Logo
Logo
×

জাতীয়

পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলন

ড্যাপ সংশোধনের প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে

# ‘বৈষম্যমূলক ড্যাপ’ বাতিলের দাবি রিহ্যাবের

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:২২ পিএম

ড্যাপ সংশোধনের প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে

ছবি: সংগৃহীত

আবাসন ব্যবসায়ীদের অনৈতিক চাপে পড়ে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধনের প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন পেশাজীবী ও সচেতন নাগরিক সমাজ। তারা বলেন, নইলে তার সব দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিতে হবে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা সরকারের কাছে এই দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতাধিক মানুষ অংশ নেন।    

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। বক্তব্যে বলা হয়, ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার যে কোনো সংশোধনের আগে নাগরিক, পেশাজীবী, কমিউনিটি ও সামাজিক সংগঠনসমূহকে যথাযথ সম্পৃক্ত করতে হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে সার্বিক জনকল্যাণ ও শহরের বাসযোগ্যতাকে মাথায় রেখে সংশোধন বা সংযুক্ত করতে হবে।  

আরও বলা হয়, বিগত সময়ে গোষ্ঠী স্বার্থে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পরিকল্পনায় যে সব পরিবর্তন করা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সঠিক তদন্ত করে শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিতে হবে। ড্যাপে এলাকাভিত্তিক নাগরিক সুবিধাদি যথা- স্কুল, হাসপাতাল, পার্ক, খেলার মাঠের যেসব প্রস্তাবনা দেওয়া আছে, সেগুলোর বাস্তবায়নে রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ সরকারী সংস্থাসমূহকে অতি দ্রুত এলাকাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।  

এফ.এ.আর সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় আবাসিক ভবনের জন্য মোটা দাগে রাস্তার প্রশস্ততা ও প্লটের আয়তনের উপর ভিত্তি করে সর্বনিম্ন ‘এফ.এ.আর’ মান ৩.১৫ ও সর্বোচ্চ ৬.৫ দেওয়া হয়েছিল। রাজউকের সংশোধিত ড্যাপে আবাসিক এ-৩ (ফ্ল্যাট বা এপার্টমেন্ট) শ্রেণির জন্য এই মান সর্বোচ্চ ৪.২৫ নির্ধারণ করা হয়, যা মে-২০২৪ সালে খসড়া ইমারত বিধিমালায় অনুসরণ করা হয়। অথচ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে রাজউক প্রণীত ইমারত বিধিমালার খসড়াতে প্লট-ভিত্তিক আবাসিক এ-৩ ক্যাটাগরির এফ.এ.আ’র মান ৫.৫ করা হয়েছে, যা প্রায় অবাসযোগ্য ঢাকা শহরের ওপর চাপ মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দেবে। 

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং বায়ুমণ্ডল অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, জলাবদ্ধতা, যানজট ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকা অমানবিক শহরে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক চিন্তা-ভাবনার জন্য ঢাকা বর্তমানে এমন একটি অবস্থায় এসেছে দাঁড়িয়ে যে, সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের ১৪৭টি বসবাসযোগ্য নগরীর ভিতরে ঢাকার অবস্থান ১৪৩। যা মূলত ঢাকার অবসবাস যোগ্যতাকেই চিহ্নিত করে। 

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ঢাকার ইমারত বিধিমালা যেন প্রণয়ন হচ্ছে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা করতে। শহরের ডাক্তার হচ্ছেন পরিকল্পনাবিদ। অথচ রাজউক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ড্যাপ সংশোধনের ব্যাপারে পরিকল্পনাবিদদের মতামতকে অগ্রাহ্য করছে। ফলে সামনে ঢাকার নাগরিকদের জন্য আরও বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। 

সেন্টার ফর হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবু সাদেক বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়ার জন্য এত বছর পরেও পূর্বাচল এলাকায় গ্যাস, পানি, অন্যান্য পরিসেবা ও নাগরিক সুবিধাদি গড়ে উঠেনি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম পেশাজীবী সংগঠন ও সাধারণ নাগরিকদের মতামতকে উপেক্ষা করে নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। 

বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. শায়ের গফুর বলেন, নগর নাগরিকদের হাত থেকে বেহাত হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পণ্য হয়ে গেছে শহর। ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিকভাবে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে বিল্ডিংয়ের উচ্চতা, এফ.এ.আর বাড়িয়ে নিচ্ছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। পরিকল্পনা ছাড়াই প্রধান সড়কের পাশে নতুন শপিংমল তৈরি করার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রকট যানজট। যথার্থ পরিকল্পনা ও বিকেন্দ্রীকরণ কৌশল নিতে পারলে ঢাকার জনসংখ্যা কমানোও সম্ভব। 

বিআইপির সাবেক সভাপতি ফজলে রেজা সুমন বলেন, সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ড্যাপ ও ইমারত বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিআইপির সহ-সভাপতি-১ পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন, বিআইপির বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ মো. মোসলেহ উদ্দীন হাসান, পরিকল্পনাবিদ উসওয়াতুন মাহেরা খুশি, পরিকল্পনাবিদ মো. ফাহিম আবেদীন, পরিকল্পনাবিদ নাহিদ আরিফীন প্রমুখ।  

ড্যাপ বাতিলের দাবিতে রিহ্যাবের মানববন্ধন : ‘বৈষম্যমূলক ড্যাপ’ বাতিল ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০২৫ বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মঙ্গলবার সকালে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানির প্রতিনিধি এবং জমির মালিকরা মানববন্ধনে অংশ নেন।

রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট দ্রুত সময়ের মধ্যে ইমারত বিধিমালা ২০২৫ বাস্তবায়নের দাবি জানান। তিনি বলেন, পতিত সরকারের কতিপয় দোসরের প্রেসক্রিপশনে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে তড়িঘড়ি করে দেশের স্বার্থবিরোধী বেআইনি ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ প্রকাশ করা হয়। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেড়ে নেওয়া হয় ঢাকা মহানগরে ভবন নির্মাণের অধিকার। সৃষ্টি করা হয় নগরবাসীর মধ্যে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য। ফলে কৃষি জমি ও বন্যা প্রবাহ এলাকা দ্রুত গতিতে হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বলেন, আবাসন খাত ধ্বংস হলে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে এবং বহু লোক বেকার হবে। তিনি বর্তমান ড্যাপ দ্রুত বাতিল করে জনবান্ধব নতুন ড্যাপ প্রণয়নের দাবি জানান। 

রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ বলেন, আমাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে না মানলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। রিহ্যাবের মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান লাবিব বিল্লাহ বলেন, এফ.এ.আর বা ভবনের উচ্চতা কমিয়ে দেওয়ার ফলে ভূমি মালিকরা ভবন নির্মাণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন-রিহ্যাব পরিচালক এ. এফ. এম. উবায়দুল্লাহ, ড. হারুন অর রশিদ, মো. আউয়ুব আলী, দেওয়ান নাসিরুল হক, লায়ন সুরুজ সরদার, মিরাজ মুক্তাদির, শেখ কামাল প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম