মতামত চেয়ে দুদকে চিঠি
দুর্নীতি মামলার প্রধান আসামিকে চুক্তিতে নিয়োগ দিতে চায় বেবিচক

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১০:৩১ পিএম

নয়শ কোটি টাকার চার দুর্নীতির মামলার অন্যতম প্রধান আসামি বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে মতামত চেয়ে দুদকে চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি প্রধান প্রকৌশলী পদে আরও ৩ কর্মকর্তার জন্যও দুদকের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। বাকী ৩ কর্মকর্তা হলেন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া হোসেন ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শুভাশীষ বড়ুয়া। সম্প্রতি বেবিচকের বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চিঠির পাশাপাশি বেবিচক বোর্ড সভার একটি কার্যবিবরণীও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বেবিচকের বোর্ড সভার কার্যবিবরণীতে ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দেওয়া হলেও হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য দেওয়া হয়নি। উল্টো হাবিবুর রহমানের পক্ষে দুদকের মামলাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বেবিচক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বোর্ড সভার সদস্যরা নয়শ কোটি টাকার দুর্নীতির মামলার আসামির পক্ষে এভাবে ন্যাক্কারজনকভাবে অবস্থান নেওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, সাবেক পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে নয়শ কোটি টাকার দুর্নীতির সঙ্গে হাবিবুর রহমান সরাসরি জড়িত। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর যোগসাজসে এই নয়শ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এই দুর্নীতির সঙ্গে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাও জড়িত থাকতে পারে। এতকিছু জানার পরও বোর্ডের সদস্যরা হাবিবুর রহমানের পক্ষে অবস্থান নেওয়া সত্যিই রহস্যজনক। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীকে বাঁচানোর জন্যই তারা মাঠে নেমেছেন। ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগকৃত বোর্ড সদস্যদের পক্ষে এভাবে ছাত্রজনতার রক্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সত্যিই দুঃখজনক।
বেবিচক বোর্ড সভায় প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে অবসরোত্তর এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে তার আগে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা বা অভিযোগের হালনাগাদ তথ্য চেয়ে দুদককে চিঠি দিয়েছে বেবিচক।
গত ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত বেবিচকের ৩০তম বোর্ড সভায় প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলী পদে কর্মরত হাবিবুর রহমান চলতি মাসের ২২ মার্চ এলপিআরএ যাবেন। ২৩ মার্চ থেকে পদটি শূন্য হবে। অতি গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি পূরণ করা প্রয়োজন।
সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগের বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। মো. হাবিবুর রহমান ২১ নভেম্বর প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বর্তমানে বেবিচকের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প (টার্মিনাল-৩) এর কাজ বেগবান হয়। সভায় প্রধান প্রকৌশলী পদের জন্য যোগ্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শহীদুল আফরোজ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া হোসেন ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শুভাশীষ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে দুদকের মামলার তথ্য তুলে ধরা হলেও হাবিবুর রহমানের মামলা প্রসঙ্গে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হযনি।
উল্টো হাবিবের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলা হয়, বেবিচকের ছয়টি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে করা দুদকের চারটি মামলায় অন্যান্যদের পাশাপাশি বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, মো. হাবিবুর রহমান সেই ৬ প্রকল্পে মাত্র ৩৬ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দায়িত্ব পালনকালে শুধু ব্যাংক এডভাইসের মাধ্যমে কাস্টমস ডিউটি পরিশোধ করা ছাড়া কোনো প্রকার ঠিকাদারি বিল পরিশোধ করেননি কিংবা কোনো প্রকার প্রশাসনিক অনুমোদন দেননি।
সভায় সভাপতি জানান, সামগ্রিক বিবেচনায় বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী পদে হাবিবুর রহমানকে তার অবসরোত্তর ছুটি বাতিলপূর্বক আগামী ২৩ মার্চে থেকে এক বছরের জন্য বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাব প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যেতে পারে।
বেবিচক সূত্র জানায়, প্রধান প্রকৌশলী পদের জন্য যোগ্য অন্যদের মামলা ও দুর্নীতির বিষয়ে বোর্ড সভায় আলোচনা হলেও হাবিবুরের পক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়। এজন্য সভায় তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়নি। উপরন্তু তার পক্ষে কথা বলা হয়েছে।
বেবিচক সূত্র আরও জানায়, দুদক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করেছে। তার বিরুদ্ধে প্রায় নয়শ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা বেবিচকের চারটি মেগা প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত। হাবিব কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প পিডি থাকাকালে ১৫০ কোটি টাকা অগ্রিম বিল দেওয়া। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে আয়নবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে ২১২ কোটি টাকা অগ্রিম বিল প্রদান করেন (দুদকের মামলার এজাহারে এ তথ্য রয়েছে)। তার বিরুদ্ধে রিট পিটিশন হওয়ায় হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। রয়েছে বিদেশে নিষেধাজ্ঞা।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, যার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া আইন পরিপন্থি।
এ ছাড়া, প্রধান প্রকৌশলী পদে বহাল থাকলে তিনি মামলার আলামত নষ্ট করতে পারেন এবং সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন, যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়াকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।