Logo
Logo
×

জাতীয়

রমজানে রক্ত সংকট

কখন মিলবে এক ব্যাগ রক্ত!

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম

কখন মিলবে এক ব্যাগ রক্ত!

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রেনু আক্তার। বয়স ১৯। অপেক্ষা করছিলেন এক ব্যাগ এবি পজেটিভ রক্তের জন্যে। প্রতিমাসে দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হয় তার। শরীরে রক্ত দেওয়ার সময় হলেই জামালপুর থেকে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। রক্তের জন্যে তাকিয়ে থাকেন স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের দিকে।   

মোহাম্মদ রাসেল। বয়স ১৮। থ্যালাসেমিয়া রোগী। প্রতিমাসে ২ থেকে ৩ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। থাকেন ঢাকার আগামাসি লেনে। তিনিও রক্তের অপেক্ষায় ছিলেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে হাতে পেলেন ও পজেটিভ এক ব্যাগ রক্ত।  

রাজধানীর শান্তিনগরে কোয়ান্টাম ল্যাবে ১০ রমজান মঙ্গলবার সকালের চিত্র এটি। রেনু আক্তার বা রাসেলের মতো নিয়মিত থ্যালাসেমিয়া রোগী ছাড়াও ক্যানসার, কিডনি, ডায়ালসিস কিংবা অপারেশনের রোগীদের রক্তের প্রয়োজনে অপেক্ষা যেন ফুরায় না। কখন মিলবে এক ব্যাগ রক্ত! 

রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা রক্তদাতা ও গ্রহীতাকে সেবা দিচ্ছে রাজধানীর কোয়ান্টাম ল্যাব। ল্যাবের অর্গানিয়ার শামীমা নাসরিন মুন্নী জানান, রমজানের কারণে রক্তের চাহিদা এখন স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক বেশি। রক্তের অভাবে প্রতিদিনই অনেককে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। এটি আমাদের জন্যেও খুবই কষ্টের। 

তিনি জানান, কোয়ান্টাম ল্যাবে এবছর রোজার শুরু থেকে নবম রমজান পর্যন্ত রক্তের নিবন্ধিত চাহিদা ছিল ২১৫৪ ইউনিট; প্রতিদিন গড়ে যার সংখ্যা প্রায় ২৫০ ব্যাগ। কোয়ান্টাম ল্যাব ৯ দিনে সরবরাহ করতে পেরেছে ১৯৬০ ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান। এখনো প্রায় প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ২৫-৩০ জনকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।

দেশে দিন দিন স্বেচ্ছা রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ছে। তবে রোজার সময় অনেকেই রক্ত দিতে চান না। অথচ রোজা রেখেও সঠিকভাবে রক্তদান করা যায়। এতে ধর্মীয় বা বৈজ্ঞানিকভাবে তেমন কোনো বাধা নেই।

রমজানে রক্ত সংকট বিষয়ে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. মুন্সী এম হাবিবুল্লাহ বলেন, ধর্মবাণীর আলোকে রক্তদান অত্যন্ত পূণ্যের কাজ। রমজানে সেহরির পর প্রথম বেলাতে কিংবা ইফতারের পর যখন পানিশূন্যতা কম থাকে তখন অনায়াসে রক্ত দান করা যায়। অনেকেই এসময়ে রক্ত দেন। এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। রক্তচাপ, পানিশূন্যতা যাচাই করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সামর্থ্যবান যে কেউ রোজা রেখেও এসময়ে রক্ত দিতে পারেন। রক্তদানের পর যথাযথ বিশ্রাম ও বেশি পরিমাণে পানি পান করা উচিত।

তিনি বলেন, ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে রক্ত পরিসঞ্চালন একটি সমন্বিত উদ্যোগ। অল্প কজন মিলে, উদ্যোগ নিয়ে পুরো কাজটি করে ফেললে সকলেই উপকৃত হন, কাউকে আর ব্যর্থতার জন্যে দায়ী হতে হয় না। পক্ষান্তরে, কমিউনিটির সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও রক্তের অভাবে কোনো জীবনহানি ঘটলে সকলকেই এর দায়ভার বহন করতে হবে। পবিত্র কুরআনের সুরা মায়িদার ৩২নং আয়াতে বলা হয়েছে, যিনি একজন মানুষের জীবন বাঁচালেন, তিনি যেন সমগ্র মানবজাতির জীবন বাঁচালেন। 

রমজানে কোয়ান্টাম, রেড ক্রিসেন্ট, সন্ধানী, বাঁধন-এর মতো গুটিকয়েক স্বেচ্ছা রক্তদান সংগঠকদের পক্ষে রক্তের চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হয় উল্লেখ করে এসময়ে সঙ্ঘবদ্ধভাবে রক্তদান কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সব ধর্মের সৎকর্মের বাণীর প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান জানান তিনি।

গাজীপুর থেকে কোয়ান্টাম ল্যাবে স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী সাকিদুল ইসলাম পলাশ। এখানেই তিনি ৩০ বার রক্ত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‌স্রষ্টার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই রোজা রেখে রক্তদান করতে এসেছি। প্রয়োজনীয় সময়ে এর আগেও আমি রোজা রেখে রক্তদান করেছি। এতে শরীরে কোনো সমস্যা হয়নি।

সাভার থেকে রক্তদান করতে এসেছিলেন বি পজেটিভ গ্রুপের ১৯ বছর বয়সি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। তিনি ছাত্র। নিজের ভালো লাগা থেকেই তিনি রোজা অবস্থায়ই রক্তদান করলেন। 

আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি স্ত্রী ডলি আক্তারের জন্যে এফএফপি সংগ্রহে এসেছিলেন স্বামী মো. মাসুদ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তিনি চার ব্যাগ এফএফপি নিয়ে ছুটে গেলেন হাসপাতালের দিকে। 

শ্যালক ফাহিম এসেছিলেন ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি দুলাভাই আরিফ ভূইয়ার অপারেশনের জন্যে এ পজেটিভ গ্রুপের রক্ত নিতে। অপেক্ষায় ছিলেন রক্তদাতা সাকিদুল বা আব্দুল্লাহর মতো নিবেদিতপ্রাণ মানবিক রক্তদাতাদের জন্যে।

এক ব্যাগ ফ্রেশ রক্তের আশায় এভাবেই দিন-রাত ল্যাবে ভিড় করছেন অসংখ্য ভুক্তভোগী। অথচ রমজানে রক্তদান ধর্মীয় বা মানবিক কোনো দিক থেকে বাধা নেই। বরং ধর্মে এমন মানবিকতাকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। রমজানে রক্তদানের মতো মহৎ কাজের ফলাফল নিশ্চয়ই বহু গুণ হতে পারে। সুতরাং রোজা কখনও রক্তদানের মতো মানবিক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে মানবসমাজকে বিরত রাখতে পারে না। বরং এ সময়ের রক্তচাহিদা পূরণে সামর্থ্যবান স্বেচ্ছা রক্তদাতা সবারই এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারীরা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম