ের মুখের যে একটা ঔজ্জ্বল্য এবং হাসি দেখতাম, সেটা আমাকে খুব আনন্দ দিত। আমরা নিজেরাও সেটা পড়তাম। যুগান্তরের কাছে আমার আবেদন থাকবে, জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ আশা-আকাক্সক্ষার কথা, তাদের স্বপ্নের কথা যেন তুলে ধরে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ যেন প্রদর্শন করতে পারে-এটাই আমার বিশেষ আবেদন রইল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কবি-সাহিত্যিকদের উদ্দেশে যুগান্তরের সম্পাদক সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার বলেন, আপনাদের সবার উপস্থিতিতে হৃদয়ের একূল-ওকূল দুকূলই ভেসে যায়। আপনাদের সবার প্রতি অজস্র প্রীতি আমাদের ডাকে সারা দেওয়ায়। সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর সারা পৃথিবীর মুসলমানদের জন্য বাংলাদেশের মানুষের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে ঈদুল ফিতর। আমরা সিয়াম সাধনার শেষে ঈদুল ফিতরের উৎসবে শামিল হবো।
তিনি বলেন, আমরা যখন ঈদ উৎসব পালন করছি সেই সময় মানবতার ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বরতম গণহত্যা চলছে প্যালেস্টাইনে। নির্বিরাম গুলিবর্ষণে প্রায় ৫০ হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এই বর্বরতার বিরুদ্ধে পৃথিবীব্যাপী যে নিঃশব্দতা, জাতিসংঘ ও ওআইসিসহ বিভিন্ন স্তরের যে নীরবতা, যে অসহনীয় স্তব্ধতা তা আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে, ব্যথিত করেছে। আজকে আমরা যখন ঈদ উদযাপন করতে যাব তখন আমরা যেন আমাদের সেই রক্তাক্ত আহত নিহত ভাইবোনদের প্রতিও সমবেদনা, সহমর্মিতা প্রকাশ করি। একই সঙ্গে গত ১৫-১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ প্রাণখুলে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। ফ্যাসিবাদের হিংস্র থাবার নিচে বাংলাদেশ ছিল ক্ষত-বিক্ষত পরাধীন। ভারতের থাবার নিচে বাংলাদেশকে স্থাপন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ফ্যাসিস্ট শক্তি বাংলাদেশকে দখল করে রেখেছিল। সেই দখলদারমুক্ত করেছে জুলাই অভ্যুত্থানের আমাদের ছেলেমেয়েরা, আমাদের সন্তানরা তাদের প্রাণের বিনিময়ে। আজকের ঈদ উদযাপনের এই প্রাক্কালে আমরা জুলাই শহিদদের বা গত ১৫ বছরে যারা ফ্যাসিস্ট শাসন আমলে প্রাণ দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন, হারিয়ে গেছেন সেসব মানুষের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
তিনি আরও বলেন, ঈদসংখ্যা সেই নবনূর (মাসিক সাহিত্য পত্রিকা) থেকে শুরু করে আমরা সব সময় করে আসছি; সেই ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে আমাদের কালচারের পার্ট এটা, ঈদ কালচার। সেই ঈদের আনন্দকে বহুমুখী করে আরও বেগবান, প্রাণবন্ত ও প্রাচুর্যময় করে তুলেছিল আমাদের ঈদসংখ্যাগুলো। সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে বেগম, সওগাত, মোহাম্মদী এবং সর্বশেষ বিচিত্রা ডাউশ আকারে ঈদসংখ্যা প্রকাশ করত। দৈনিক পত্রিকাগুলোও ঈদসংখ্যা করত কিন্তু সেটা হতো ফ্ল্যাট স্টাইলে। কিন্তু ম্যাগাজিন আকারে ঈদসংখ্যার যে ধারা এটা বাংলাদেশে প্রবর্তন করেছে যুগান্তর। তবে এখন এ কথা বলা যায় ঈদসংখ্যাগুলো এখন জাতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ঔপন্যাসিক মঈনুল আহসান সাবের একটা ভালো ঈদসংখ্যা বের করার জন্য যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদারসহ অন্যদেরও ধন্যবাদ জানান।
কবি ও প্রাবন্ধিক ড. মাহবুব হাসান বলেন, আজ ভালো লাগছে এ রকম একটা আয়োজন করে যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার আমাদের সম্মানিত করলেন এবং পাঠককে সম্মানিত করলেন। লেখকদের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থার দ্বার উন্মোচন করলেন।
শিক্ষক ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারুল হক বলেন, আজকে আমার খুব ভালো লাগছে এজন্য যে, এখানে যারা আছেন প্রত্যেকেই লেখালেখি করেন। তারা এই সমাজের সবচেয়ে পছন্দের এবং আকর্ষণীয় মানুষ। আমি মনে করি যুগান্তর আজকে যে আয়োজন করেছে, এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতেও আমরা পরস্পরের মুখোমুখি হবো।
বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, যুগান্তর আমার সবচেয়ে প্রিয় পত্রিকা। অন্যান্য পত্রিকার মাধ্যে যুগান্তরকে আমার ভিন্নরকমের পত্রিকা মনে হয়, সাহসী পত্রিকা, বস্তুনিষ্ঠ পত্রিকা। যুগান্তর আরও উন্নতি করুক এই প্রত্যাশা।
কবি লুব্ধক মাহবুব বলেন, যুগান্তরই প্রথম ঈদসংখ্যা শুরু করেছে, আশা করি ভবিষ্যতেও থাকবে। মরহুম নুরুল ইসলাম সাহেবের (যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা) অনেক স্বপ্নের এই যুগান্তর। যেটা আমার মতো অনেকেই জানেন। তার আত্মার প্রতি মাগফিরাত কামনা করছি।
কবি, প্রাবন্ধিক ও নজরুল গবেষক মজিদ মাহমুদ বলেন, বাঙালির যে আত্মপরিচয়, বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানের যে আত্মপরিচয় ঈদসংখ্যাকে কেন্দ্র করে হয়েছিল। আমরা জানি ১৯০৩ সালে প্রথম নবনূর পত্রিকা ঈদসংখ্যা বের করেছিল। নবনূর পত্রিকা থেকেই মুসলমান কবিরা সংগঠিত হতে থাকত। ঈদের সংস্কৃতি খুবই জরুরি।